
বশির আলমামুন, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটি বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে পতিত স্বৈরাচারের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতিসমূহ সংস্কার এবং গঠনতন্ত্রে সংযোজিত কালো আইন বাতিলপূর্বক নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে রোববার সকাল ১১ টায় নগরীর একটি হল রুমে সংবাদ সম্মেলন করেছে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল রক্ষা পরিষদ নামের একটি সংগঠন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হাসপাতাল রক্ষা পরিষদ এর আহব্বায়ক মো. ফজলুর রহমান মজুমদার স্বপন বলেন জনগণের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের বর্তমান পরিচালনা কমিটি কর্তৃক বিগত ১৭ বছর যাবৎ ব্যাপক লুটপাট, অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রাতি, দলীয়করণ এবং গঠনতন্ত্রে কালো আইন সংযোজন করে হাসপাতালকে ফাংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। এমতাবস্থায় তারা আবারও যেনতেন একটি নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার ঘৃণ্য খেলায় মেতে উঠেছে। হাসপাতালের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এল.কে সিদ্দিকী, প্রফেসর ডাঃ এ. এফ.এম ইউছুফ, ক্যাপ্টেন এম.এন হফা, প্রফেসর ডাঃ নূরনবী চৌধুরী অবদানকে অস্বীকার করে বিগত ১৭ বছর পাতিত স্বৈরাচারের মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, এম এ লতিফ, ফজলে করিম চৌধুরীসহ মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগের নেতাদের গুনগান গেয়ে তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে হাসপাতালকে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছে সুবিধাবাদি এ চক্র। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের জায়গা বরাদ্ধ এবং মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দেয়ার পরও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ন্যূনতম কোনো স্মৃতিচিহ্ন এ হাসপাতালের কোথাও রাখা হয়নি। এই হাসপাতালের অনুমোদনসহ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন কর্মকান্ডে মূল ভূমিকা পালন করা চট্টলার কৃতি সন্তান সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীরও কোনো নামগন্ধ কোথাও রাখেনি এ আওয়ামী দালালরা।
তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিগত দিনে হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগে পত্রিকায় কোনো প্রকারের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তাদের আত্মীয় স্বজনদের নিয়োগ দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য আত্মীয় ও দলীয়করণ করা হয়েছে। যার ফলে হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও চেইন অব কমান্ড সম্পূর্ণ ভেসে পড়েছে এবং সেবার মান শূন্যের কোঠায় এসে পৌঁছেছে। মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে। মেডিকেল কলেজে ছাত্রছাত্রী ভর্তিতে বিশাল অংকের লেনদেনের ভাগ বাটোয়ারায় বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদের প্রেসিডেন্ট ও জেনারেল সেক্রেটারি বর্তমান কাৰ্য্যনিবাহী কমিটির অনেকেই জড়িত বলে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। চলতি বছরের গত ২ সেপ্টেম্বর স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষ (স্বাচিপ) সারা দেশে চিকিৎসকদের ধর্মঘটের ডাক দেয়। এই ধর্মঘটের পক্ষ নিয়ে ডাক্তারগণ হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
গত ৬ জুন ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের ৪র্থ কিস্তির টাকা ছাড়করণের জন্য নোটশিট করে অনুমোদন দিয়ে এসএ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা পাঠানো হয়। সরকারি অনুদানের কিস্তির টাকা ছাড় করাতে বিবিধ এভাবে হাসপাতানের কোটি কোটি ঢাকা তারা লোপাট করেছে। তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করেন, বর্তমান কার্যকরী পরিষদ রাউজানের আওয়ামী গডফাদার ফজলুল করিমের সহযোগিতায় জবর-দখলের মাধ্যমে এলাকার মানুষের ভূমি দখল করে চমাশিহা সায়মা ওয়াজেদ অটিজম ইনন্সিটিটিউট (মা ও শিশু হাসপাতালের একটি প্রকল্প) এবং চমাশিহা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বৃদ্ধ নিবাস (মা ও শিশু হাসাপাতালের একটি প্রকল্প) গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন। সদস্যদের অগোচরে শিশু হাসপাতালের প্রকল্প রাউজানে এবং তা ব্যক্তির নামে করে দলীয়করণের চূড়ান্ত নজির স্থাপন করেছে। ক্যান্সার হাসপাতাল এবং মা ও শিশু হাসপাতাল নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের কোন হিসাব না দিয়ে নিজেরা আখের গোছানোয় ব্যস্ত। এখানে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মাধ্যমে তদন্ত করলে গলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আজীবন সদস্য ফি একলাফে ৫হাজার থেকে ৫০হাজার টাকায় নিয়ে গিয়ে নতুন সদস্য হওয়ার পথকেও তারা কঠিন করে তুলেছে। বড় ডোনেশন দিয়ে নিজেদের লোককে সদস্য বানিয়ে ভোট ব্যাংক বাড়িয়ে তারা নিজেদেরকে অপ্রতিদ্বদ্ধি করে তোলার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে তারা আরও জানান, গত ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনের তফল গঠনতন্ত্র অনুযায়ী করা হয়নি এবং ভোটার তালিকায় বিভিন্ন অনিয়মের কারণে নির্বাচন কমিশন গত ২৩ অক্টোবর দুই মাসের জন্য নির্বাচন স্থগিত করেন কিন্তু দুই মাস অতিক্রম হওয়ার পূর্বে ২৭ অক্টোবর সেক্রেটারী কর্তৃক পুনরায় আগামী ২১ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন। যার ফলে এই নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা নিয়ে আজীবন সদস্য ও এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান কার্য্যনিবাহী পরিষদের এহেন অনৈতিক কর্মকান্ডের ব্যাপারে বিগত বার্ষিক সাধারণ সভায় আজীবন সদস্যগণ বক্তব্য দিতে চাইলেও কাউকে কোন বক্তব্য দিতে দেওয়া হয় নাই। সাবেক এমপি এম এ লতিফ ৩/৪শ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোক নিয়ে সভা স্থলে প্রবেশ করে এবং সভা তাদের একক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়।
বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির এহেন অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি ও দলীয় করনের প্রতিবাদে মানববন্ধন, প্রধান উপদেষ্টা, আইন, স্বাস্থ্য ও সমাজসেবা উপদেষ্ঠা, সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশন, সমাজসেবা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরসমূহকে লিখিতভাবে জানানো হলেও কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেয়া হয় নাই।
তারা আরও জানান, এমতাবস্থায় নির্বাচন হলে এই স্বৈরাচারের দোসররা আবারও নির্বাচিত হবে এবং হাসপাতালটি ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই চট্টগ্রাম মাও শিশু হাসপাতালের বর্তমান কাৰ্য্যনিবাহী কমিটি ভেংঙ্গে দিয়ে ঘোষিত নির্বাচনের তফসিল বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে, গঠনতন্ত্র সংশোধন করে, কালো আইন বাতিল করে, নতুন ভোটার তালিকা প্রনয়ন ফ্যাসিষ্ঠদের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছারিতার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত পূর্বক সকলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে পরবর্তীতে নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমাদের সকলের প্রাণপ্রিয় হাসপাতালটি রক্ষা করার আবেদন জানান।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদস্য সদস্য সচিব ইউসুফ বাহার চৌধুরী, যুগ্ন আহব্বায়ক আমিনুল ইসলাম আমিন, মো. সাজ্জাদ উদ্দিন, আলহাজ্ব নুরুল আফসার চৌধুরী, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দীন সিদ্দীকি, মো, রকিবুল আমিন ভুইয়া, সোলাইমান বাচ্ছু, সদস্য মো. ফজলুল করিম মজুমদার মুন্না, মো. মহিউদ্দিন মুন্সী, অ্যাডভোকেট নোমান আসকারী দিদার, হাসিনা আক্তার লিপি, মো. রকিবুল ইসলাম, মো. মোস্তফা তালুকদার, মো. আমিরুল ইসলাম ও ছালে জঙ্গি প্রদীপ প্রমুখ।