আবু শামা, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে সরিয়ে শাখা ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলার প্রধান আসামি বিপ্লব চন্দ্র দাসকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
বুধবার বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিপ্লবের নাম ঘোষণা করা হয়। বিপ্লবের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড ঘটানোসহ বিশৃঙ্খলার বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
২০১৬ সালের ১ আগস্ট কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবদ্ধ হয়ে নিহত হন কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ। ঘটনার তিনদিন পর বিপ্লবকে রাজধানী থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বিপ্লব চন্দ্র দাস। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত। এ ঘটনায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ও থেকে বহিষ্কার করা হয়।
বিপ্লব চন্দ্র দাস কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীও নন। ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে ভর্তি হন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী দু’বারের বেশি পুন:ভর্তির সুযোগ না থাকলেও সেসময় প্রভাব খাটিয়ে তিনি তৃতীয়বার ভর্তি নেন। তার ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার ৬ বছর পর নিয়মিত শিক্ষার্থীকে সরিয়ে অছাত্রকে নেতা বানিয়েছে কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
বিপ্লব চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিরও অভিযোগ রয়েছে। সবশেষ ২০২২ সালের ১ অক্টোবর তার নেতৃত্বে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ফাঁকাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক হল বন্ধ করে ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে বিপ্লব মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কেউ না হলেও অব্যাহতি দেওয়া মীর শাহাদাত হোসাইন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তাঁর বাবা গেজেটভূক্ত সামরিক মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে সরিয়ে অছাত্র ও হত্যা মামলার আসামিকে দায়িত্ব দেওয়ায় ক্যাম্পাসে সমালোচনায় কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ১১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মেসবাহ উদ্দিন আফ্রিদি বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে সরিয়ে অছাত্র ও আসামিকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের দায়িত্ব দেওয়া মুক্তিযোদ্ধার রক্তকে অপমান করা। কেন্দ্রীয় কমিটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে বিতর্কিত করার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার ৬ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে সরিয়ে ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক করায় অবৈধ যোগসাজশের অভিযোগ তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক মঞ্চের এক নেতা বলেন, বহিস্কৃত হওয়ার ৬ বছর পর অছাত্রকে ধরে এনে নেতা বানানোর অসৎ কোনো উদ্দেশ্য আছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত ছাত্রকে নেতা বানিয়ে সংগঠনকে অস্থিতিশীল করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
এসব বিষয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের ভাষ্য, হত্যা মামলার রায় এখনও না হওয়ায় বিপ্লবকে পদায়ন করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। রায় হলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।