সোমবার, ১৬ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,৩০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আলোচিত প্রধান শিক্ষকের জামিন নামঞ্জুর, জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ

মীর আমান মিয়া লুমান, স্টাফ রিপোর্টার: সুনামগঞ্জের ছাতকে সার্টিফিকেট জাল জালিয়াতি মামলায় দোলারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের জাহিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মালিকের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন আদালত।

গত বৃহস্পতিবার মো. আব্দুল মালিকের আইনজীবী আদালতে জামিনের আবেদন করেন। সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন কবির তার জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

২০২৩ সালে ছাতক উপজেলার দোলারবাজার ইউপির গোপীনাথপুর গ্রামের মৃত সিদ্দেক আলীর ছেলে মো. আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে আমল গ্রহনকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ছাতক বরাবরে (সি.আর মামলা নং- ৫৮২/২০২৩) মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জ জজকোর্টের অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার নাগ।

জানা যায়, দোলারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের জাহিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মালিক যা সার্টিফিকেট জাল জালিয়াতি মামলায় হাইকোর্ট থেকে ৬ সপ্তাহের অন্তবর্তীকালীন জামিন পান। এই জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তিনি উচ্চ আদালতের নির্দেশে নিম্ন আদালতে গত ১৭ অক্টোবর আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জানালে সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন কবির তার জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবর তার বিএ (পাস) সার্টিফিকেটের তথ্য ভুল প্রমাণিত হয়। তার সার্টিফিকেটের জালিয়াতির প্রমাণিত হওয়ায় বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে চিফ জুডিসিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালত, সুনামগঞ্জ তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ প্রদান করেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকার পরও অদৃশ্য কারণে তিনি বহাল তবিয়তে থাকেন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকাল থেকে মো. আব্দুল মালিক জাল সার্টিফিকেট দিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশের যেকোনো উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সমমান হলেও তিনি এইচএসসি পাশ।

দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাৎ, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মতামত বর্হিভূতভাবে একক সিদ্ধান্তে কার্যক্রম পরিচালনাসহ বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়ম করে আসছেন।

এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে একাধিকবার মৌখিক এবং লিখিত অভিযোগ দায়ের করে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ একাধিকবার প্রামাণিত হওয়ার পরেও অদৃশ্য কারণে কোনও প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি তার বিরুদ্ধে।

সংশোধন বাণিজ্যের লক্ষ্যে ২০২২ সালের ১৭ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন ও প্রবেশপত্রে জন্ম তারিখ ও নাম ভুল হয়। যার ফলে অনেক শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তি হতে না পেরে শিক্ষা জীবন শেষ হয়ে গেছে। ২০২৩ সালের এসএসসি অনেক পরীক্ষার্থীর এসব ভুল পরিলক্ষিত হয়েছে।

এদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মালিকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিল করায় প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালিকের নির্দেশে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে মারপিট ও গুরতর জখম করে।

এসময় শিক্ষার্থীরা ও পথচারীসহ ১৫ জন আহত হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এ ঘটনায় পর পৃথক পৃথক সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

এছাড়াও সারা মাস অনুপস্থিত থেকে মাসে ২-৪ দিন এসে বেতনভাতা নিয়ে চলে যান। তার অনুপস্থিতির সুযোগে সহকারী শিক্ষকগণও পাঠদানে অমনোযোগী ও প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন।

প্রধান শিক্ষক স্থানীয় হওয়ায় প্রকৃত মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি হতে বঞ্চিত করে তার আত্মীয়-স্বজনকে অগ্রাধিকার দেন এবং গোপনীয় মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

প্রধান শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটি গঠনে সবসময় পক্ষপাত্তিত্ব করে পছন্দের লোককে সভাপতি নির্বাচিত করেন যাতে বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয় এর হিসাব কেউ চাইতে না পারে।

বিদ্যালয় স্থাপিত হওয়া থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত কোন কমিটির নিকট হিসাব দেননি তিনি। তিনি যাবতীয় বেতন-ভাতা, টিউশন ফি নিজের মতই ভোগ করছেন। ইতিপূর্বে সকল নিয়োগ হতে নিয়োগ বাণিজ্যের করে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই প্রধান শিক্ষক। একজন অফিস সহকারী নিয়োগকে কেন্দ্র করে সভাপতির সাথে দ্বন্দ্বের জেরে ৮ মাস সকল শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বন্ধ ছিল। তাছাড়াও বিদ্যুৎবিল বকেয়া থাকার কারণে ইতিপূর্বে বিদ্যালয়েরর বিদ্যুৎ সংযোগ ১০ মাস বিচ্ছিন্ন ছিল বলে জানান স্থানীয়রা।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, , বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *