হানিফ পারভেজ: কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের আমানীপুর গ্রামে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন আমানীপুর পার্ক। পরিপাটি আমানিপুর পার্কটি দেখতে যেমনই সুন্দর ও আকর্ষনীয় তেমনি নজরকাড়া চমৎকার বিনোদনের একটি স্থান।
শিশু-কিশোরদের নির্মল আনন্দের জন্য আমানী পার্কটি সুসজ্জিত করা হয়েছে নতুন ও ভিন্ন আঙিকে। দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের রাইড। পার্কটি এক নজর দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা ভিড় জমাচ্ছেন। সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে এই পার্কে আসেন সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করার জন্য।
কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০২১ সালের পহেলা জানুয়ারি ৩ একর জমির উপর বিচারপতি সৈয়দ মিসবাহ্ উদ্দিন হোসেন আমানিপুর পার্কটি প্রতিষ্ঠা করেন। পার্কটি প্রথম দিকে করোনা মহামরী প্রভাবে কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে। বর্তমানে এ পার্কে শিশু- কিশোরদের বেশ কিছু আকর্ষণীয় এবং সুন্দর সুন্দর রাইড সংযোজন করা হয়েছে। পার্কটির নির্মাণ কাজ শুরু থেকে প্রচারণায় স্থানীয়সহ বৃহত্তর সিলেটের বিনোদনপ্রেমী মানুষ অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।
সিলেট-আখাউড়া রেললাইন ঘেঁষে টিলাগাঁও ইউনিয়নের আমানীপুর গ্রামে গড়ে ওঠা পার্কটি প্রত্যন্ত জনপদের মানুষের বিনোদনের জন্য সুন্দর একটি স্থান। এখানকার পরিবেশও মনোমুগ্ধকর। বিশেষ করে পার্কে দাঁড়িয়ে গোধূলি বেলার দৃশ্য অত্যন্ত চমৎকার।
কুলাউড়া উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে পৃথিমপাশা ইউনিয়নে অবস্থিত রবিরবাজার। রবিরবাজার ঢোকার আগেই পশ্চিম দিকে আমানীপুর পার্কে যাওয়ার রাস্তার দূরত্ব প্রায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার। তাছাড়া রবিরবাজার সিএনজিস্ট্যান্ড থেকে বাংলাবাজার হয়েও আমানীপুর পার্কে প্রবেশ করা যায়। পাশাপাশি টিলাগাঁও বাজার কিংবা লালপুর নয়াবাজার হয়েও আমানীপুর পার্কে সহজে যাওয়া যাবে।
আমানীপুর পার্ক সকল বয়স, শ্রেণি, পেশার মানুষের বিনোদনের চমৎকার একটি জায়গা। তাছাড়াও শিশুদের জন্য বিভিন্ন ধরণের রাইড উপভোগের ব্যবস্থা রয়েছে। নাগরদোলা, নৌকা রাইড, মিনি ট্রেন, মিনি গাড়ি রাইড, মিউজিয়াম, সুইমিং পুল ইত্যাদি। তাছাড়াও একান্ত সময় কাটানোর জন্য রয়েছে চমৎকার আরো কিছু আয়োজন।
এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন প্রকার ফুলের বাগান, রয়েছে মন জুড়ানো আঁকা-বাঁকা রাস্তা, বসে গল্প করার জন্য রয়েছে নানা রঙের নানান ডিজাইনের চেয়ার। পার্টি কিংবা জন্মদিন অথবা পিকনিক ও শিক্ষা সফরসহ বিভিন্ন প্রকারের অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারবেন, সেই সুযোগও রয়েছে আমানি পুর পার্কে।
পার্কের ভিতর ছোট একটি যাদুঘরের ব্যবস্থাও রয়েছে এ পার্কে। আপনি বিভিন্ন প্রকার প্রাচীন আসবাবপত্র, প্রাণী জগৎ, জড় পদার্থ দেখতে পাবেন। তাছাড়া বিলীন হয়ে যাওয়া অনেক কিছু এ মিনি মিউজিয়ামে আপনি দেখতে পাবেন।
পার্কের ভিতর একটি মিনি রেলওয়ে স্থাপন করা হয়েছে এবং মিনি ট্রেনও আছে যার মাধ্যমে ১৫ থেকে ২০ জন মানুষ একসাথে ট্রেন রাইড করতে পারেন। এ ট্রেন রাইড করতে চাইলে আপনি প্রথমে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। পার্কের ভিতরের পুকুরে নৌকা রাইডের ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে প্রায় ৫টি নৌকা আছে। প্রতিটি নৌকাতে ৪/৫ জন রাইড করতে পারেন। নৌকা রাইডেও ট্রেন রাইডের মত আপনাকে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে।
পার্কের ভিতরে নাগর দোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটি ব্যবহার করতে আপনাকে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবনের প্রতিচ্ছবি ছোট আকারে তৈরি করা হয়েছে একটি ছোট্ট ভবন। যার মাধ্যমে এ পার্কের সৌন্দর্য্য আরো একধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। কৃত্রিমভাবে একটি ঝর্না তৈরি করা হয়েছে। ঝর্নাটি পার্কের সৌন্দর্য্য আরোও একগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে, ভ্রমণ পিপাসু মানুষ ঝর্নাটি অনেক উপভোগ করে থাকেন।
পার্কে প্রবেশ টিকিট মূল্য ৫০ টাকা, মিউজিয়াম প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা,গাড়ি রাইড ৩০ টাকা, ট্রেন রাইড ২০ টাকা, নৌকা রাইড ২০ টাকা, নাগরদোলা ২০ টাকা, জাতীয় সংসদের স্মৃতি ফ্রি, ঝর্নাও ফ্রি।
এছাড়াও রয়েছে খাবার হোটেল, শিশুদের বিনোদনের জন্য কিছু রাইড রয়েছে। পার্ক কর্তৃপক্ষ শিশুদের রাইডগুলোকে ফ্রি ব্যবহারযোগ্য করে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে কোনো টিকেটের প্রয়োজন হবে না।
পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে চাইলে এই আমানিপুর পার্ক বেছে নিতে পারেন। তাছাড়া শিশুদের বিনোদন ও আনন্দের জন্য আমানীপুর পার্ক অনেক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছি। বিশেষ করে শিশুদের বিকাশের জন্য মিনি মিউজিয়ামটি অনেক কাজে লাগবে।