শুক্রবার, ১৩ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৭শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

জলঢাকায় স্কুলে না গিয়ে শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে ব্যস্ত

মাহমুদ আলহাছান, জলঢাকা(নীলফামারী): জলঢাকা উপজেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ করে দশম শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি মোটামুটি থাকলেও দশম শ্রেণিতে উপস্থিতি খুবই হতাশাব্যাঞ্জক। কারণ অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে জলঢাকায় কোচিং সেন্টারগুলোর অনিয়ম ও দৌরাত্মের চিত্র।

একটি ঐতিহ্যবাহী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নানের কাছে দশম শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি কম থাকার কথা জানতে চাইলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ছাত্রছাত্রীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সত্ত্বেও কোচিং সেন্টারগুলোর কারণে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার খুবই নগন্য।

জলঢাকা থানার পার্শ্ববর্তী একটি কোচিংয়ের ছাত্র রাকিবুল ইসলাম জানান, এই কোচিংয়ে তার ক্লাস শুরু হয় সকাল ৯টায় এবং তা দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চলে।

তাহলে স্কুলে ক্লাস করে কখন জানতে চাইলে তার সাবলীল জবাব, স্কুলে যাওয়াই হয় না।

তার পাশেই আরেকটি কেচিংয়ের ছাত্র রোজনুজ্জামানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সে জানায়, তার কোচিংয়ের সিডিউল দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। স্কুলে ক্লাস করেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কীভাবে সম্ভব? স্কুলে গেলে তো ৪টার আগে ছাড়বে না। তাহলে তো কোচিং করা হবে না।

তার পাশেই আরেকটি কেচিং সেন্টারে দেখা যায়, বেলা ১২টায় ক্লাস শুরু হয়ে ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চলছে। যেখানে মূলতঃ দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রী অর্থাৎ ২০২৫ সালের পরীক্ষার্থীরাই শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। উপজেলা সদরে অবস্থিত একটি স্বনামধন্য বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরেই অবাধে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। সেটাও স্কুল টাইমে।

জলঢাকার কোচিং সেন্টারগুলোর প্রায় প্রত্যেকটির সিডিউল এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সময়সূচি প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় স্কুলগুলোতে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। শিক্ষার মান অবনতি হচ্ছে।

এ বিষয়ে জলঢাকার একটি কেচিং সেন্টারের পরিচালক জনাব সিয়াম (ছদ্মনাম)কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘জলঢাকার প্রায় সব কোচিংয়ের সিডিউল এ রকমই। তাই আমিও এই সিডিউলেই চালাচ্ছি। অন্যরা চেঞ্জ করলে আমিও করবো।’

আমিনুর রহমান নামে একজন অভিভাবক ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জানান, যাদের টাকা-পয়সা আছে তারা তাদের সন্তানকে নামেমাত্র বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে টাকা দিয়ে কোচিং সেন্টারে পড়াচ্ছে। কিন্তু আমাদের মতো দরিদ্রদের পক্ষে তো সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের সন্তানরা স্কুলে না গিয়ে কোচিংয়ে গিয়ে ক্লাস করছে। এর ফলে বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। এর ফলে শিক্ষকরাও ক্লাস করাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

শিক্ষকদের মতে, বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা নিশ্চিত করতে সময়সূচি নিয়ে কোচিং সেন্টারগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম বন্ধে প্রয়েজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *