
এস আই খান: দিন দুপুরে ঘরে ঢুকে কিল, ঘুষি ও পিটিয়ে হত্যা করা হয় ফরিদ মিয়াকে। হত্যার পর আসামিরা নিজ এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকাশ্যে। উল্টো হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে ফরিদ মিয়ার পরিবারের সদস্যদের।
২০২২ সালের ৪ জুলাই কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার পশ্চিম গোবরিয়া গ্রামে ফরিদ মিয়াকে নিজ ঘরে ঢুকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। এরপর ৭ জুলাই মৃত ফরিদ মিয়ার মেয়ে জান্নাতুল মারিয়া কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর থানায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৪/৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ০৩।
মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন, মতিউর রহমানের ছেলে আবু বাক্কার ও আবু তাহের, আবু বাক্কারের স্ত্রী হেলেনা, আবু তাহেরের স্ত্রী ফাতেমা ও আব্দুর রহিমের ছেলে শাহ আলম। এজাহারভুক্ত সব আসামি কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার পশ্চিম গোবরিয়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ও মৃত ফরিদ মিয়ার প্রতিবেশী।
জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবৎ আসামিদের সাথে মৃত ফরিদ মিয়ার জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিলো। সেই জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, ঘরে ঢুকে কিল, ঘুষি ও পিটিয়ে হত্যা করার পরও আসামিরা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আসামিদের গ্রেফতার করছে না থানা পুলিশ। বরং আসামিরা উল্টো মৃত ফরিদ মিয়ার পরিবার ও বাদী জান্নাতুল মারিয়াকে নানারকম ভয়ভীতি, হুমকি-ধমকি ও প্রাণনাশের ভয় দেখাচ্ছে।
হত্যাকাণ্ডের পর কুলিয়ারচর থানার এসআই (নিরস্ত্র) আব্দুল্লাহ আল মামুনকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়ার পর এজাহার পর্যালোচনা করার জন্য সরেজমিন পরিদর্শন করেন। স্বাক্ষীদের ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬১ ধারায় জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। তিনি মৃত ফরিদ মিয়ার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, ভিসেরা রিপোর্ট সংগ্রহ করেন। কিন্তু ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর পরবর্তী তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর পিবিআই কিশোরগঞ্জকে মামলার দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। কিন্তু পিবিআই মামলার তদন্তভার এসআই (নিরস্ত্র) মো: আফতাবুজ্জামানকে দেয়। তারপর তিনি সঙ্গীয় ফোর্সসহ সরেজমিন তদন্ত করার জন্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন, স্বাক্ষীদের জবানবন্দি নেন। কিন্তু আসামি গ্রেফতারে কোনো তৎপরতা ছিল না। বরং আসামিরা প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘুরে বেড়ালে মৃত ফরিদ মিয়ার পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এজাহারভুক্ত আসামিরা মামলার বাদীসহ ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি ও হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। সেই সাথে পিবিআই কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদন আসামিদের পক্ষে হওয়ায় বাদীপক্ষ উক্ত প্রতিবেদনের নারাজির আবেদন করেন।
এর আগে বাদী ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর উক্ত মামলার তদন্তভার পুলিশের নিকট থেকে সিআইডিকে দেওয়ার জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর আবেদন করেন। কিশোরগঞ্জ জেলা আদালত পিবিআই কর্তৃক প্রদানকৃত তদন্ত প্রতিবেদনের নারাজি আমলে নিয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য গত ২০২৩ সালের ২১ নভেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলা সিআইডিকে মামলার তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন।
সিআইডির এসআই (নিরস্ত্র) মোহাম্মদ বাবুল মিয়া গত ২০২৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মৃত ফরিদ মিয়াকে হত্যার কারণ, হত্যার উদ্দ্যেশ্য, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা, স্বাক্ষীগণের বক্তব্য, ডাক্তারি রিপোর্ট ও আসামিদের সম্পৃক্ততাসহ সকল বিষয়ে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত রিপোর্ট প্রেরণ করেন। সিআইডি কর্তৃক তদন্ত করার সময় উক্ত হত্যা মামলার ২নং আসামি আবু তাহেরকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু জামিনে বের হয়ে আসামি বাদী পক্ষকে নানা রকম হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। তবে বাকি এজাহারভুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি না হওয়ায় পুলিশও আসামিদের ধরছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের। তাই কিশোরগঞ্জ জেলা আদালতের কাছে মৃত ফরিদ মিয়ার পরিবারের সদস্যরা ও বাদী জান্নাতুল মারিয়া উক্ত মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করার নির্দেশ প্রদানের দাবি করেন।