যায়যায়কাল প্রতিবেদক : ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. সোলাইমান সেলিমকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলি করে হত্যার এক মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তার রিমান্ড ও জামিন প্রশ্নে শুনানির জন্য ২৭ নভেম্বর দিন ঠিক করে দিয়েছেন ঢাকার মহানগর হাকিম আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদ।
হাজী সেলিমের জ্যেষ্ঠ পুত্র সোলাইমান সেলিমকে বুধবার গভীর রাতে ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করে চকবাজার থানার মো. রাকিব হাওলাদার হত্যা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. আবুল খায়ের।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন।
কিন্তু মামলার মূল নথি না থাকায় বিচারক রিমান্ড ও জামিন শুনানির দিন ঠিক করে দিয়ে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সোলাইমান সেলিমকে গারদখানা থেকে আদালতের এজলাসে তোলার সময় তিনি ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন।
শুনানিতে তার আইনজীবী শ্রী প্রাণনাথ তার ডিভিশন চেয়ে আবেদন করেন।
আইনজীবী বলেন, ‘তিনি একজন শিল্পপতি। সাবেক সংসদ সদস্য। তাকে ডিভিশন দেয়ার প্রার্থনা করছি।’
পরে আদালত কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
এরপর সোলাইমান সেলিমকে আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা বলেন, একটি ভিডিওতে দেখা গেছে তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। সোলাইমান সেলিম তখন বলেন, ‘না, আমি দেশেই ছিলাম।’
তখন তার আইনজীবী দাবি করেন, ওই ভিডিও ‘ফেব্রিকেটেড’।
সোলাইমান সেলিম এসময় বলেন, ‘শেখ হাসিনা আবারও আসবে।’
যে মামলায় সেলিমকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, গত ৫ অগাস্ট সকালে চাঁনখারপুল মোড়ে আন্দোলনরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা গুলি চালায় এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। সে সময় মো. রাকিব হাওলাদার গুলিবিদ্ধ হন।
তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নেওয়ার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ‘বাধা দেন’। পরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে নিয়ে গেলে বিকেল পৌনে ৩টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর চকবাজার মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন রাকিবের বাবা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসনে আওয়ামী লীগের টিকেটে ভোট করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সোলায়মান সেলিম।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর গত ১ সেপ্টেম্বর লালবাগ থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হন সোলায়মানের বাবা হাজী সেলিম।
হাজী সেলিম ঢাকা-৮ আসন থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৯৬ সালে। ২০০১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও বিএনপির নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর কাছে হেরে যান।
২০১৪ সাধারণ নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসনে আওয়ামী লীগের টিকেট না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন হাজী সেলিম। নৌকার প্রার্থী মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে হারিয়ে এমপি হওয়ার পর সংসদের ১৬ জন স্বতন্ত্র সদস্যকে নিয়ে জোট গঠন করেন।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হন হাজী সেলিম। চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আর দাঁড়াননি। আসনটি নিজের করে নেন তারই জ্যেষ্ঠ পুত্র সোলায়মান।