
যায়যায়কাল ডেস্ক: ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা দখলের পরিকল্পনা অনুমোদনের পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে এই ‘বিপজ্জনক’ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা। যৌথ বিবৃতি দিয়েও জানানো হয়েছে কড়া নিন্দা।
রোববারের এই বৈঠকে জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বলেন, ইসরায়েল লড়াইয়ের তীব্রতা বাড়ানোর এক বেপরোয়া পরিকল্পনা করেছে। গাজা দখলের পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক আইনের বড় ধরনের লঙ্ঘন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পলিয়ানস্কি বলেন, এই বেপরোয়া পরিকল্পনার আগে সক্রিয়ভাবে যে কূটনীতি চলেছে তাতে হামাসের হাত থেকে ১৪০ জনের বেশি জিম্মিকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। আর এখন ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সহিংসতা আরও বাড়ানোর পথ বেছে নিয়েছে।
এভাবে তারা ইসরায়েলি জিম্মিদের নিরাপত্তা ও জীবনকে ধ্বংস করছে। গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধেরও অভিযোগ করেন তিনি। এই অমানবিক হত্যাযজ্ঞ অবসানের আগে আর কত ফিলিস্তিনির প্রাণ বিসর্জন দেওয়া প্রয়োজন? প্রশ্ন করেন পলিয়ানস্কি।
গাজায় পুরোদমে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে রাখছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত ফু বলেছেন, গাজার পরিস্থিতি অনেক বেশি বিপজ্জনক দিকে মোড় নিচ্ছে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে গাজা দখলের কোনওরকম প্রচেষ্টা দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং গাজায় অনুন করে ইসরায়েলের অভিযানের নিন্দা জানাতে হবে।
সামরিক পন্থা সংকট সমাধানের কোনও পথ নয়। গাজার জনগণকে ঢালাওভাবে সাজা দেওয়ার জন্যও ইসরায়েলের নিন্দা করেন তিনি। ত্রাণ প্রবেশের জন্য গাজার সব দ্বার খুলে দেওয়ারও আহ্বান জানান চীনা রাষ্ট্রদূত।
এছাড়া, জাতিসংঘে ফ্রান্সের প্রতিনিধি-সহ যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, গ্রিস ও স্লোভেনিয়াও এক যৌথ বিবৃতিতে কড়া ভাষায় ইসরায়েলের পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে। তারা অবিলম্বে ইসরায়েলকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
আলাদা একটি বিবৃতিতে স্পেন, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নরওয়ে, পর্তুগাল ও স্লোভেনিয়াও ইসরায়েলকে গাজা সিটি দখলের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছে। তারা বলছে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তা মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াবে।
ওদিকে, জাতিসংঘের মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র জিম্মিদের মুক্ত করাএবং গাজাকে মুক্ত করার অক্ণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু আজকের জাতিসংঘ জরুরি বৈঠক সে চেষ্টা ব্যাহত করছে।
তিনি বলেন, ইসরায়েল তিনটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি গ্রহণ করেছিল যেটি হামাস প্রত্যাখ্যান করেছে। আজকের এই যুদ্ধ থামতে পারত যদি হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিত।
বৈঠকে জাতিসংঘ সদস্যরা ইসরায়েলকে গণহত্যার জন্য দোষারোপ করার সুযোগ নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত।
অন্যদিকে, জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বলেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিনের জনগণকে ধ্বংস করে আমাদের ভূমি দখল করে নেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা কি বলছে তার পরোয়া করে না ইসরায়েল, এটি অনস্বীকার্য।
এখন আমাদের কী করণীয় সেটি গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থনের ভাষায় যে কথা বলছে তার প্রশংসা করেন রিয়াদ। তবে তিনি বলেন, “এটিই যথেষ্ট নয়। আপনাদেরকে ব্যবস্থা নিতে হবে। আপনাদেরকে এ বিষয়ে কিছু করতে হবে। এটি (গাজা দখল পরিকল্পনা) বন্ধ করতে হবে।”
ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা অনুমোদনের পরদিন রোববার জাতিসংঘে এই জরুরি বৈঠক হয়।
এ বৈঠকে ইসরায়েলের জাতিসংঘ প্রতিনিধি জোনাথন মিলার বলেছেন, গাজা স্থায়ীভাবে দখলে রাখার কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই।
তিনি গাজায় যুদ্ধ শেষ করার ৫ টি নীতির কথা জানান। যেগুলো এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন। এগুলো হচ্ছে:
*হামাসের নিরস্ত্রীকরণ
*জিম্মিদের বাড়ি ফেরানো
*গাজার বেসামরিকীকরণ
* গাজায় বাড়তি নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা
*গাজায় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এবং হামাসকে বাদ দিয়ে বিকল্প একটি বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা।