শুক্রবার, ১৭ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১লা আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

আন্দোলনে শিবিরের নির্দেশে কাজ করার তথ্য মিথ্যা: নাহিদ

যায়যায়কাল প্রতিবেদক: জুলাই অভ্যুত্থান এবং তার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গঠন প্রক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নির্দেশে কাজ করার তথ্যকে মিথ্যাচার আখ্যায়িত করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক পেইজে এক দীর্ঘ পোস্টে নাহিদ বলেন, ‘শিবির নেতা সাদিক কায়েম সম্প্রতি একটা টকশোতে বলেছেন, ছাত্রশক্তির গঠনপ্রক্রিয়ায় শিবির যুক্ত ছিল। শিবিরের ইনস্ট্রাকশনে আমরা কাজ করতাম। এটা মিথ্যাচার।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সামনের সারির নেতা নাহিদ ২০২৩ সালে অক্টোবরে আত্মপ্রকাশ করা গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব ছিলেন।

তিনি লিখেছেন, ‘গুরুবার আড্ডা’ পাঠচক্রের সঙ্গে জড়িত একটি অংশ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে পদত্যাগ করা একটা অংশ, সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা স্টাডি সার্কেল যুক্ত হয়ে ছাত্রশক্তি গঠিত হয়েছিল।

সে সময় শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও তারা ছাত্রশক্তির রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিল না বলে নাহিদের দাবি।

তিনি বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে আট বছর রাজনীতি করছি। ফলে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব সংগঠন ও নেতৃত্বকে আমরা চিনতাম এবং সকল পক্ষের সাথেই আমাদের যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিল। সেই কারণে ঢাবি শিবিরের সাথেও যোগাযোগ ছিল। যোগাযোগ, সম্পর্ক বা কখনো সহযোগিতা করা মানে এই না যে, তারা আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল।’

আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পায়নি ইসলামী ছাত্র শিবির। তবে জামায়াতে ইসলামীর এ ছাত্র সংগঠন যে গোপনে ঠিক সক্রিয় ছিল, তা প্রকাশ্যে আসে চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী সাদিক কায়েম ২১ সেপ্টেম্বর এক ফেসবুক পোস্টে জানান, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি।

সমন্বয়কের তালিকায় নাম না থাকলেও জুলাই মাসে চলা ছাত্র আন্দোলনে সামনের কাতারেই ছিলেন সাদিক কায়েম। তালিকায় নাম থাকা সমন্বয়কদের সঙ্গে বিভিন্ন ছবিতেও তাকে দেখা যায় সে সময়।

সম্প্রতি একটি টেলিভিশনের আলোচনা অনুষ্ঠানে সাদিক কায়েম বলেন, ২০১৭ সাল থেকে লম্বা সময় ধরে যখন তার যে পদ ছিল, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আর মাহফুজ আলমরা তা জানতেন।

সাদিক কায়েম বলেন, ‘পরিচয় জেনে কো-অর্ডিনেশন করে আমরা সবাই মিলে একসাথে কাজ করেছি। সুতরাং এখানে পরিচয় গোপন করার কিছু নেই। ওই সময়ে পরিচয় ঘোষণা দিয়ে কাজ করার মত পরিস্থিতি ছিল না যে কারণে শিক্ষার্থীদের সকল দাবির সাথে ছিলাম কিন্তু ঘোষণা দিয়ে কাজ করার মতো অবস্থা ছিল না। কারণ আমাদের মেরে ফেলা বৈধ ছিল।’

তিনি এও বলেন, ‘যখন ছাত্র অধিকার পরিষদ হল, এরপরে ছাত্র অধিকার পরিষদের বিলুপ্তি। যখন ক্যাম্পাসে কিছু নেই, ছাত্রশক্তি গঠন প্রক্রিয়া। এ গঠন প্রক্রিয়ার সাথে আমরা সরাসরি যুক্ত ছিলাম। এবং এটা নিয়ে দফায় দফায় আমাদের মিটিং হয়েছে।’

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সূচনাপূর্ব নিয়ে তার ভাষ্য, ‘৫ জুন নাহিদ আসিফ মাহফুজ ওরা আমাকে ফোন করেছে আন্দোলনের বিষয়ে কী করা যায়। আমরা যেভাবে ডিরেকশন দিয়েছি সেই কো-অর্ডিনেশনের মাধ্যমে কাজগুলো হয়েছে। তারা ব্যক্তি সাদিক কায়েমের কাছে আসেনি। তারা ঢাবি শাখা শিবিরের সভাপতির কাছে এসেছিল।’

তবে নাহিদ ইসলাম বলছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের শুরুতে শিবির নেতা সাদিক কায়েম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বের কোনো পর্যায়ে ছিলেন না।

তিনি আন্দোলনের ‘সমন্বয়ক ছিলেন না’ মন্তব্য করে এনসিপির আহ্বায়ক লিখেছেন, ‘৫ই অগাস্ট থেকে এই পরিচয় সে ব্যবহার করেছে। অভ্যুত্থানে শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে সাদিক কায়েমকে ওই প্রেস ব্রিফিংয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়।’

অভ্যুত্থানে শুধু শিবির নেতৃত্ব দেয়নি মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, ‘সাদিক কায়েমরা অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ঢালাও প্রচারণা করেছে, এই অভ্যুত্থানে ঢাবি শিবিরই নেতৃত্ব দিয়েছে। আমরা সামনে শুধু পোস্টার ছিলাম। অভ্যুত্থানে শিবিরের ভূমিকা কেউ অস্বীকার করে নাই। কিন্তু, এই অভ্যুত্থান শিবিরের একক নয়, শিবিরের ইনস্ট্রাকশন বা ডিরেকশনও হয় নাই। আমরা সব পক্ষের সাথে যোগাযোগ করেই সিদ্ধান্ত নিতাম।’

এ বিষয়ে ইসলামী ছাত্র শিবির বা সাদিক কায়েমের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জাতীয় সরকার গঠনে প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলেও ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন নাহিদ ইসলাম।

সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ছাত্রদের পক্ষ থেকে জাতীয় সরকার গঠনে কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়নি।’

সেই বক্তব্য সত্যি নয় দাবি করে নাহিদ লিখেছেন, ৫ই অগাস্ট রাতের প্রেস ব্রিফিংয়ে আমরা বলেছিলাম আমরা অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার করতে চাই। সেই প্রেস ব্রিফিংয়ের পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে আমাদের ভার্চুয়াল মিটিং হয়।

‘সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জাতীয় সরকার ও নতুন সংবিধানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তারেক রহমান এ প্রস্তাবে সম্মত হননি এবং নাগরিক সমাজের সদস্যদের দিয়ে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সাজেশন দেন।’

সে সময় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা হয় জানিয়ে নাহিদ লিখেছেন, “৭ই অগাস্ট ভোরবেলা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বাসায় আমরা উনার সাথে অন্তর্বর্তী সরকার ও উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে আলোচনা করি।”

উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নেবার আগে তারেক রহমানের সাথে আরেকটি বৈঠকে প্রস্তাবিত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে আলোচনা বা পর্যালোচনা করার কথাও নাহিদ লিখেছেন।

এ বিষয়ে বিএনপি বা মির্জা ফখরুলের তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ২ অগাস্ট রাতে প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের একটি ‘আর্মি ক্যু করে সামরিক বাহিনীর এক অংশের হাতে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিলেন’ বলেও ওই ফেইসবুক পোস্টে দাবি করেছেন নাহিদ ইসলাম।

তিনি লিখেছেন, ‘এ উদ্দেশ্যে কথিত সেইফ হাউজে থাকা ছাত্র সমন্বয়কদের চাপ প্রয়োগ করা হয়, থ্রেইট করা হয়, যাতে সে রাতে ফেসবুকে তারা সরকার পতনের একদফা ঘোষণা করে আর আমাদের সাথে যাতে আর কোনো যোগাযোগ না রাখে। রিফাতদের (রিফাত রশীদ) বিভিন্ন লেখায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে। আমাদের বক্তব্য ছিল, একদফার ঘোষণা মাঠ থেকে জনগণের মধ্য থেকে দিতে হবে।’

নাহিদ লিখেছেন, ‘আমাদের ভিতর প্রথম থেকে এটা স্পষ্ট ছিল যে, ক্ষমতা কোনোভাবে সেনাবাহিনী বা সেনাবাহিনী সমর্থিত কোনো গ্রুপের কাছে দেওয়া যাবে না। এতে আরেকটা এক-এগারো হবে এবং আওয়ামী লীগ ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হবে এবং আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটাকে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান হিসেবে সফল করতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সামনে আগাতে হবে। ৫ই অগাস্ট থেকে আমরা এ অবস্থান ব্যক্ত করে গিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘৫ই অগাস্টের পর সায়েরগং বারবার পাল্টা নেতৃত্ব দাঁড় করাতে চেষ্টা করেছে। সেক্ষেত্রে সাদিক কায়েমদেরও ব্যবহার করেছে। এবং তারা ব্যবহৃতও হয়েছে। সায়ের গংদের এ চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, ‘কল রেকর্ড ফাঁস, সার্ভেইলেন্স, চরিত্রহনন, অপপ্রচার, প্রপাগান্ডা হেন কোনো কাজ নাই হচ্ছে না। বাংলাদেশে সিটিং মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যত অপপ্রচার হচ্ছে এ দেশের ইতিহাসে এরকম কখনো হইছে কিনা জানা নাই। কিন্তু মিথ্যার উপর দিয়ে বেশিদিন টিকা যায় না। এরাও টিকবে না।’

নাহিদের এই পোস্ট নিয়ে ফেসবুকে দুই দফা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জুলকারনাইন সায়ের। প্রথম পোস্টে নাহিদের ফেইসবুক পোস্ট শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, ‘ছেলেটা কি সকাল সকাল গঞ্জিকা মেরে দিলো?’

১৪ মিনিট পর আরেক পোস্টে সাদেক কায়েমের পক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি লিখেছেন, ‘জুলাই আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে ছিলো, এবং ৫ই আগস্ট ২০২৪ পর এখনো পর্যন্ত যেই ছেলেটার নামে একটাও অসততার অভিযোগ আসেনি, তার নাম Md Abu Shadik। স্বাভাবিকভাবেই তাকে ও তার শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে অনেকে মুখরোচক চটকদার আলাপ তৈরি করবে। কিন্তু এসব আলাপ তৈরি করে কি নিজেদের গোপনতম সত্য লুকানো সম্ভব হবে?’

তৌকির আহমেদ নামের একজন সেই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘কিন্তু আপনার নামে দেওয়া অভিযোগ এর ব্যাপারে কি বলবেন। গুরুতর অভিযোগ!’

 

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *