
সিলেট প্রতিনিধি: গরু চুরির অভিযোগে সিলেটের গোয়াইনঘাটে পানির সঙ্গে চুন ও বালুর মিশ্রণ খাওয়ানোর পর এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা, স্বজন ও পুলিশ।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার কাকুর বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম হেলাল উদ্দিন (৪০)। তিনি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ডৌবাড়ী ইউনিয়নের ঘোষগ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোয়াইনঘাটের মধ্য জাফলং ইউনিয়নের পাতাতিখেল বাগান এলাকা থেকে মঙ্গলবার দুপুরে গরুসহ এক কিশোর (১৬) এবং হেলাল উদ্দিনকে আটক করেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। তাদের বিরুদ্ধে গরু চুরির অভিযোগ আনা হয়। তাদের ধরে রাধানগর বাজারে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। খবর পেয়ে মধ্য জাফলং ইউনিয়নের দুজন ইউপি সদস্য রাধানগর বাজারে যান। এরপর আটক দুজনের পরিবারকে বিষয়টি জানানো হয়। রাতে মুচলেকা দিয়ে দুজনকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় ওই কিশোরের পরিবার। মঙ্গলবার সকালে হেলাল উদ্দিনের পরিবারের লোকজন তাকে পার্শ্ববর্তী এলাকায় ওই কিশোরের বাড়ি নিজ বাড়িতে নিয়ে আসছিল। পথেই তার মৃত্যু হয়।
হেলাল উদ্দিনের চাচা মোহাম্মদ আলীর অভিযোগ, তার ভাতিজা হেলাল উদ্দিন পেশায় বালু-পাথরের শ্রমিক ছিলেন। ওই কিশোরের সঙ্গে প্রায়ই কাজে যেতেন। ঘটনার দিনও কাজের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। কিন্তু তাদের চক্রান্ত করে চুরির অপবাদ দিয়ে দুটি গরুসহ আটক দেখানো হয়েছে। পরে মারধর করে হেলাল উদ্দিনকে চুন ও বালুমিশ্রিত পানি খাইয়ে দেওয়া হয়েছে।
মোহাম্মদ আলী বলেন, হেলাল উদ্দিনকে মারধর করা হয়েছে, তার অবস্থা গুরুতর বিষয়টি জানায় পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ তাকে নিতে যাননি। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্যকে অবহিত করেছিলেন মধ্য জাফলং ইউপির এক সদস্য। সে সময় তাদের এলাকা (মধ্য জাফলং) থেকে চুরি হওয়া সব গরুর বিষয়ে তাদের দায় নিতে বলা হয়েছিল। এ জন্য তারা আর যাননি।
মোহাম্মদ আলী বলেন, তার ভাতিজাকে নিয়ে আসার পর মুখ, পায়ুপথ ও কান দিয়ে রক্ত এবং পানি বের হয়েছে। মারধর ও চুন এবং বালুমিশ্রিত পানি খাইয়েই হত্যা করা হয়েছে। চুরির অপবাদ দিয়ে একজন শ্রমিককে তারা মেরে ফেলেছেন। এর বিচার চান তিনি।
মধ্য জাফলং ইউপির সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, তিনি সালিশে গিয়েছিলেন। সেখানে আটক দুজনকে কেউ মারধর করতে দেখেননি। তবে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখতে দেখেছেন। পাশাপাশি চুন ও বালুর মিশ্রণ খাওয়ানোর ঘটনাও তিনি দেখেননি। আটক কিশোরের পরিবার থানায় উল্টো অপহরণের অভিযোগ দিয়েছিল। পরে চুরির ঘটানা ও অপহরণের বিষয়টি সালিশের মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে। এ ঘটনায় হেলাল উদ্দিনের অভিভাবক কেউ সালিশে যাননি। কিশোরের মা, ফুফাতো ভাই, দুই বোন গিয়ে তাদের জিম্মায় নিয়ে গেছেন। লিখিত মুচলেকায় তারা দুজনকেই সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেছেন। এ ঘটনার ভিডিও রয়েছে।
নুরুল ইসলাম আরও বলেন, মারধরে যে ব্যক্তি মারা যাওয়ার অভিযোগ করা হচ্ছে, সালি তিনি ওই কিশোরের বাড়িতে চুরির আরও দুটি গরুর রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন।
বুধবার দুপুর ১২টার দিকে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল হেলাল উদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তরের কথা জানান গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরকার তোফায়েল আহমেদ।
হেলাল উদ্দিনকে চুন–বালুমিশ্রিত পানি খাওয়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে চুরির অভিযোগে গণধোলাই দিয়ে চুন ও বালুমিশ্রিত পানি খাওয়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে। রাধানগর এলাকার আশপাশে তাদের আটক করে দুই লিটার পানিতে আধা কেজি চুন ও বালু মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।