
যায়যায় কাল প্রতিবেদক: আজ ১৭ মার্চ (সোমবার), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৫তম জন্মবার্ষিকী। ১৯২০ সালের এই দিনে তিনি বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান, মা সায়েরা খাতুন। চার বোন এবং দুই ভাইরের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়। আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু তার গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ ও জনগণের প্রতি অসামান্য মমত্ববোধের কারণেই পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন এক অবিসংবাদিত নেতা।
বঙ্গবন্ধুর যখন জন্ম হয়, তখন ছিল ব্রিটিশ রাজত্বের শেষ অধ্যায়। গ্রামের স্কুলে তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি। ১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। কিশোর বয়সেই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় তিনি প্রথমবার কারাবন্দি হন। ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমান নাম মাওলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এই কলেজটি তখন বেশ নামকরা ছিল। মূলত এই কলেজে ভর্তির পর সক্রিয়ভাবে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন মুজিব। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের বছর ওই কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। কালের পরিক্রমায় কখনো ভাষার জন্য, কখনো স্বাধিকারের জন্য চলতে থাকে তার আন্দোলন। ’৬৬-র ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ’৭০ সালের নির্বাচনে নেতৃত্ব দিয়ে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠেন শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এই ঐতিহাসিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেদিন গোটা বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বীর বাঙালি ৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে নেয়। জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বিশ্ব নেতাদের চাপে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে তিনি স্বদেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরেই বাংলাদেশ পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন। তবে সেই সুযোগ বেশিদিন পাননি তিনি। অর্থনৈতিক মুক্তি তথা একটি শোষণমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে তিনি জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এর কিছুদিনের মধ্যেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকের বুলেটে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।