শুক্রবার, ১৫ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,৩১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

, এর সর্বশেষ সংবাদ

গুলশানে বারের কর্মচারীদের মারধরে ব্যবসায়ীর মৃত্যু, গ্রেপ্তার ৭ জন রিমান্ডে

যায়যায়কাল প্রতিবেদক: রাজধানীর গুলশানে ব্লিস আর্ট লাউঞ্জ নামের একটি বারের বাউন্সার ও কর্মচারীদের মারধরে এক ব্যবসায়ী নিহতের ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার আসামিদের বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। রিমান্ড শুনানি শেষে আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

১৪ অক্টোবর রাতে গুলশান-১ নম্বরের ব্লিস আর্ট লাউঞ্জ লিমিটেড বার ও রেস্টুরেন্টের সামনে দবিরুল ইসলাম (৫১) নামের ওই ব্যবসায়ীর ওপর হামলা হয়। নিহত দবিরুলের স্ত্রী নাসরিন আক্তার বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

এ মামলায় ঢাকা ও কুমিল্লায় অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন শামীম আহমেদ, রাজু আহমেদ, তোফাজ্জেল হোসেন, মো. রাকিব, মো. কাউসার, রুবেল মাহমুদ ও প্লাবন মিয়া।

এদের মধ্যে শামীম আহমেদ বারটির ব্যবস্থাপক এবং তোফাজ্জেল হোসেন গ্রাহক। বাকি পাঁচজন বারের বাউন্সার ও কর্মচারী।

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বৃহস্পতিবার বলেন, বারের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা দবিরুল ইসলামকে মারধর করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। কী কারণে তাকে এভাবে মারধর করা হয়েছে, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

অবশ্য তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিল পরিশোধ করা নিয়ে বারের ভেতরে তোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে দবিরুলের কথা–কাটাকাটি হয়। বিল পরিশোধ না করে তিনি বেরিয়ে যেতে চাইলে বারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে বাধা দেন। তখন কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে তার ওপর হামলা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, দবিরুল ইসলাম জমি কেনাবেচার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৪ অক্টোবর রাত তিনটার দিকে তিনি কাজ শেষে গুলশান-১ নম্বরের প্লট ৫১–এ অবস্থিত ব্লিস আর্ট লাউঞ্জ লিমিটেড রেস্টুরেন্টে যান। পরিবারের সদস্যরা রাতে তার ফোন বন্ধ পান। পরদিন ভোরে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে জানতে পারেন, তিনি গুলশান-১ নম্বরের একটি ভবনের পেছনের রাস্তায় পড়ে আছেন। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথম স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর তার মৃত্যু হয়।

মারধরের ঘটনার দৃশ্য বারের সামনের একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়েছে। তাতে দেখা ও শোনা যায়, বারের ব্যবস্থাপক শামীমের সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে কথা বলছিলেন দবিরুল। এক পর্যায়ে দবিরুল শামীমকে একটি থাপ্পড় দেন। পরে শামীম ও তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন মিলে দবিরুলকে মারধর করেন। দবিরুল মাটিতে পড়ে গেলে একজন তার মাথায় লাথি দেন। এর কিছুক্ষণ পরে কয়েকজন মিলে দবিরুলকে সেখান থেকে তুলে পাশের একটি রাস্তায় ফেলে দেন।

এ ঘটনায় হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন দবিরুলের ছেলে তায়েব ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘আমার বাবাকে যারা পিটিয়ে হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ব্লিস আর্ট লাউঞ্জ লিমিটেড বার ও রেস্টুরেন্টের পাঁচজন মালিক রয়েছেন। এদের মধ্যে মামুন তাজুল ইসলাম ভুইয়া নামের একজন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক সুমনুর রহমানের ভাই। সুমনুর রহমান একসময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গুলশানের পরিদর্শক ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তাকে মানিকগঞ্জে বদলি করে দেওয়া হয়। পরিচালক হিসেবে ভাইকে রেখে সুমনুর রহমান নিজেই এ ব্যবসা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য সুমনুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। বার্তা পাঠিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

ওই বারে শুধু দেশি মদ বিক্রির অনুমোদন ছিল জানিয়ে গুলশানের ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, ‘কিন্তু তারা বিদেশি নানা ব্র্যান্ডের মদ অবৈধভাবে বিক্রি করে আসছিলেন। তদন্তে এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ