সোমবার, ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

আফগানিস্তানে বাগরাম ঘাঁটির আবার নিয়ন্ত্রণ নিতে চান ট্রাম্প

যায়যায়কাল ডেস্ক: আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ আবার নিতে চান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনকে মোকাবিলার জন্য এমন পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি।

তবে সাবেক ও বর্তমান মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, বাগরাম পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার লক্ষ্য শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তানে নতুন করে মার্কিন অভিযানের মতো দেখাতে পারে। এ কাজের জন্য ১০ হাজারের বেশি সেনা এবং অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়বে।

বৃহস্পতিবার লন্ডন সফরে ছিলেন ট্রাম্প। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমরা বাগরাম ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে চাই।’

এই ঘাঁটিটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীনের কাছে কৌশলগত স্থানে অবস্থিত উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘চীন যেখানে নিজেদের পরমাণু অস্ত্র তৈরি করে, সেখান থেকে বাগরামের দূরত্ব মাত্র এক ঘণ্টার।’

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে অভিযান চালায় মার্কিন বাহিনী। তখন দেশটিতে মার্কিন সেনাদের প্রধান ঘাঁটি ছিল বাগরাম। ২০২১ সালে তালেবানের অগ্রযাত্রার মুখে বাগরামসহ আফগানিস্তানের অন্যান্য এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় এই সেনা প্রত্যাহার ঘিরে সৃষ্টি হওয়া বিশৃঙ্খলা বেশ আলোচিত হয়েছিল।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বাগরাম থেকে সব সেনা প্রত্যাহারের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর দোষারোপ করেছিলেন ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন, সেখানে অন্তত কিছু মার্কিন সেনা মোতায়েন রাখা উচিত ছিল। যদিও ২০২০ সালে নিজের প্রথম মেয়াদে তালেবানের সঙ্গে ট্রাম্প যে চুক্তি করেছিলেন, তাতে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সব সেনা প্রত্যাহারের কথা উল্লেখ ছিল।

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার নিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের একটি চলমান পর্যালোচনার মধ্যেই বাগরাম নিয়ে এই মন্তব্য করলেন ট্রাম্প। তাঁর প্রশাসনের অনেক নীতিনির্ধারকের মতে, চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এ থেকে মনোযোগ সরানোর জন্য ট্রাম্প হয়তো বাগরামের বিষয়টি সামনে এনেছেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, বাগরামে বিমানঘাঁটিটি প্রথম নির্মাণ করেছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। আশির দশকে আফগান যুদ্ধের সময় দেশটিতে সোভিয়েতদের প্রধান ঘাঁটি ছিল এটি। ২০০১ সালে তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর বাগরামের দখল নেয় যুক্তরাষ্ট্র। পুনর্নির্মাণ করে সেখানে তারা ৭৭ বর্গকিলোমিটারের একটি ঘাঁটি গড়ে তোলে।

বাগরামে দুটি রানওয়ে রয়েছে। এর একটিতে কার্গো ও বোমারু বিমান ওঠানামা করতে পারে। ঘাঁটিটিতে মার্কিন বাহিনীর একটি কারাগারও ছিল। সেটি পরিচিতি পেয়েছিল আফগানিস্তানের গুয়ান্তানামো হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাগরাম সফর করেছিলেন।

রাজি নয় তালেবান

ট্রাম্পের ভাষ্যমতে, আফগানিস্তানে বর্তমানে ক্ষমতাসীন তালেবানের সম্মতিতে ঘাঁটিটি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। তবে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তিটি কেমন হবে তা পরিষ্কার নয়। যদিও ট্রাম্পের এ পরিকল্পনার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জাকির জালালি।

তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সামরিক উপস্থিতি থাকতে পারবে না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা এক পোস্টে জাকির জালালি লেখেন, আফগানিস্তানের কোনো অংশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে দুই দেশকে যুক্ত থাকতে হবে। ‘পারস্পরিক সম্মান ও অভিন্ন স্বার্থের’ ভিত্তিতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে প্রস্তুত আছে কাবুল।

এদিকে বাগরাম নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্যের আগে আফগানিস্তানে আটকে থাকা মার্কিনদের নিয়ে কাবুলের সঙ্গে আলাপ করেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।

সপ্তাহান্তে তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে কাবুলে সাক্ষাৎ করেন ট্রাম্প প্রশাসনের জিম্মিবিষয়ক বিশেষ দূত অ্যাডাম বোয়েলার ও যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তানবিষয়ক সাবেক দূত জালমাই খলিলজাদ।

রয়েছে নানামুখী সমস্যা

বাগরাম ফিরে পেতে ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন একজন কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, সামরিকভাবে ঘাঁটিটি দখলের কোনো পরিকল্পনা নেই যুক্তরাষ্ট্রের। তবে ঘাঁটিটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টায় বড় ধরনের উদ্যোগের প্রয়োজন পড়বে। বাগরাম দখলে নিতে এবং ধরে রাখতে হাজার হাজার মার্কিন সেনার প্রয়োজন হবে। ঘাঁটিটি মেরামত করতেও বহু অর্থের দরকার।

মার্কিন ওই কর্মকর্তার মতে, আফগানিস্তান একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। সেখানে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা এই ঘাঁটিতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহও জটিল হবে। এ ছাড়া ঘাঁটিটি নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর আশপাশের এলাকা নিরাপদ করতে এবং মার্কিন বাহিনীর ওপর রকেট হামলা ঠেকাতে বিশাল কর্মযজ্ঞের প্রয়োজন পড়বে। তাই বাস্তবিক অর্থে কীভাবে এটি সম্ভব হবে, তা নিয়ে সন্দিহান তিনি।

তালেবান এখন রাজি না থাকলেও পরে আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে যদি বাগরাম ওয়াশিংটনের হাতে তুলে দিতে রাজি হয়, এরপরও ঘাঁটিটি ইসলামিক স্টেট ও আল–কায়েদার হুমকির মুখে থাকবে। হুমকি থাকবে ইরানের অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলারও। গত জুনে ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তারপর কাতারে মার্কিন একটি ঘাঁটি ইরানি হামলার শিকার হয়েছিল।

এমন পরিস্থিতিতে এই ঘাঁটিটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ওয়াশিংটনের খুব একটা সুবিধা হবে না বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাবেক কর্মকর্তা।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ঘাঁটিটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ফলে যেসব সামরিক সুবিধা পাওয়া যাবে, তা ঝুঁকির তুলনায় কম।

 

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ