
পাভেল ইসলাম মিমুল, উত্তরবঙ্গ: বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে অতি শীঘ্রই সামনাসামনি দেখা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, “ইনশাআল্লাহ অতি শীঘ্রই আপনাদের সঙ্গে সামনাসামনি দেখা হবে। ইনশাআল্লাহ আপনারা সবাই ভালো থাকবেন।
রবিবার রাজশাহী মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই কথা জানান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি,আগামী নির্বাচনে দেশের অধিকাংশ জনগণের সমর্থন ‘ধানের শীষ’ তথা বিএনপি পাবে। তবে এরপরে দেশ গড়তে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।”
তারেক রহমান বলেন, “আমাদের সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। আগামী নির্বাচনে আমরা সরকার গঠনে সক্ষম হলে আমাদেরকে দেশকে গড়তে হবে। স্বৈরাচার শিক্ষা, বিচার, আইনশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে তাদের নিজেদের স্বার্থে। আগামী নির্বাচনে আমরা জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করলে আমাদের এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে।”
দেশ গড়তে বিএনপিই প্রথম সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেছে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “আড়াই বছর আগে স্বৈরাচার সরকারের আমলেই আমরা বাংলাদেশের মানুষের সামনে ৩১ দফা উপস্থাপন করেছিলাম। সেই ৩১ দফার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি দিয়েছিলাম। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এখন সংস্কারের জন্য যেসব আলোচনায় আসছে, অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাব বিএনপি আড়াই বছর আগেই জাতির সামনে ঘোষণা করেছিল। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি এই দেশকে যদি এগিয়ে নিতে হয় তাহলে কতগুলো ব্যাপারে রাষ্ট্রের সংস্কার করতে হবে। সেই জন্য অন্য কেউ চিন্তা করার আগে আমরা বিএনপি আড়াই বছর আগে সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলাম।”
তিনি বলেন, “বিগত স্বৈরাচারের সময় এমনভাবে স্বাস্থ্যব্যবস্থা সাজিয়েছিল, যাতে পার্শ্ববর্তী একটি দেশে গিয়ে মানুষ সেবা নিতে বাধ্য হয়। এই দেশে হাসপাতাল ধ্বংস করে ইচ্ছে করে রোগীদের পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠিয়ে দিত। তারা চিকিৎসার নামে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে দিত। আমাদের এখন নিজস্ব চিকিৎসক ও নার্স গড়ে তুলতে হবে, যাতে দেশের মানুষ এই দেশের হাসপাতালেই উন্নত চিকিৎসাসেবা পায়।”
তারেক রহমান বলেন, “স্বৈরাচার সরকার জনগণের আন্দোলনের মুখে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তারা এক যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতা দখল করে ছিল। কীভাবে তারা গুম, খুন, হত্যা শুরু করেছিল আমরা দেখেছি। তারা বিরোধী মতের মানুষের বিরুদ্ধে কীভাবে মিথ্যা মামলা দিয়েছিল দেখেছি। এই সম্মেলনে যারা উপস্থিত তাদের অধিকাংশ মানুষ মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়েছেন। শুধু বিএনপি নয়, বিএনপির বাইরেও বহু রাজনৈতিক দল আমাদের সঙ্গে ছিল, ছোটবড় যেমন দল হোক না কেন, যারা মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সোচ্চার ছিল, প্রত্যেকের বিরুদ্ধে তারা মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। গুম-খুন করেছে। আমরা রাজনীতি করেছি, কিন্তু পরিবারের যে সদস্য রাজনীতি করেনি- তাকেও হয়রানি করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “শুধু রাজনৈতিক দল নয়, রাজনীতির বাইরেও বহু সাধারণ মানুষ যারা বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও আমরা দেখেছি কীভাবে অত্যাচারের স্ট্রিম রোলার চালানো হয়েছে। আমরা দেখেছি, সেই সময় কীভাবে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সেটি যে কোন নির্বাচনই হোক, প্রতিটি পর্যায়ে নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ভেঙে-চুরে দেওয়া হয়েছিল। বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনীতিকরণ করে ধ্বংস করা হয়েছে। অর্থনীতি ধ্বংস করা হয়েছে। মেগা উন্নয়নের নামে মেগা দুর্নীতি করা হয়েছিল। কীভাবে অর্থ সম্পদ লুট করে পাচার করা হয়েছে তা আমরা দেখেছি।”
তারেক রহমান বলেন, “আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষা করা। আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। এখন আমাদের জনগণের শাসন, রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এর মূল উপায় হলো, জনগণের সরাসরি ভোট প্রয়োগের ব্যবস্থা করা। সেই ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণ নির্ধারণ করবে, কে আগামী দিনে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করবে।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই পথে এগোচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সরকার সেই পথে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা কবরা হয়েছে- আগামী রমজানের আগে দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের অধিকারের প্রথম পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হবে। এখন ভোট হলেই হবে না, ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করলেই হবে না। জনগণ বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে জানতে চায়, দেশের ভবিষ্যৎ কী। বিএনপি আগামীতে কি করবে? কেন মানুষ জানতে চায়? কারণ, বাংলাদেশের জনগণ, বিএনপির ওপরে আস্থা রাখতে চায়।”
তারেক রহমান বলেন, “যুবক-বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশে এবং বিদেশে তাদের কর্মসংস্থান করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। সর্বস্তরে ভাল শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। এই শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। আজ ফারাক্কার কারণে পদ্মা নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। সুজলা-সুফলা এলাকা পদ্মা নদীর পানির অভাবে মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে যাব। জাতিসংঘে যাব প্রয়োজন হলে। আমাদের পানির ব্যবস্থা করতে হবে। খালগুলো সংস্কার করতে হবে যেন তারা পানি নিয়ে আবার ঝামেলা করলেও যেন এখানে পানি থাকে।”
তিনি আরও বলেন, “সামনে অনেক কাজ। অনেক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ আমাদের নিতে হবে। ছোট ছোট কলকারখানা গড়ে তুলতে হবে। উৎপাদিত দ্রব্য দেশে ব্যবহারের পাশাপাশি বিদেশে রফতানি করতে হবে। বিচার ব্যবস্থার কাছে বহু মানুষকে যেতে হয়। কিন্তু আমরা দেখছি বিচার ব্যবস্থার জটিলতা, দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বছরের পর বছর মানুষকে কোর্টের বারান্দায় ঘুরতে হয়। আমাদের এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে, যাতে মানুষ দ্রুত বিচার পায়। কৃষির চ্যালেঞ্জ আছে। সঠিক সময়ে সার পৌঁছাতে হবে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। মানুষ যাতে স্বল্পমূল্যে পণ্য পায় সেটা দেখতে হবে, একইসাথে কৃষকরা যেন সঠিক মূল্য পায়।”
রাজশাহী নগরীর মাদ্রাসা মাঠসংলগ্ন ঈদগাহ রোডে আয়োজিত এই সম্মেলনে বক্তব্যের শেষে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “ইনশাল্লাহ অতি শিগগিরই আপনাদের সঙ্গে সরাসরি দেখে হবে।