বুধবার, ২২শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কারারক্ষীকে ঘুষ দিলেই দরজা খুলে নরসিংদী কারাগারের

সাইফুল ইসলাম রুদ্র, নরসিংদী : নিয়ম অনুযায়ী নরসিংদী জেলা কারাগারের বন্দিদের সঙ্গে স্বজনরা দেখা করতে পারেন ১৫ দিনে একবার। কিন্তু কারারক্ষী সোহরাফকে ঘুষ দিলে দিনে দুইবারও দেখা করার সুযোগ মেলে। এমনকি সোহরাফকে ঘুষ না দিলে জামিনে মুক্ত পাওয়া আসামিদেরকে একদিন পর ছাড়ে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কোনো হাজতি কিংবা কয়েদির সঙ্গে আত্মীয়-স্বজনরা এমনিতেই ১৫ দিনে একবার দেখা করার সুযোগ পান। কিন্তু এ সময়সীমার বাইরেও চাইলে দেখা করা যায়, যদি কিছু টাকা কারারক্ষী সোহরাফকে দেওয়া হয়। গত ১ জুলাই পলাশ উপজেলার এক মাদক মামলার আসামির নরসিংদী আদালত থেকে জামিন হয়। আসামি পক্ষের লোকজন বিকাল ৫টায় নরসিংদীর কারাগারে গেলে কারারক্ষী সোহরাফ জানায় আপনাদের আসামিকে আগামীকাল ছাড়া হবে। কিছু ত্রুটি রয়েছে। হঠাৎ ১০ হাজার টাকা চুক্তির বিনিময়ে আসামিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি এখন ভাইরাল।

প্রতিদিন নরসিংদী জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকে কারাগারে আসে তাদের কারাবন্দি স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে। দেখা করতে এসে দিতে হয় ঘুষ, তা না হলে দেখা করাটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। নিরুপায় হয়েই সাধারণ মানুষ কারারক্ষী সোহরাফকে দুই-তিনশ টাকা দিয়ে দেখা করছেন হাজতি বা কয়েদির সঙ্গে। আবার অনেক ক্ষেত্রে কারারক্ষী সোহরাফের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিলে আসামিদের সঙ্গে স্বজনদের একান্তে কথা বলার সুযোগও করে দেওয়া হয়।

অভিযোগ আছে, নরসিংদীর বাইরে থেকে কেউ কারো সঙ্গে দেখা করতে এলে ডিও লেটার লাগবে বলে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারে থাকা কারারক্ষী সোহরাফ মোটা অংকের ঘুষ নেয়। না হলে দেখা করতে দেয়া হয় না স্বজনদের সাথে।

জেলা কারাগারের মূল প্রবেশদ্বারের বাম পাশে ছোট রুমটি হচ্ছে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার। আর এ রুম থেকেই দেওয়া হয় আসামিদের সঙ্গে দেখা করার স্লিপ। রুমটির বাইরে নীল রঙের দেয়ালে সাদা রঙে লেখা ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’। তার নিচে লাল রঙে লেখা বিনামূল্যে সাক্ষাতের স্লিপ সংগ্রহ করুন, বিনামূল্যে মোবাইল ফোন জমা রাখুন। এমন কি যে কোনো অভিযোগ দেওয়ার জন্য জেল সুপারের সরকারি ফোন নম্বরটি লেখা রয়েছে। তবে সেই নম্বরে কেউ কোনো অভিযোগ করে কি না, বা কেউ কল দিলে কেউ রিসিভ করে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ।

নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলা থেকে আসা কুলসুম আক্তার অভিযোগ করে বলেন, আমি আমার এক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতে আসছি জেলা কারাগারে। দেখা করতে এসে স্লিপ কাটতে গিয়ে শুনলাম আমি দেখা করতে পারব না, কারণ ডিও লেটার নেই। আমি এত কিছু বুঝি না, তখন ওই কাউন্টারের পিছনে মর্টার ঘরের এখানে সোহরাফ নামে এক কারারক্ষী বলেন, আমাকে ৫শ’ টাকা দিলে আপনার আসামির সঙ্গে দেখা করিয়ে দিব, আপনি কি রাজি? পরে ৫শ টাকা দিয়ে আসামির সঙ্গে দেখা করে। এমনকি আবারো আসলে সোহরাফের সঙ্গে দেখা করার কথা বলেন।

একই উপজেলা থেকে আসা আসাদ মিয়া বলেন, আমার ভাইকে দেখতে আসছি এ কারাগারে। দেখা করতে এলেই কারারক্ষী সোহরাফকে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে দেখা করতে পারি না। কোনো খাবার দিতে গেলেও তাকের টাকা দিতে হয়, যে টাকার খাবার কিনি, সেই পরিমাণ টাকা দিতে হয় তাদের।

এ বিষয়ে ঢাকা কারা অধিদপ্তরের কারা উপ-মহাপরিদর্শক মনির আহমেদ বলেন, নরসিংদীতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের কারারক্ষী সোহরাফ টাকার বিনিময়ে একাধিকবার দেখা করার সুয়োগ করে দিচ্ছে কি না আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে ধরতে হবে। আমি বিষয়টি নরসিংদী জেলসুপারের নিকট জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, , , বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ