সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৩ জন পুলিশকে হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা পাওয়া গেছে প্রত্যক্ষদর্শী এক স্থানীয় সাংবাদিকের কাছ থেকে।
তিনি জানিয়েছেন, মিছিল নিয়ে থানায় হামলা হয়। এক পর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় সেখানে। এরপর পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে একে একে বের হতে থাকলে তাদেরকে পিটিয়ে, মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়।
হত্যার পর এক পুলিশ সদস্যের গলায় ফাঁস দিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রাখার ছবিও প্রকাশ পেয়েছে। তিনজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে পুকুরে ফেলে রাখা হয়।
হত্যা করে আট পুলিশ সদস্যকে স্থানীয় একটি মসজিদের পাশে স্তূপ করে রাখা হয়। তাদের কয়েকজনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাদের গায়ের পোশাক খুলে ফেলা হয়।
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে অসহযোগের প্রথম দিন রোববার এই ঘটনা ঘটে।
থানার অদূরে এক সাংবাদিকের বাড়ি। তিনি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী।
সকাল ১০টার দিকে এনায়েতপুরের খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। তাদের সঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াত-শিবিরের কর্মী এবং সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও ছিলেন।
আন্দোলনকারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে জবাবে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ও গুলি ছোড়ে।
বেলা ১টার দিকে আন্দোলনকারীরা এনায়েতপুর থানায় হামলা চালায়। পুলিশ সদস্যরা তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেও পারেননি। এক পর্যায়ে থানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই আগুন ছড়িয়ে যাওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা একে একে বের হয়ে আসেন।
তখনই তাদেরকে ধরে ধরে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনাও প্রায় একই রকম।
তিনি জানান, মিছিলটি থানার দক্ষিণ এলাকা থেকে এনায়েতপুর থানার দিকে আসে। থানার সামনে পুলিশ সদস্যরা মিছিলকারীদের বাধা দিলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সেখানে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে। এরপর থানায় আগুন দেওয়া হয়।
পুলিশের রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) বিজয় বসাকের বর্ণনাতেও ভিন্নতা নেই। তিনি বলেন, নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
সেই থানায় কতজন পুলিশ সদস্য ছিলেন, বাকিদের পরিণতি কী সেই তথ্যও তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য দিতে পারেননি তিনি।
রোরবার দেশব্যাপী সংঘাতে অর্ধশত মৃত্যুর সিংহভাগই হয়েছে সিরাজগঞ্জে। ১৩ পুলিশ সদস্য ছাড়াও আরও অন্তত ৯ জনকে হত্যার তথ্য মিলেছে, যাদের মধ্যে আছেন সাংবাদিক, যুবদল নেতা, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা, ছাত্রলীগ নেতা।
সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের চয়ন ইসলাম ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার, সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত মুন্নার বাসভবনেও হামলা হয়।
বাকি ৯ মৃত্যুর ছয়টিই হয়েছে রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলায়।
সেখানে নেতাকর্মীরা মতবিনিময় সভা করছিল। সেখানে হামলা হয়, পিটিয়ে ও দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে ৪০ থেকে ৫০ জন নেতাকর্মীকে আহত করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান জানান, এই হামলার ঘটনায় নিহত ৬ জনের মৃতদেহ কয়েকটি হাসপাতালে রয়েছে।