মীর মো. আমান মিয়া লুমান, ছাতক(সুনামগঞ্জ): সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার জামুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আলোচিত সহকারী শিক্ষিকা অনুপমা দাশ লিজার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে।
প্রায় দু’বছর ধরে বিদ্যালয়ে না গিয়ে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন শিক্ষিকা অনুপমা দাশ লিজা। গত ১৫ আগস্ট শিক্ষিকার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল আজিজ। গত ২০ আগস্ট তদন্ত শেষে অনুপস্থিতির বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে বলে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবরে প্রতিবেদন দাখিল করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় প্রতিবেদনে উল্লেখ না করায় জনমনে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এতে উপজেলা জুড়েই আলোচনা- সমালোচনার ঝড় বসেছে। জেলা শিক্ষা অফিসার মোহন লাল দাসসহ অনেকে জড়িত আছেন বলে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার তোড়জোর চলছে বলে জানা যায়।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ছাতক উপজেলার জামুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষিকা অনুপমা দাশ লিজা প্রায় দু’বছর ধরে বিদ্যালয়ে না গিয়ে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করে নিচ্ছেন। গত ১৫ আগস্ট শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল আজিজ।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মোস্তফা মুন্নার তদন্ত শেষে গত ২০ আগস্ট জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তি), জামুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককে অনুলিপি করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবরে সহকারী শিক্ষিকা অনুপমা দাশ লিজা কোনোরকম লিখিত অফিস আদেশ ছাড়া শুধুমাত্র মৌখিক আদেশে জামুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এখানে জামুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকার অনুপস্থিতির বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলেও ডেপুটেশনে থাকা বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়াও তার মাতৃত্বকালীন ছুটির অবৈধতা নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি এই প্রতিবেদনে।
অবৈধভাবে ডেপুটেশনে গিয়েও তিনি কোনো ক্লাস করাননি। আওয়ামী লীগ ও সহকারী শিক্ষক কমিটির সাপোর্টে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে উপজেলার সাবেক শিক্ষা অফিসার মাসুম মিঞা ও বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রফিজ মিঞা ম্যানেজ করে চলছে এই অনিয়ম-দুর্নীতি। জেলা শিক্ষা অফিসার মোহন লাল দাস সহ অনেকে জড়িত আছেন বলে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার তোড়জোর চলছে বলে জানা যায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, লিজা ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত (৬ মাস) ২য় মাতৃত্বকালীন ছুটি ভোগ করেছেন। তার বাচ্চার জন্ম হয়েছে ২০২১ সালের ২৮ মার্চ। সেই অনুযায়ী তার বাচ্চার জন্মের প্রায় ৩ মাস পরে ছুটি নেওয়া হয়। তারপর তিনি ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ৫ মার্চ পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ডিউটি করেন। পরে আবার ২০২২ সালের ৬ মার্চ থেকে থেকে ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটানা নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত ২৩ মে পর্যন্ত পুনরায় ডিউটি করলেও ২৬ মে থেকে অদ্যবধি তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।
এ ব্যাপারে জামুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক(ভারপ্রাপ্ত) মফিজুর রহমান সহকারী শিক্ষিকা অনুপম দাস লিজার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গত ১৮ আগস্ট থেকে সহকারী শিক্ষিকা অনুপমা দাশ লিজা পুনরায় ডিউটি করছেন।
এ ব্যাপারে জামুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান সহকারী শিক্ষিকা অনুপম দাস লিজার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমি কর্তব্যরত থাকাকালীন লিজার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বার বার অভিযোগ করার পরও সাবেক ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুম মিঞা কোনো প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল আজিজ সহকারী শিক্ষিকা অনুপম দাস লিজার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বিদ্যালয়ে না এসে বেতন ভাতা নিয়মিত উত্তোলন করছেন এই শিক্ষিকা।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মুস্তফা মুন্না প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে প্রতিবেদন দাখিল করেছি। জেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলেন।
শিক্ষিকার আরও অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয় প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হলো না কেনো জানতে চাইলে, এ বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাননি তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার মোহন লাল দাস বলেন, এটা কোনো তদন্ত প্রতিবেদন নয়। উপজেলা থেকে জানানো হয় শিক্ষিকা তাতিকোনা বিদ্যালয়ে মৌখিকভাবে ডেপুটেশনে ছিলেন। আমি বলেছি, মৌখিকভাবে ডেপুটেশনে থাকার কোনও বিধান নেই। তাকে তার স্কুলে ফিরিয়ে দেন বলে কল কেটে দেন। পরে আবার কল দিলে তিনি কোনও কথা বলতে চাননি।
এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, যদি কেউ অন্যায় করে আমরা এর সুষ্ঠ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।