শাহদাৎ হোসেন লাল, স্টাফ রিপোর্টার: কুড়িগ্রামে এক শিক্ষকের নামে ২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরির অভিযোগ উঠেছে।
তথ্য গোপন করে ২য় ও ৩য় গণবিজ্ঞপ্তিতে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) থেকে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে রাজু আহমেদ নামের ওই শিক্ষক একই সাথে দুইটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষকের নামে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন কুড়িগ্রাম রিভার ভিউ হাই স্কুলের ইংরেজি বিষয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, রাজু আহমেদ নামের ওই শিক্ষক ২০১৮ সালে এনটিআরসিএ-র ২য় গণবিজ্ঞপ্তিতে ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার ইসলামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যোগদান করে এমপিওভুক্ত হন। তার ইনডেক্স নম্বর-১১৫৫২৭৭।
সেখানে চাকরিকালীন ২০২১ সালে তিনি এনটিআরসিএ’র একই সদনে পূর্বের ইনডেক্স নম্বর গোপন করে ৩য় গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করে কুড়িগ্রাম রিভার ভিউ হাই স্কুলে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি যোগদান করেন। কুড়িগ্রাম রিভার ভিউ হাই স্কুলে তিনি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত কর্মরত অবস্থায় সকল অভ্যন্তরীণ বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন।
জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগকারী ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক আশরাফি বিনতে ইসলাম জানান, রাজু আহমেদের এমপিও ভুক্তির জন্য প্রধান শিক্ষক আমাকে ২ বছর থেকে মানসিকভাবে হেনস্তা করছেন। আমি এই প্রতিষ্ঠানে ২০০৫ সালে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। এমপিওভুক্তির সময় এমপিও শিটে ভুলবশত আমার বিষয়ের নাম অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় আমি সেটি সংশোধনের চেষ্টা করি। কিন্তু রাজু আহমেদের এমপিভুক্তির সুবিধার কথা উল্লেখ করে প্রধান শিক্ষক আমাকে শাখা শিক্ষক হিসেবে ফাইল সংশোধন করতে বলেন। কিন্তু আমি শিক্ষক প্যাটার্ন অনুযায়ী শূন্য পদে রেগুলার শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। এখানে একই বিষয়ের আরেকজন শাখা শিক্ষক আছেন। যিনি আমার থেকে ৮ বছরের জুনিয়র। প্রধান শিক্ষক তার ফাইল সংশোধন না করে আমাকে দীর্ঘদিন থেকে মানসিক টর্চার করছেন। রাজু আহমেদ তথ্য গোপন করে একই সাথে দুই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক জানান, রাজু আহমেদ একই সাথে ২ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার একটি প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত। সেখানে ইস্তফা না দিয়ে তিনি প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে এখানে যোগদান করে কর্মরত আছেন। হঠাৎ তিনি গত মে মাস থেকে কোনো ছুটি ছাড়াই উধাও হন। পরে জানা যায় তিনি পূর্বের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। এই স্কুলের ক্লাস রুটিন, হাজিরা খাতাসহ সমস্ত কাগজপত্রে তার নাম রয়েছে। তিনি এখান থেকে পদত্যাগ করেননি। আমরাই তার ক্লাস চালাই। প্রধান শিক্ষকে সাথে তিনি আর্থিক চুক্তি করে এমন অনৈতিক সুবিধা নিতে পারেন।
রাজু আহমেদ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে এই প্রতিবেদক সরকারি ওয়েবসাইটের ইএমআইএস (এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) সেল থেকে তথ্য যাচাই করেন। সেখানে ইনডেক্স কর্তন ছাড়াই একই সাথে ২ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকার প্রমাণ মেলে। কুড়িগ্রাম রিভার ভিউ হাই স্কুলে তার পিডিএস (পার্সোনাল ডাটা সিট) আইডি-১০১৫৬৫১৮৪ ও ঝালকাঠির নলছিটি ইসলামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তার পিডিএস আইডি-১০৫৬৭৪৩৪, এমপিও শিট অনুযায়ী তিনি নলছিটি রূপালি ব্যাংক শাখার ৩২২৮০১১০১৯৫৬৯ অ্যাকাউন্ট থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন। একই সাথে একই পদে ২টি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা বেসরকারি এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো-২০২১ এর ১১.১৭ ধারা অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ। তাছাড়া তথ্য গোপন রেখে এই শিক্ষক কুড়িগ্রাম রিভার ভিউ হাই স্কুলে এমপিওভুক্ত হলে তিনি যোগদান থেকেই এমপিও সুবিধা পাবেন। তার সমুদয় পাওনা এরিয়ার হিসেবে দেওয়া হবে। যা ওই নীতিমালার ১৭.৭ ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।
অভিযুক্ত শিক্ষক রাজু আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে রিভার ভিউ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকই ভালো জানেন। আপনি তাকেই জিজ্ঞেস করেন- এই বলে ফোন কেটে দেন।
কুড়িগ্রাম রিভার ভিউ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, মোবাইলে সব কথা হয় না। আপনি সামনাসামনি আসেন কথা বলি। শিক্ষক রাজু আহমেদ অন্য স্কুলে চাকরি করেন এটা আমার জানা ছিল না। আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম। এ কথা বলে তিনি ব্যস্ত আছেন মর্মে ফোন কেটে দেন।
কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার শামসুল আলম জানান, একই ব্যক্তি দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির করার নিয়ম নাই। যদি করে থাকেন এবং বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম রিভার ভিউ হাই স্কুলের সভাপতির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. পূবন আখতারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, বিষয়টি আমি অবগত নই। জেনে এ বিষয়টি মন্তব্য জানাবো। এ কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন।