বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

ছেলের প্রচার না চালাতে শাজাহান খানকে চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক : মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য শাজাহান খান তার ছেলে আসিবুর রহমান খানের পক্ষে প্রচারে অংশ নেওয়ার পর তাকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। রোববার বিকালে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মাদারীপুরের নতুন শহরে শাজাহান খানের বাড়িতে ওই চিঠি পাঠানো হয়।তবে বিষয়টি জানাজানি হয় সোমবার রাতে।

মাদারীপুর-২ (রাজৈর-সদর একাংশ) আসনের টানা আটবারের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খানের বড় ছেলে আসিবুর রহমান আসিব খান প্রথমবারের মত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আসিবের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী শাজাহান খানের চাচাত ভাই ও মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান পাভেলুর রহমান শফিক খান।

মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রির্টানিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহম্মেদ আলী বলেন, “শফিক খানের অভিযোগের প্রেক্ষিতেই শাজাহান খানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।তাকে নির্বাচনি কোনো কার্যক্রমে অংশ না নিতে বলা হয়েছে।”

প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল ২২ এপ্রিল। ২৩ এপ্রিল প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর থেকে তারা ভোটের মাঠে প্রচারে রয়েছেন। সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত ছিল প্রার্থীদের প্রচারের শেষ সময়।

দলীয় বিভেদ এড়াতে আওয়ামী লীগ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কোনো প্রার্থী মনোনয়ন বা সমর্থন দিচ্ছে না। পাশাপাশি এমপি-মন্ত্রীদের সন্তান ও স্বজনরা যে নির্বাচনে অংশ না নেন সেজন্যও দলীয়ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশের পর অনেক জায়গায় এমপি-মন্ত্রীর সন্তান ও স্বজনরা নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে গেলেও শাজাহান খানের ছেলে ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন।

ছেলেকে প্রার্থী করে শাজাহান খান দলীয় নির্দেশ অমান্য করেছেন- এমন অভিযোগও করেছেন প্রতিপক্ষের অনেকে। আচরণবিধি ভঙ্গ করে ‘গোপনে ও কৌশলে’ ছেলের পক্ষে প্রচার চালানোর অভিযোগও তোলা হচ্ছে সাবেক এ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। এর মধ্যেই টানা ১০ দিন (২ মে থেকে) শাজাহান খান সংসদীয় আসনে অবস্থান করে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানানো হয়েছে।

নির্বাচন আইন অনুযায়ী, সংসদ সদস্যের নিজের নির্বাচনি এলাকায় থাকতে কোনো বাধা নেই। তবে তিনি কোনো প্রচার চালাতে কিংবা কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না।

প্রতিপক্ষ শাজাহান খানের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগই তুলেছে। প্রচারের ১০ দিনে পাভেলুর রহমান শফিক খান আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে শাজাহান খান ও তার ছেলে আসিবুরের বিরুদ্ধে মোট ২২টি অভিযোগ দিয়েছেন।

অপরদিকে আসিবুর রহমান খান তার প্রতিদ্বন্দ্বী পাভেলুর রহমান শফিক খানের বিরুদ্ধে ১০টি অভিযোগ দিয়েছেন। অর্থাৎ দুপক্ষ এখন পর্যন্ত মোট ৩২টি অভিযোগ দিয়েছেন।

সবশেষ রোববার সংবাদ সম্মেলনে আনারস প্রতীকের প্রার্থী আসিবুর রহমান খান বলেন, পাভেলুর রহমান শফিক খান নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে সরকারি কর্মকর্তাদের কাজে লাগাচ্ছেন। এজন্য ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে ভোট কিনতে টাকা বিলাচ্ছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী শফিক খানের নির্বাচনি প্রচারে অংশ নিচ্ছেন।

তার অভিযোগ, “নির্বাচনের দিন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য নানামুখী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন শফিক খান। বিভিন্ন মানুষের মাঝে টাকা ছড়াচ্ছে, বহিরাগতদের দিয়ে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এর কারণ, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জেনে গেছে, তিনি বিজয়ী হতে পারবেন না।”

অপরদিকে পাভেলুর রহমান শফিক খান বলছেন, “স্থানীয় কর্মসূচির নামে টানা ১০দিন এলাকায় থাকবেন শাজাহান খান। নির্বাচন শেষ হলে ঢাকায় যাবেন। তিনি ছেলের পক্ষে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কাজ করছেন।আচরণবিধি মানছেন না। তার বিরুদ্ধে কমিশনে অভিযোগ দিয়েও সুরাহা হচ্ছে না। আমরা এখন অনেকটা নিরুপায়। তিনি এখন আচরণবিধির তোয়াক্কা না করে এলাকায় মাস্তানি করে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচনে তার টাকার প্রভাবও দেখাচ্ছেন।

১৫টির বেশি চিঠি দেওয়া হয়েছে কমিশনে, যেখানে ২২টির বেশি অভিযোগ করা হয়েছে জানিয়ে শফিক খান বলেন, একটিওর ব্যবস্থা নেয়নি রির্টানিং কর্মকর্তা। নির্বাচন কমিশনের এমন চুপ থাকাটা প্রশ্নবিদ্ধ। শাজাহান খানের লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে নির্বাচনের দিন ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করবে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে। এতে সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এজন্য প্রশাসনের জোড়ালো ভূমিকা কামনা করছি।

অভিযোগ অস্বীকার করে শাজাহান খান বলেন, মাদারীপুরে যখন থাকি, তখন স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে কথাবার্তা বলি। এর বাইরে অন্যকিছু না। যারা অভিযোগ দিচ্ছে, তারা ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য এ কাজ করছে।

১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ২৮৩ দশমিক ১৪ কিলোমিটার আয়তনের সদর উপজেলায় মোট ভোটার ৩ লাখ ২২ হাজার ৪২৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৬ হাজার ও নারী ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪২১ জন। আর ৫ জন রয়েছে হিজড়া ভোটার।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on tumblr
Tumblr
Share on telegram
Telegram

, , বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ