
জয়পুরহাট প্রতিনিধি: জি-থ্রি জাতের রুই মাছ চাষে অভাবনীয় সফলতা পেয়েছেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার তাজুর মোড় এলাকার খামারি এনামুল হক। এক সময় সাধারণ জাতের রুই চাষ করে লোকসানে পড়লেও এখন তিনি বলছেন, “জি-থ্রি রুই অনেক দ্রুত বড় হয়। আগে যে রেনুতে তিন-চার মাস লাগত, এখন মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ দিনেই বিক্রির উপযোগী হয়ে যায়। ১ কেজি রেনু পাঁচ হাজার টাকায় কিনে এখন তা ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারছি।”
প্রায় ছয় মাস আগে এনামুল হক ও তাঁর স্ত্রী বেবি আক্তার, জাকস ফাউন্ডেশন ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শে এই জাতের রুই চাষ শুরু করেন। বর্তমানে চারটি পুকুরে চলছে জি-থ্রি রুইয়ের বাণিজ্যিক উৎপাদন। তাঁদের সাফল্য দেখে এখন আশপাশের অনেক খামারি এই চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
চাষিরা জানাচ্ছেন, যত্নসহকারে পরিচর্যা করলে এক বিঘা পুকুরে মাত্র ১ কেজি রেনু থেকেই ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ৬০–৭০ কেজি পোনা উৎপাদন সম্ভব।
জয়পুরহাট জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, বর্তমানে জেলার প্রায় ২০০ জন খামারি জি-থ্রি রুই চাষে যুক্ত রয়েছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলাতেই প্রায় ৪০ জন নিয়মিত পোনা উৎপাদন করছেন। সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, “সদরের তাজুর মোড় এলাকার এনামুল হকের পুকুরে উৎপাদিত পোনা জেলার বিভিন্ন চাষিদের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে। সাধারণ রুইয়ের তুলনায় জি-থ্রি রুইয়ের বৃদ্ধি হার ২৫–৩০ শতাংশ বেশি হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন খামারিরা।”
এদিকে, ধলাহার থেকে মাছের পোনা কিনতে আসা এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, “এখান থেকে পোনা নিয়ে গেলে ভালো লাভ করতে পারি। কারণ বড় খামারিদের কাছে এই জাতের পোনার চাহিদা অনেক বেশি। দ্রুত বড় হয় বলে বাজারে এর কদরও বেশি।”
পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও জাকস ফাউন্ডেশনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় খামারিদের মাঝে উন্নত জাতের রেনু বিতরণ করা হচ্ছে।
জাকস ফাউন্ডেশনের আরএমটিপি প্রকল্পের ভ্যালু চেইন ফ্যাসিলিটেটর আরিফুল ইসলাম বলেন, “জি-থ্রি রুই শুধু দ্রুত বড় হয় না, স্বাদেও উন্নত। নদীর স্বাদের কারণে বাজারে এর চাহিদা বেশি এবং কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারি প্রশিক্ষণ, উন্নত জাতের পোনা সরবরাহ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় সহায়তা পেলে জয়পুরহাটে মাছ উৎপাদনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।”
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, “জি-থ্রি রুই চাষ সময়োপযোগী ও লাভজনক উদ্যোগ। এটি স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান বাড়াবে এবং পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে।”