রবিবার, ১৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১লা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

এডিসি মেয়ের জামাতার অর্থায়নে টিএন্ডটি লাইনের লেবার শশুর নুরুল হক ঢাকায় ৩৮টি বহুতল ভবনের মালিক

এস আই খান:

সরকারের টেলিফোন সংযোগ বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের (টিএন্ডটি) লাইনের লেবার হিসেবে ১৯৯১ সালে চাকুরীতে যোগদান করেন নূরুল হক। বাড্ডা ও আশপাশের এলাকায় গড়েছেন ৩৮টি ভবন। এর মধ্যে ৩০টির কাজ সম্পন্ন, বাকিগুলোর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে ।

ভবনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- উত্তর বাড্ডা তাকওয়া টুইন টাওয়ার, এএম জেড হাসপাতালের পেছনে ১৫ কাঠা জমির উপর ১০ তলা ভবন, উত্তর বাড্ডা নাসিমা মঞ্জিল, একতা রেসিডেন্সিয়াল এরিয়ায় সাড়ে তিন কাঠা জমির উপর পাঁচতলা ভবন প্ল্যান পাস করে গড়েছেন ৮ তলা ভবন।

উত্তর বাড্ডা স্বাধীন স্বরণিতে ১৬ কাঠা জমির উপর এনজি হাইটস নামে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করেছেন, একই এলাকায় শান্তি নিকেতনের ময়নার বাগ বউ বাজার এলাকায় সাড়ে ১০ কাঠা জমির উপর ১১ তলা ভবন, উত্তর বাড্ডা বউবাজার এলাকায় ১২ কাঠা জমির উপর তাকওয়া নেক্সজেন নামে ১১ তলা ভবন, যেটির কাজ এখনও চলমান। বউ বাজারের পাশে ১২ কাঠা জমিতে পদ্মা টাওয়ার নামে দশ তলা ভবন, মেরুল বাড্ডা আনন্দ নগর সার্জেন্ট টাওয়ারের সামনে তিনটি ভবনের কাজ চলমান রয়েছে  প্রত্যেকটি দশ তলা করে।

আনন্দনগর সুপার মার্কেটের পাশে রয়েছে ১০ তলা ভবন।
উত্তর বাড্ডা সেলিমের বাড়ির সামনে সাত কাঠা জমি কিনে ও ১ কাঠা দখল করে ৮ কাঠার উপর ১০ তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। তাকওয়া টুইন টাওয়ারে দুইটা ভবনের প্ল্যান নিয়ে একটি ভবন নির্মাণ করেছেন।

এছাড়া আফতাব নগরে একাধিক প্লট এবং জলসিড়ি প্রজেক্টে দুইটা প্লট রয়েছে। রাজউকের আইন অমান্য করে নির্মাণ করেছে সব গুলো ভবন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নুরুল হকের জামাতা সাজ্জাদ ২০১৪ সালে যশোরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে স্ত্রী কারিনী তনিমা আহমেদ নির্যাতনের মামলা করেছিলেন।

গত শেখ হাসিনার ক্ষমতার মেয়াদে অনিয়ম-দুর্নীতি করেও সেই কর্মকর্তা বহাল তবিয়তে এখনো রয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মনে ধোঁয়াসে গল্প এ যেন আরেক দূর্নীতিবাজ বেনজীর অথবা ছাগল কান্ড মতিউর রহমান এমনকি আবেদ আলীকেও হার মানিয়েছে।

শশুরের ব্যবসার অর্থের যোগানদাতা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, জামাতা-তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ।

নূরুল হকের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়,  তার মেয়ে জামাতা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বর্তমানে মেহেরপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ৩৩ তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের সময়।

তিনি বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে বিগত সরকারের অবৈধ ও অনৈতিক মিশন বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছেন।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের ডামি নির্বাচনের সময়, তিনি ধামরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালীন বিতর্কিত নির্বাচন সম্পূর্ণ করতে ভূমিকা পালন করেন।

ঐ নির্বাচনের পরপরই তিনি পুরস্কার হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন এবং এর আগে ২০২০ সালের দিকে তিনি আশুলিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) থাকাকালীন ভূমি মালিকদের জিম্মি করে ব্যাপক পরিমানের অবৈধ অর্থ হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে ।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রে জানা গেছে , নূরুল হকের আবাসন ব্যবসার অর্থের যোগানদাতা তার জামাতা। তিনি এসিল্যান্ড থাকাকালীন নূরুল হকের ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, এই অভিযোগের সাথে আমি সম্পৃক্ত নয় আরও সত্যতা যাচাই করে আমার সম্পৃক্ততা থাকলে আমাকে জানাবেন। কিন্তু শশুরের এই সম্পদের পিছনে উনার জড়িত থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেন নাই।

টিএনটি লাইনের লেবার নুরুল হক বলেন, আমি ব্যবসা করি। আমি ব্যবসা করে খাই। প্রতিটি স্থাপনায় একাধিক শেয়ার রয়েছে। উনার স্থাপনার রাজউকের অনুমোদন আছে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নামে ২ টা ভবনের অনুমোদন নেওয়া আছে। বাকী স্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন সকল স্থাপনার অনুমোদন নেওয়া আছে।  কিন্তু অনুমোদন কপি দেখতে চাইলে তিনি কোনো কপি দেখাতে পারেন নাই। নিউজ লেখা পর্যন্ত নুরুল হকের ও তার মেয়ের জামাই কর্তৃক নির্মিত এই আবাসন প্রকল্পের কোনো ডকুমেন্টস সাংবাদিকদের দেখাতে পারেন নাই। বরং উনার আবাসান প্রকল্পের রিপন নামীয় একজন শেয়ার হোল্ডার প্রতিবেদককে বলেন, সাংবাদিকরা নাকী এসব তথ্যের নামে বাটপারী করছে। সাংবাদিকদের নামে মামলা দেওয়ার ভয় দেখায়। শেয়ারহোল্ডার রিপন সাহেবের হোয়াটস এ্যাপে প্রতিটি প্রকল্পের তালিকা পাঠানো হয়। সেই সাথে এসব ভবনের রাজউক ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো অনুমোদন আছে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন সব আছে। কিন্তু তিনি কোনো ডকুমেন্টস দেখান নাই।

যেহেতু নুরুল হক ও তার মেয়ের জামাই এডিসি তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ ও তাদের শেয়ার হোল্ডার নির্মিত ভবনের কোনো ডকুমেন্টস সাংবাদিকদের দেখান নাই সুতরাং এই ভবনগুলোতে অনেক অনিয়ম ও অনুমোদনহীন কীনা জানতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উচ্চতর তদন্তের প্রয়োজন। তাছাড়া নুরুল হক ও তার জামাতা সহ উক্ত ভবনগুলোর শেয়ারহোল্ডার সবার আয়-ব্যয়ের উৎস অনুসন্ধান প্রয়োজন। সেই জন্য দুদক, NBR ও রাজউকের তদন্তের মাধ্যমে সঠিক তথ্য বের করা হোক। প্রকৃত পক্ষে একজন টিএন্ডটি লাইনের লেবার কি করে রাতারাতি কোটি টাকার মালিক হলো?

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ