শুক্রবার, ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

জনগণের চরম ভোগান্তি

চার বছরেও শেষ হয়নি রাস্তার কাজ

আবিদ হাসান, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) : মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের নয়াবাজার থেকে ডেগিরচর পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তা পাকা করণের দেড় বছরের কাজ চার বছরেও শেষ হয়নি অর্ধেক। প্রায় ৩ বছরের অধিক সময় ধরে রাস্তার কাজ বন্ধ থাকায় এলাকাবাসীর দুর্ভোগ যেন চরমে পৌঁছে গেছে। কাজের শুরুতে মাটি খুঁড়ে বক্স করে নামেমাত্র বালু ফেলে রাখা হয়। বক্স করার কারণে একটু বৃষ্টি হলেই জমে পানি, আর পায়ে হেঁটেই চলাচল করতে পারে না, এমন অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়, গত ২০২০/২১ অর্থ বছরে জিডিবি-৩ প্রকল্পের আওতায় বাহাদুরপুর সড়কের নয়াবাজার থেকে ডেগিরচর পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তার পীচ ঢালাইয়ের জন্য ২০২০ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ১ কোটি ৭৯ লাখ ২৫ হাজার ২৮১ টাকা দরে মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। ২০২১ সালের মার্চ মাসে রাস্তাটির কাজ শুরু করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তিন বছরে শুধুমাত্র রাস্তা খুঁড়ে বক্স করে কিছু কিছু স্থানে বালু ফেলে রাখা হয়। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রাস্তাটির কাজ বন্ধ রাখা হয়।


সরেজিমনে গেলে একাধিক এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, রাস্তাটি প্রায় তিন বছর আগে মাটি খুঁড়ে রাখায় এ রাস্তা দিয়ে কোনো যানবাহনই চলাচল করতে পারছে না। একটু বৃষ্টি হলেই কোথাও কোথাও পানি জমে কাঁদার সৃষ্টি হয়। এতে করে মানুষের পায়ে হাঁটাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বর্তমানে এ রাস্তা দিয়ে কৃষিপণ্যসহ কোনো মালামালই আনা নেয়া করা যায় না। ফলে এ এলাকার কৃষকেরা কৃষিপণ্য নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। কেউ অসুস্থ হয়ে জরুরি তাকে হাসপাতালে নেয়া নিয়েও পড়তে হয় বিপদে। এছাড়াও একটু বৃষ্টি হলেই এ রাস্তা দিয়ে দুটি বিদ্যালয়ের প্রায় ৫ শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরও চলাচল অনেক অসুবিধা হয়।

ইজিবাইক চালক রোমান বলেন, এই রাস্তাটি দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ খুঁড়ে ফেলে রাখছে। আমরা মালামাল নিয়ে গাড়ি চালাতে পারি না। গতকাল ১০-১২ মন ভূট্টা নিয়ে আমার গাড়ি উল্টে যায়। একটু বৃষ্টি হলেই আমরা যাতায়াত করতে পারি না। অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।

উপজেলার ডেগিরচর গ্রামের বাসিন্দা আরজু প্রামানিক জানান, আমাদের এই রাস্তাটা অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। কিন্তু চার বছর ধরে রাস্তাটি এভাবে পড়ে আছে। কাজ বন্ধ করে রাখছে। এ রাস্তা দিয়ে কৃষকেরা কৃষিপণ্য নিয়ে হাটে বাজারে যেতে পারে না। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তার বিভিন্ন স্থানে পানি জমে য়ায়। তখন গাড়ি তো দূরের কথা পায়ে হেঁটেই চলাচল করা যায়। আমাদের এই রাস্তার বেহাল দশা দেখারও কেউ নেই।

একই গ্রামের ভ্যান চালক আব্দুল বারেক জানান, এই রাস্তা দিয়ে ভ্যানে করে মাল নেয়ার সময় ভ্যান উল্টে আমার হাত ভেঙে গেছে। আজ আমি পুৃ্ঙ্গ। তিন বছরের বেশি হইল এই রাস্তা দিয়ে হাজার মানুষ অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করছে। রাত বেরাত রোগী নিয়েও বিপদে পড়তে হয়। কোনো গাড়ি আসতে পারে না।

গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মোজাফফর হোসেন জানান, তিন বছরের বেশি সময় ধরে রাস্তাটি খুঁড়ে কাজ বন্ধ রয়েছে। রাস্তা খুঁড়ে রাখায় একটু বৃষ্টি হলেই মানুষের চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভ্যান, রিক্সা কিংবা নসিমনে এই এলাকার কৃষিপণ্যও হাট বাজার নেয়া যায় না। রাস্তাটি নিয়ে এই এলাকার জনগণ খুব ভোগান্তিতে আছে। রাস্তাটি এখন এলাকার জনগণের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২/৩ দিন আগে যেখানে যেখানে জলাবদ্ধতা হয়, সেখানে নিজে কিছু বালু ফেলে দিছি। রাস্তাটি যে কেন এভাবে পড়ে তাই বুঝলাম না। এটা একটা জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী মাজহারুল হক আকন্দ জানান, আগের টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে অনুমোদন হয়ে গেছে। এখন জেলা থেকে টেন্ডার দিলে কাজ শুরু হয়ে যাবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *