যায়যায়কাল প্রতিবেদক: আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন ঠেকাতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান অস্থিরতা নিরসনে আগামী এক সপ্তাহ ‘জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ’ পালন করবে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব ছাত্রসংগঠন।
রাজধানীর বাংলামোটরে সোমবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত অন্যান্য সব ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে জরুরি বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দেন আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সবাই একসঙ্গে এসেছিল বলেই সামগ্রিকভাবে আমরা ফ্যাসিস্ট ও খুনি শেখ হাসিনাকে আমরা স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ থেকে উৎখাত করতে পেরেছি। এর পরে আমাদের প্রত্যাশিত বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে। শুরু হওয়ার পর থেকেই আমরা দেখছি যে, ফ্যাসিবাদীদের নানা ধরনের ষড়যন্ত্র। তারা বিদেশে বসেও বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে এবং বিভিন্ন ফরমেটে তারা আবার ফিরে আসতে চাচ্ছে। আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি, জিরো টলারেন্স টু আওয়ামী লীগ।’
হাসনাত বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী যে রাজনৈতিক শক্তিগুলো ছিল ৫ আগস্টের আগে, সেই প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের প্রশ্নে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করবে। কোনো ফরমেটেই আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। তারা যত চেষ্টাই করুক না কেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশে বিভিন্ন সময় যে আন্দোলনগুলো দানা বাঁধছে, প্রত্যেক দাবি নিয়ে রাস্তায় আসছে। আমরা দেখছি, সেখানে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ব্যাপক অর্থায়ন রয়েছে। গত ১৬ বছরের দুঃশাসনে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নাজুক অবস্থায় নিয়ে গিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করেছে। ব্যাংকগুলোকে খালি করে ফেলা হয়েছে। দুই লাখ কোটি টাকার বেশি পাচার করেছে।’
‘আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি, গত তিনটি নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়েছে আওয়ামী লীগ থেকে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। আইনগতভাবে এটি যদি করা না যায়, তাহলে বিদেশে বসে বাংলাদেশকে পিছিয়ে নেওয়ার জন্য যে ষড়যন্ত্র করছে, সেই ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকবে,’ যোগ করেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান হাসনাত।
তিনি আরও বলেন, ‘যে প্রশাসন ফ্যাসিবাদকে হৃষ্টপুষ্ট করেছে, বাংলাদেশের মানুষের অধিকার হরণ করেছে, সরকার যদি ভেবে থাকে এই একই প্রশাসন দিয়ে তারা একটি প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ গঠন করবে, তাহলে তারা ভুল করছে। আওয়ামী রাজনৈতিক রেকোমেনডেশনে যাদের নিয়োগ হয়েছে, তাদের বাদ দিয়ে প্রশাসন পুনর্গঠন করতে হবে। তা না হলে সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের জটিলতা অব্যাহত থাকবে।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অস্থিরতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আজকেও আপনারা দেখেছেন মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে একজন শিক্ষার্থীকে এমন কেউ পেটাচ্ছে, যাকে কোনোভাবেই ছাত্র মনে হয় না। অর্থাৎ ছাত্র পরিচয়ে প্রতিটি আন্দোলনে…অটোরিকশাচালকদের আন্দোলনে আমরা ছাত্রলীগ-যুবলীগের অংশগ্রহণ দেখেছি। তারা উপলক্ষ খোঁজে। সেই জায়গা থেকে সব ছাত্রসমাজ একমত হয়েছি, আগামী এক সপ্তাহ আমরা জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ পালন করব। এই এক সপ্তাহে ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগঠনগুলো বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে, একতা ও সংহতির বার্তা পৌঁছে দেবে এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন ঠেকাতে আমাদের সংহতির কোনো বিকল্প নেই—সেই বার্তা পৌঁছে দেবে। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক মেলবন্ধন দৃঢ় করার জন্য আমাদের এই কর্মসূচি।’