
যায়যায়কাল প্রতিবেদক: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা মো. জোবায়েদ হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার ভাই হত্যা মামলা করেছেন। মাহির রহমান ও বার্জিস শাবনাম বর্ষাকে মুখোমুখি করলে তারা হত্যাকাণ্ডের পুরো ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন বলেছে পুলিশ ।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বংশাল থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। আসামিরা হলেন মাহির রহমান (১৯), বার্জিস শাবনাম বর্ষা (১৮) ও ফারদীন আহম্মেদ আয়লান (২০)।
জোবায়েদ হোসাইন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। যুক্ত ছিলেন ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে। সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সদস্য ছিলেন। গত রোববার পুরান ঢাকার আরমানিটোলার একটি বাসার সিঁড়ি থেকে জোবায়েদের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নুরবক্স লেনের বাসাটিতে টিউশনি করতেন তিনি।
পুলিশ জানায়, প্রেমের দ্বন্দ্ব থেকে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে। বর্ষার সঙ্গে মাহিরের ৯ বছরের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে বর্ষা ও জোবায়েদের সম্পর্ক হয়। এতে মাহির ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। সম্পর্কের টানাপোড়েনের একপর্যায়ে বর্ষা প্রথমে মাহিরকে প্রত্যাখ্যান করলেও পরে আবার যোগাযোগ করে জানান, জোবায়েদকে তার আর ভালো লাগে না। পরে জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বর্ষা ও মাহির।
এক মাস আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা মো. জোবায়েদ হোসেনকে (২৫) হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
জোবায়েদ হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার ভাই মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বংশাল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছেন বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম।
তারা হলেন মাহির রহমান (১৯), বার্জিস শাবনাম বর্ষা (১৮) ও ফারদীন আহম্মেদ আয়লান (২০)।
ব্রিফিংয়ে পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, পড়াতে গিয়ে জোবায়েদের সঙ্গে বর্ষার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে বর্ষার সঙ্গে আগে থেকেই মাহির রহমানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এটা মূলত ত্রিভুজ প্রেমের গল্প।
মাহিরের সঙ্গে বর্ষার দেড় বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে পুলিশের ব্রিফিংয়ে জানানো হয়। এর আগে বংশাল থানার ওসি জানান, তাদের ৯ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
ব্রিফিংয়ে এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, মাহিরকে বর্ষা বলেন যে জোবায়েদকে না সরালে তিনি মাহিরের হতে পারবেন না। এরপর জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। গ্রেপ্তার দুই আসামি মাহির বর্ষাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য জেনেছেন বলে জানায় পুলিশ।
ব্রিফিংয়ে পুলিশ আরও জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের দিন বিকেল চারটায় জোবায়েদ পড়াতে আসবেন এই তথ্য মাহিরকে জানায় বর্ষা। এই তথ্য জানার পর মাহির তার বন্ধু আয়লানকে নিয়ে আগে থেকেই বাসার নিচের গলিতে অবস্থান নেয়। জোবায়েদ বাসার নিচে এসে পৌঁছালে তাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় মাহির বর্ষাকে ছেড়ে দিতে বললে জোবায়েদ অস্বীকৃতি জানায়। একপর্যায়ে মাহির জোবায়েদের গলায় চাকু দিয়ে আঘাত করলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা যান।
পুলিশ কর্মকর্তা মল্লিক আহসান উদ্দিন ব্রিফিংয়ে বলেন, বাসার নিচে ছুরি দিয়ে আঘাতের পর জোবায়েদ বাঁচার জন্য সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠে আসে। বেশ কয়েকটি বাসার দরজায় তিনি নক করেন। কেউ খোলেননি। তৃতীয় তলায় এসে তিনি বর্ষার কাছে বাঁচার আকুতি জানান। তবে বর্ষা তাকে সাহায্য করেননি।
মাহিরের মা ছেলেকে থানায় দিয়েছেন এমন তথ্য ঠিক কিনা প্রশ্নের জবাবে এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, আসামি গ্রেপ্তারের কৌশল হিসেবে তারা মাহিরের পরিবারকে চাপ দেন।
তিনি বলেন, উনারা নিজে থেকেই হস্তান্তর করেছেন বিষয়টি এ রকম নয়। এটা পুলিশের কৌশলের অংশ।
ব্রিফিংয়ে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের মুহাম্মদ তালেবুর রহমান, লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন সামি, অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আমিনুল কবীর তরফদার উপস্থিত ছিলেন।