
যায়যায়কাল ডেস্ক: আফগানিস্তানে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ১১০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে ত্রাণ সংস্থাগুলো জানিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো বন্ধুর পার্বত্য এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে থাকায় উদ্ধারকাজে বিঘ্ন ঘটছে।
আফগানিস্তানের উদ্ধারকারীরা মঙ্গলবার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের কাছে কুনার প্রদেশের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া পার্বত্য গ্রামগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
রয়টার্স আফগান রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এ ভূমিকম্পে অন্তত ১১২৪ জন নিহত ও ৩২৫১ জন আহত হয়েছেন এবং আট হাজারেরও বেশি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। আরও বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ ভূমিকম্পে ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে।
ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কুনার প্রদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রধান এহাসানুল্লাহ এহাসান জানান, ভূমিকম্প আঘাত হানার পর সোমবার কুনারের চারটি গ্রামে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়েছে, এখন আরও দূরবর্তী পার্বত্য এলাকাগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টার বিষয়টিতে মনোযোগ দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, “এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও কতো মানুষ আটকা পড়ে আছেন তা সঠিকভাবে অনুমান করতে পারছি না আমরা। আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব এসব অভিযান সম্পূর্ণ করে তারপর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া শুরু করা।“
স্থানীয় সময় সোমবার প্রায় মধ্যরাতের দিকে আফগানিস্তানের অন্যতম ধ্বংসাত্মক ৬ মাত্রার এই ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর উৎপত্তি ভূপৃষ্ঠের মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে। এই ভূমিকম্পে পূর্বাঞ্চলীয় কুনার ও নানগারহার প্রদেশে নিহতের সংখ্যা ১১০০ ছাড়িয়ে গেছে।
ভূমিকম্পে পাকিস্তানের সীমান্ত বরাবর এলাকাগুলোর মাটি ও পাথর দিয়ে তৈরি করা ঘরগুলো ধসে পড়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে ওই বন্ধুর পার্বত্য এলাকাগুলোতে উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছতে পারছেন না।
এহসান জানান, সরু একটি পাহাড়ি রাস্তায় আবর্জনা পড়ে থাকায় গাড়িগুলো সেটি ব্যবহার করতে পারছে না, ত্রাণ কাজ শুরু করতে এটিই প্রধান বাধা। রাস্তাটি পরিষ্কার করতে মেশিনপত্র আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ওই ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটিতে অ্যাম্বুলেন্সের একটি লাইন দেখা গেছে, সেগুলো কুনারের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল। ওইসব গ্রাম থেকে আহতদের হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে, যাওয়ার সময় সেগুলোতে করে ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে।
এহসান জানান, কিছু আহতকে কাবুলের ও প্রতিবেশী নানগারহারের হাসপাতালগুলোতে পাঠানো হচ্ছে।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের শিশু তহবিল সতর্ক করে বলেছে, দুর্গত এলাকাগুলোর হাজার হাজার শিশু ঝুঁকিতে আছে।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, তারা দুর্গত এলাকাগুলোতে ওষুধ, গরম কাপড়, তাবু ও তেরপলিন, সাবান, ডিটারজেন্ট, টাওয়েল, স্যানিটারি প্যাড ও পানি বহন করার বালতি পাঠিয়েছে।
সাহায্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখভালের জন্য দুর্গত এলাকায় তালেবান সেনাদের মোতায়েন করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, “ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, চলতে থাকা পরাঘাত, অনেক গ্রামের দূরবর্তী অবস্থান ত্রাণ সরবরাহে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।”
আফগানিস্তানের অবস্থান ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে। ভূগাঠনিক চ্যুতির কারণে বিশেষ করে দেশটির হিন্দুকুশ পর্বত এলাকায় প্রায়ই ভূমিকম্প হয়।