মঙ্গলবার, ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ছাতকে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালিকের ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়ম

মীর আমান মিয়া লুমান, ছাতক: সুনাগঞ্জের ছাতক উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের জাহিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মালিক।

তিনি পরিবার নিয়ে সিলেটে বসবাস করেন। সারা মাস অনুপস্থিত থেকে মাসে ২-৪ দিন এসে বেতনভাতা নিয়ে চলে যান। তার অনুপস্থিতির সুযোগে সহকারী শিক্ষকগণও পাঠদানে অমনোযোগী ও প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন। এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা কার্যক্রম হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। দেশের যেকোনো উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সমমান হলেও জাহিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এইচএসসি পাশ। ফলে শিক্ষর্থীরা আধুনিক শিক্ষা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। তাছাড়া যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক তার অধীনে চাকরি করতে চান না। প্রধান শিক্ষক স্থানীয় হওয়ায় আত্মীয়-স্বজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রকৃত মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি হতে বঞ্চিত করেছেন তিনি। তাছাড়া গোপনীয় মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

প্রধান শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটি গঠনে সবসময় পক্ষপাত্তিত্ব করে পছন্দের লোককে সভাপতি নির্বাচিত করেন যাতে বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয় এর হিসাব কেউ চাইতে না পারে। বিদ্যালয় স্থাপিত হওয়া থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত কোন কমিটির নিকট হিসাব দেননি তিনি। তিনি যাবতীয় বেতনভাতা, টিউশন ফি নিজের মতই ভোগ করছেন। ইতিপূর্বে সকল নিয়োগ হতে নিয়োগ বাণিজ্যের করে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই প্রধান শিক্ষক। একজন অফিস সহকারী নিয়োগকে কেন্দ্র করে সভাপতির সাথে দ্বন্দ্বের জেরে ৮ মাস সকল শিক্ষকদের বেতনভাতা বন্ধ ছিল। তাছাড়াও বিদ্যুৎবিল বকেয়া থাকার কারণে ইতিপূর্বে বিদ্যালয়েরর বিদ্যুৎ সংযোগ ১০মাস বিচ্ছিন্ন ছিল। ২০২২ সালের ১৭ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন ও প্রবেশপত্রে জন্ম তারিখ ও নাম ভুল হয়, যার ফলে অনেক শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তি হতে না পেরে শিক্ষা জীবন শেষ হয়ে গেছে। ২০২৩ সালের এসএসসি অনেক পরীক্ষার্থীর এসব ভুল পরিলক্ষিত হয়েছে ও তা নিয়ে সংশোধন বাণিজ্য চলছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের জাহিদপুর গ্রামের লোকজনের অর্থায়নে ও সহায়তায় জাহিদপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। গ্রামের ছেলে মেয়েদের সুশিক্ষা দানের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ সুনাগরিক হিসেবে গড়িয়া তোলার লক্ষ্যে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকাল থেকে জাহিদপুর গ্রামের মৃত আফরোজ আলীর ছেলে মো. আব্দুল মালিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাৎ, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মতামত বর্হিভূতভাবে একক সিদ্ধান্তে কার্যক্রম পরিচালনাসহ বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়ম করে আসছেন। এনিয়ে তার বিরুদ্ধে স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে একাধিকবার মৌখিক এবং লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।

লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিত ২০২৩সালের ১৩ আগষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ের এক স্মারকে (নং-৫.৪৬.৯০৩০.০০০.০১.০০১.১৯-৯৮৩) তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়। প্রামাণিত হওয়ার পরেও অদৃশ্য কোনো শক্তির কারণে কোনো প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি তার বিরুদ্ধে।

২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মারকে (নং-জাতীঃবিঃ/পরীঃ/সনদ/৪৪৯/২০০৫/৭৩৪৮) তার শিক্ষাগত যোগ্যতার বিএ (পাস) সার্টিফিকেটের তথ্য ভুল প্রমাণিত হয়। তার সার্টিফিকেটের জালিয়াতির প্রমাণিত হওয়ায় বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, সুনামগঞ্জ এ তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ প্রদান করেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকার পর আবারও অদৃশ্য কোন শক্তির তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মালিকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করায় প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালিকের নির্দেশে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে মারপিট ও গুরুতর জখম করে।

এসময় শিক্ষার্থীরা ও পথচারীসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র জুবায়েল(১৫), সপ্তম শ্রেণির তাসলিমা আক্তার লিজা(১৪), মরতুজ আলী(৬৫) কে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় পর পৃথক পৃথক সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ছাতক সেনাবাহিনী ক্যাম্প, থানা বরাবরে একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের দ্রুত পদত্যাগ দাবি করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করা না পর্যন্ত ক্লাস বর্জন ও প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সাধারণ জনতা। এতে বিরাট হুমকির মুখে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা।

এদিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করে বিদ্যালয়ের পাঠদান সচল করার জন্য বুধবার জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বরাবরে লিখিত আবেদন করেন জাহিদপুর, মোহাম্মদপুর, রামপুর, ভাওয়াল, আলমপুর, গোপিনাথপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ও ছাত্র অভিভাবকগণ।

এ ব্যাপারে জাহিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মালিক এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কথা বোঝা যাচ্ছে না বলে কল কেটে দেন। পরে একাধিকবার কল দিলে কল রিসিভ করেননি তিনি।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সমর কুমার পাল অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, , বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ