
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে মুন্সীগঞ্জের আলবার্ট ভিক্টোরিয়া যতীন্দ্র মোহন গভ. গার্লস হাই স্কুলের বিতর্কিত শিক্ষক মনোরঞ্জন ধর বিদ্যালয় ছাড়লেও এখনো আগের মতই বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের হেনস্থা করেই যাচ্ছেন।
তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পাড়-প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনের কাছে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ কথা ছড়ানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে এর প্রতিকার চেয়ে পুনরায় গত ৪ অক্টোবর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, মুন্সীগঞ্জ সেনা ক্যাম্প, মুন্সীগঞ্জ সদর থানা, জেলা শিক্ষা অফিস ও এভিজেএম বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট মনোরঞ্জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে তার দ্রুত বদলির দাবি করেন। এবং অভিযোগপত্র প্রধান উপদেষ্টা বরাবর ডাকযোগে প্রেরণ করেন।
মনোরঞ্জন বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা প্রায় প্রতি বছরই সোচ্চার হয়েছেন। ২০২৩ সালেও প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী ডিসি অফিস ঘেরাও করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে বদলির দাবি করেন।
পার্শ্ববর্তী কে কে গভ. ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা এ বছরের ফেব্রুয়ারিতেও তার বিরুদ্ধে বোর্ড পরীক্ষার প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেয়ার হুমকির প্রতিবাদে লিখিত অভিযোগ দেয়।
মনোরঞ্জন দ্বারা পরিচালিত ‘বিজ্ঞান অনুশীলন কেন্দ্র’ কোচিং এ না পড়লে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেয়া, ফেল করিয়ে দেয়া, শিক্ষার্থীদের কুরুচিপূর্ণ গালি দেয়া, শিক্ষার্থীদের মেসেঞ্জারে পড়তে আসার জন্য হুমকি প্রদান, ছাত্রীদের গায়ে স্পর্শ করাসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
কিন্তু আওয়ামীপন্হী হওয়ায় তিনি প্রতিবারই দলীয় প্রভাব ও সংখ্যালঘু ইস্যু ব্যবহার করে পার পেয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ঠিক আগের দিন মুন্সীগঞ্জে ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, মুন্সীগঞ্জের সদস্যদের ছবি তুলে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে প্রেরণ করেন।
বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ১ সেপ্টেম্বর প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর গণস্বাক্ষর ও তথ্য-প্রমাণ সম্বলিত অভিযোগ জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিল করে মনোরঞ্জনের বদলি দাবি করেন।
৫ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়টিতে তার বিরুদ্ধে শুনানি গ্রহণকালে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে তার বদলি চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা ও সেনা অফিসারদের উপস্থিতিতে তিনি স্বহস্তে বদলির আবেদন লিখে সেনা সহায়তায় বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। প্রধান শিক্ষক ৭ দিনের মধ্যে তার বদলির আশ্বাস দিলেও এক মাস পরেও তার বদলি হয়নি। উল্টো তিনি তদন্তকে অন্য দিকে প্রভাবিত করার জন্য বিদ্যালয়ের নামে পেজ খুলে তার নিজের তৈরিকৃত মিথ্যা সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে বিষয়টিকে শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলির ফলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে বলে চালানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি করে আওয়ামী সরকারের দোসর মুন্সীগঞ্জের কিছু কর্মকর্তা কোন স্বার্থে একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে রক্ষার চেষ্টা করছেন তা জনমনে বিভিন্ন সন্দেহ সৃষ্টি করছে।
মনোরঞ্জন ধর বর্তমানে মাউসির কয়েকজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার মাধ্যমে নিজেকে রক্ষা ও ঘটনা অন্য দিকে ঘুরানোর জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তার দ্রুত বদলি না হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আবারো ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। আড়ালে থেকেও শিক্ষার্থীদের নামে কুৎসা রটনার জন্য তার বিচারের দাবিও জোড়ালো হচ্ছে। ভুক্তভোগী ও আতঙ্কিত কিছু শিক্ষার্থী আইনের আশ্রয় নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অন্যদিকে শহরের বাইরের একটি স্কুলের শিক্ষক মো. ইব্রাহিম শেখ জানিয়েছেন, তার নামে অসত্য ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে মনোরঞ্জন ধর যে সংবাদ প্রকাশ করিয়েছেন তা তার মনগড়া। এবং এতে মো. ইব্রাহীম শেখ এর সুনাম নষ্টের চেষ্টা করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন৷ তিনি প্রয়োজনে আইনি সাহায্য নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন প্রতিবেদককে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষক মনোরঞ্জন ধরের বিরুদ্ধ আনীত অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসন ঘুরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে চূড়ান্ত আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে।