বুধবার, ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কলমাকান্দায় পোস্টমাস্টারের গাফিলতির কারণে চাকরি বঞ্চিত যাইনুলের স্বপ্ন ভেঙে গেল

মেহেদী হাসান নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধি : চাকরিতে যোগদানের তারিখ পেরোনোর দেড় মাস পর প্রার্থীর হাতে পৌঁছাল নিয়োগপত্র। এতে চাকরি বঞ্চিত হয়ে পোস্টমাস্টারের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ ডাক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন মো. যাইনুল আবেদিন নামের এক যুবক। নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় এ ঘটনা ঘটেছে।

যাইনুল আবেদিন কলমাকান্দা উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়নের বাঘসাত্রা গ্রামের মৃত আলী আকবরের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার বিভাগীয় ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেলকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।

যাইনুল আবেদিন বলেন: ২০২২ সালের অক্টোবরে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ফিল্ড অফিসার হিসেবে পরীক্ষা দিই। উত্তীর্ণ হওয়ায় চাকরির নিয়োগপত্র পোস্ট অফিসের মাধ্যমে গত ১৩ আগস্ট হাতে পাই।

কিন্তু চিঠি খুলে দেখি চাকরিতে যোগদানের তারিখ ছিল ৬ জুলাই।ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২১ জুন আমার ঠিকানায় পোস্ট অফিসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করে নিয়োগপত্র পাঠায়। খবর নিয়ে জেনেছি কলমাকান্দায় ওই চিঠি ২২ জুন এসে পৌঁছে। এর ১-২ দিনের মধ্যে বড়খাপন ইউনিয়ন পোস্ট অফিসে চলে আসার কথা। কিন্তু সেটা পৌঁছাতে দেড় মাসের বেশি সময় লেগেছে। পোস্টমাস্টারের গাফিলতির কারণে আমার স্বপ্ন ভেঙে গেল।

যাইনুল আরও বলেন: ১৩ আগস্ট নিয়োগপত্র পেয়ে ফোন করে যোগাযোগ করি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। যথাসময়ে যোগদান না করায় এত দিনে এই পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। তাই আর যোগদান করা যাবে না বলে তারা জানায়।

কলমাকান্দা উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়নের পোস্ট অফিসে গিয়ে দেখা গেছে,অফিসের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। পোস্টমাস্টার মিনহাসুর রহমানের দেখা মেলেনি। একটা জরাজীর্ণ ঘরে ডাকবাক্স ঝোলানো থাকলেও এটি কোনো পোস্ট অফিস নয় বলে জানান স্থানীয় লোকজন। ঘরের মালিক মিনহাসুর রহমান নিজেই পোস্টমাস্টার। তবে তিনি থাকেন নেত্রকোনা শহরে।

পোস্টমাস্টারের ভাতিজা ওবায়দুল ইসলাম বলেন: এই ঘরে ডাক বক্স ঝোলানো থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এটি একটি বাংলো ঘর। এই ঘরে ধানসহ বিভিন্ন কৃষি আসবাব থাকে। পোস্ট অফিসের কাজ করা হয় অন্য ঘরে।

ওবায়দুল ইসলাম বলেন: মিনহাসুর তাঁর অসুস্থ বাবাকে চিকিৎসা করানোর জন্য নেত্রকোনা শহরে গিয়েছেন। এখন তো আর তেমন চিঠিপত্র আসে না। তবে চিঠি বিলিতে হঠাৎ ভুল হতেই পারে।

স্থানীয় লোকজন জানান: বাঘসাত্রা গ্রামের দিনমজুর আলী আকবর ও সাহেরা খাতুনের পাঁচ ছেলের মধ্যে যাইনুল আবেদিন একমাত্র উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। তাঁর বড় দুই ভাই শ্রমিকের কাজ করেন। পরিবারের স্বপ্ন যাইনুল চাকরি করে ছোট দুই ভাইকে পড়াশোনা করাবেন। কিন্তু সে আশা এখন অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে বড়খাপন ইউনিয়নের পোস্টমাস্টার মিনহাসুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও বন্ধ পাওয়া গেছে।

কলমাকান্দা উপজেলা পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার সুকুমার নাগ বলেন: যাইনুলের চিঠিটি গত ২২ জুন আমাদের অফিসে আসে। এদিনই সেটি বড়খাপন ইউনিয়ন পোস্ট অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দেরিতে পৌঁছানোর বিষয়ে পোস্টমাস্টার কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী যাইনুলের করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ আজ রোববার তদন্ত করে গেছেন।

এ বিষয়ে নেত্রকোনা প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার শাহেদুন্নাহার বলেন: বিষয়টি দুঃখজনক। চাকরি হারানোয় যাইনুলের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। ডাক বিভাগে অভিযোগ দিয়েছেন যাইনুল। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।নেত্রকোনার ১০ উপজেলার ৮৪ ইউনিয়নে ডাকঘরের ১৯৫টি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে নেত্রকোনা প্রধান ডাকঘরের অধীনেই ৪৩টি শাখা রয়েছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ