আলমগীর হোসেন হিরু, চাটখিল (নোয়াখালী): নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার শাহাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোরশেদ আলম স্বপনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে অশোভনীয় আচরণের সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
এ কারণে চাটখিল প্রেস ক্লাবের সদস্য সাংবাদিক রুবেল হোসেনকে সোমবার বিকেলে চাটখিল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ মাঠে হেনস্তা করে প্রকাশ্যে গুম করার হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এতে ঐ সাংবাদিক সহ তার পুরো পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। পরবর্তীতে সাংবাদিক রুবেল হোসেন গতকাল মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে চাটখিল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে জানা যায়, চলতি বছরের ২৬ মে দৈনিক জনকন্ঠের ১০ এর পাতায় ‘প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ’ শিরোনামে এবং বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। (এর আগে ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।) সংবাদটি প্রকাশিত হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঐ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পান। এবং পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিকে নিদের্শনা প্রদান করেন। ম্যানেজিং কমিটি এই বিষয়ে বিশেষ সভা আহ্বান করলে, প্রধান শিক্ষক ঘটনার বিষয়ে দুঃখপ্রকাশ করে একটি অঙ্গীকারপত্র প্রদান করেন। যার ফলে ম্যানেজিং কমিটি তাকে প্রথম বারের মত সর্তক ও ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে মর্মে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেন। বর্ণিত ঘটনার পরবর্তী সময়ে প্রধান শিক্ষক মোরশেদ আলম নিজ দায়িত্ব বহাল থাকেন। মোরশেদ আলম স্বপন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রধান শিক্ষক পদ লাভ করার পর থেকে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সাধারন মানুষের সঙ্গে বেপরোয়া আচরণ করেন।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তিনি নিজেও দল পরিবর্তন করে সাংবাদিক রুবেল হোসেনকে বিভিন্ন লোকমারফত হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছেন। গত সোমবার রুবেল চাটখিল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে আসরের নামাজ আদায় করে বের হয়ে শাহাপুর বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের তার শিক্ষক মাওলানা দেলোয়ার হোসেন কে সালাম শুভেচ্ছা বিনিময় করে চা খাওয়ার অনুরোধ করে। এমতাবস্থায় হঠাৎ ঐ প্রধান শিক্ষক মোরশেদ আলম স্বপন, মসজিদ থেকে বের হয়ে রুবেলের দিকে মারমুখো আচরণে ছুঁটে এসে হুমকি দিয়ে বলেন, তুই আমার বিরুদ্ধে নিউজ করছত। তুই কত বড় সাংবাদিক আমি তোকে দেখে ছাড়বো। এক সাপ্তাহের মধ্যে তুই আমার অফিসে না আসলে তোরে এমনভাবে তুলে নিবো টেরও পাবি না। একদম শেষ করে দিবো, তোর মামা নজরুলকেও শেষ করবো। তোরে তোর সাংবাদিক হাবিব বাঁচাতে পারবে না। সব গুলোরে দেখে নিবো।
সাংবাদিক রুবেল অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে ঐ শিক্ষককে বললেন, আপনি যা বলেছেন আমি নিউজে তাই লেখেছি। আপনি বলেছেন, আপনার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়। আমি সেটাই লিখেছি। এসময় তিনি তার দিকে তেড়ে আসলে উপস্থিত মাওলানা দেলোয়ার হোসেন তাকে টেনে নিয়ে যান। ঘটনার সময় বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ১০/১২ জন শিক্ষকসহ বহু মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রুবেল ঘটনার সময় অত্যন্ত নির্বাক ছিলেন।
এই ঘটনায় চাটখিল প্রেস ক্লাবের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক মো. হাবিবুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক গুলজার হোসেন সৈকত, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি-বাসাস চাটখিল উপজেলা শাখার সভাপতি জসিম মাহমুদ, সেক্রেটারী মনির হোসেন বিএসসি, চাটখিল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু নাছের মাহমুদ চৌধুরী জুয়েল, সাংবাদিক কামরুল কানন সহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ তীব্র নিন্দা জানিয়ে অনতিবিলম্বে প্রধান শিক্ষক মোরশেদ আলমকে আইনের আওতায় নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন। নয়তো যে কোন অপ্রতিকর ঘটনার জন্য প্রশাসন দায়ি থাকবে।
এ বিষয়ে মোরশেদ আলম স্বপনের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার বিষয়ে কোন সদুত্তর না দিয়ে পাল্টা ধমক দিয়ে বলেন, তিনি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করবেন।
চাটখিল থানার ওসি মোহাম্মদ ফিরোজ উদ্দীন চৌধুরী অভিযোগ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান।