বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জিআই স্বীকৃতি মিলল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখীর

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: প্রায় দেড় শ বছর আগে ‘ছানামুখী’ নামে এক ধরনের মিষ্টির উৎপত্তি হয়। জনশ্রুতি আছে, ১৮৩৭ থেকে ১৮৫৯ সালের মধ্যে কোনো একসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তৈরি দুই ধরনের মিষ্টি খেয়ে প্রশংসা করেছিলেন ভারতের বড় লার্ট লর্ড ক্যানিং এবং তার স্ত্রী লেডি ক্যানিং। এর মধ্যে লেডি ক্যানিংয়ের নামানুসারে একটির নাম রাখা হয় ‘লেডি কেনি’, আরেকটি ‘ছানামুখী’। মূলত তাদের আপ্যায়নের জন্যই এই দুটি মিষ্টি বানানো হয়।

দুধ, ছানা আর চিনিতে তৈরি ছানামুখীর সুনাম দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বেড়াতে এসে ছানামুখী নিয়ে যাননি এমন লোকের সংখ্যা নেহাত কম। ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই প্রসিদ্ধ মিষ্টি। ছানামুখী জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাজুড়ে চলছে বেশ আলোচনা।

মূলত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই মিষ্টি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ডিপিডিটি কোনো পণ্যের জিআই স্বীকৃতি দেয়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ডিপিডিটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার বিষয়টি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনকে নিশ্চিত করে।

ডিপিডিটিতে ছানামুখী ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) নম্বর ৪১।

কারিগরদের সূত্রে জানা যায়, সাত থেকে আট লিটার দুধের সঙ্গে এক কেজি চিনি দিয়ে তৈরি হয় এক কেজি ছানামুখী। ছানামুখী তৈরির কয়েকটি ধাপ রয়েছে। প্রথমে গাভির দুধ জ্বাল দিতে হবে। এরপর গরম দুধ ঠাণ্ডা করে ছানায় পরিণত করতে হয়।

অতিরিক্ত পানি ঝরে যাবে এমন একটি পরিচ্ছন্ন টুকরিতে ছানা রাখতে হবে। পরে ওই ছানাকে কাপড়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখতে হবে, যাতে সব পানি ঝরে যায়। এভাবে দীর্ঘক্ষণ ঝুলিয়ে রাখলে ছানা শক্ত হয়ে ওঠে। শক্ত ছানাকে ছুরি দিয়ে ছোট ছোট টুকরা করে কাটতে হবে। এরপর চুলায় একটি কড়াই বসিয়ে তাতে পানি, চিনি ও এলাচি দিয়ে ফুটিয়ে শিরা তৈরি করতে হবে। এরপর ছানার টুকরাগুলো চিনির শিরায় ছেড়ে নাড়তে হবে। সব শেষে চিনির শিরা থেকে ছানার টুকরাগুলো তুলে একটি বড় পাত্রে রাখতে হবে। ওই পাত্রকে খোলা জায়গা বা পাখার নিচে রেখে নেড়ে শুকাতে হয়। প্রতি কেজি ছানামুখী এখন বিক্রি হয় ৭০০ টাকায়।

২৪ সেপ্টেম্বর ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান স্বাক্ষরিত জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো জিআই সনদে উল্লেখ রয়েছে, ভৌগোলিক নির্দেশক নিবন্ধন বইয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের নামে ২৯ ও ৩০ শ্রেণিতে জিআই-৭৫ নম্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি পণ্যের জন্য চলতি বছরের ৮ এপ্রিল থেকে নিবন্ধিত হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তত্কালীন জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম প্রথমে ও পরে সদ্যোবিদায়ি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান গত ২ এপ্রিল ‘ছানামুখী’ জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ১০ পৃষ্ঠার একটি আবেদন পাঠান। সেখানে ছানামুখী মিষ্টান্নের বৈশিষ্ট্য, ভৌগোলিক নাম, ছানামুখীর বর্ণনা, উৎপাদনের পদ্ধতিসহ নানা বিষয় বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেন।

আদর্শ মাতৃভাণ্ডারের দুলাল চন্দ্র মোদক বলেন, ‘ছানামুখী জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়াটা খুবই সম্মানজনক। এ জন্য অনেক দিন ধরেই চেষ্টা করা হচ্ছিল। ছানামুখীর কদর দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রয়েছে।’

ভোলাগিরি মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী নান্টু মোদক জানান, ছানামুখী হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রসিদ্ধ মিষ্টি। এটি বেশ সুস্বাদু। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও এর অনেক চাহিদা রয়েছে। দিনকে দিন ছানামুখীর চাহিদা বেড়েই চলছে বলে জানান তিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ছানামুখী জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকারিভাবে ছানামুখীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্র্যান্ডিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। জেলার ব্র্যান্ডবুকেও একে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on tumblr
Tumblr
Share on telegram
Telegram

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ