মো. আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৬ বছর আগে গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে জনসাধারণের জন্য চলাচলের রাস্তা নিজের দাবি করছে এক আমেরিকা প্রবাসীর পরিবার। এরই প্রেক্ষিতে তারা এলাকার অন্যান্য পরিবার যেন বাড়ি থেকে বের না হতে পারে, তাদের বাড়ির সামনে দেয়াল তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বাধা দেওয়া হয় এই সড়কে চলাচল করা মালবাহী যানকেও।
এই ঘটনায় সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের দক্ষিণ জগৎসার গ্রামের মৃত ইদ্রিস মিয়ার ছেলে খোরশেদ আলম বাদি হয়ে সদর মডেল থানায় ৬জনকে আসামী করে একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দক্ষিণ জগৎসার গ্রামে একটি সরু রাস্তা দিয়ে মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কবরস্থানে যাতায়াত ছিল গ্রামবাসীর। যাতায়াতের সুবিধার্থে ১৯৮৬ সালে গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে সেই সরু রাস্তার দুইপাশের জমির মালিকদের কাছ থেকে জায়গা নিয়ে রাস্তাটি প্রসস্থ করা হয়। এর দীর্ঘদিন পর স্থানীয় আমেরিকা প্রবাসী লিয়াকত খানের পরিবার সড়কের দক্ষিণ পাশে সব জায়গায় ক্রয় করেন। তারা জায়গা ক্রয় করার পর ২০১৫ সালে গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমের তৈরি করা রাস্তাটি নিজেদের ব্যক্তিগত দাবি করে সাধারণ জনগণের যাতায়াতের বাধা প্রদান করতে থাকেন। পাশাপাশি ওই রাস্তার উপর মুক্তিযোদ্ধার নাম ব্যবহার করে অবৈধ ভাবে তোরণ নির্মাণ করেন। সেই তোরণে পারিবারিক রাস্তা হিসেবে লিখে দেওয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে গ্রামবাসী তৎকালীন ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে এসিল্যান্ডকে তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদানের জন্য আদেশ দেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে সেই অবৈধ তোরণ ৭দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন উপজেলা প্রশাসন। এরই জেরে গ্রামবাসীর সাথে ওই আমেরিকা প্রবাসী পরিবারের মারামারি হয়। পরে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে এক শালিসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় তোরণের পারিবারিক সড়ক লেখাটি কেটে ফেলতে এবং রাস্তাটি ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ প্রদান করা হয়। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও সেই পরিবার এখনো ইউনিয়ন পরিষদে কোন প্রকার আবেদন করেনি। তারা নিজেদের রাস্তা দাবি করে উত্তর পাশের জমিগুলোতে দেয়াল নির্মাণ করেছেন। যেন কেউ বাড়ি থেকে বের হতে না পারেন। এছাড়াও তাদের বাড়ির গরু কবর স্থান গুলোতে ছেড়ে রেখে পবিত্রতা নষ্ট করছে।
এই বিষয়ে গ্রামের বাসিন্দা হামিদুর রহমান বলেন, প্রায় ১৭ বছর আগে আমার ৬শতাংশ জায়গা বিক্রয় করেছি। জায়গা ক্রয় করা পরিবার বাড়ি নির্মাণ করলে তাদের যাতায়াতের রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে আমেরিকা প্রবাসী লিয়াকত খানের ভাতিজা সুমন খান।
কাসেম আলী নামের স্থানীয় আরেক বাসিন্দা জানান, তারা আমেরিকা যাওয়ার পর একে একে রাস্তার দক্ষিণ পাশের সব জমি কিনে ফেলছে। কিন্তু এই রাস্তা দীর্ঘদিন আগের। এখন তারা পুরো রাস্তা নিজেদের দাবি করে উত্তর পাশের জায়গা ও বাড়িঘরের সামনে দেয়াল দিয়ে দিচ্ছেন। কাউকে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে দিচ্ছেন না।
অভিযোগকারী খোরশেদ আলম বলেন, এই রাস্তার পাশে আমাদের ৬০ শতাংশ জায়গা রয়েছে। গত ৭ অক্টোবর আমার জায়গায় মাটি ফেলতে মিনি ট্রাক নিয়ে রাস্তায় উঠলে সুমন খান তার সঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে আমার গতিরোধ করেন। সে তখন বলে, এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া যাবে না। যদি মাটি ফেলতে হয় তাহলে ১০ লাখ টাকা দিয়ে মাটি ফেলতে হবে। এই কথার প্রতিবাদ করলে সে তার লোকজনদের নিয়ে আমাকে মারধর করে গলায় গামছা লাগিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। এই ঘটনায় আমি থানায় একটি অভিযোগ জমা দিয়েছি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সুমন খান বলেন, এই রাস্তা আমাদের। রাস্তার পাশে কারো বাড়ির সামনে দেয়াল দেয়নি। এই রাস্তায় কোন ভারি যান চলতে দিব না।
থানায় অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক শওকত হোসেন জানান, অভিযোগের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ ভাবে বিষয়টি সমাধান হতে। তদন্ত এখনো চলমান আছে।