
ক্রীড়া ডেস্ক: কয়েকদিন আগে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শেষে লাল বলে জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব ছাড়বেন নাজমুল হোসেন শান্ত। গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর শান্ত জানিয়েছিলেন, আলোচনাটা আলোচনাতেই রাখতে চান তিনি। সঙ্গে এটাও জানিয়েছিলেন, সিরিজের মাঝপথে এ ধরনের আলোচনা হওয়াই উচিত নয়।
কিন্তু টেস্ট সিরিজ শেষ হতে সেই গুঞ্জনই বাস্তবে পরিণত হয়েছে। কলম্বোতে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইনিংস ও ৭৮ রানের ব্যবধানে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে টেস্টের অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন শান্ত।
সংবাদ সম্মেলনে শান্ত বলেছেন, ‘আমার একটা ঘোষণা ছিল। আমি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। আমি টেস্ট সংস্করণে আর এই দায়িত্ব পালন করতে চাই না। আমি সবাইকে পরিস্কারভাবে বলতে চাই, এটা ব্যক্তিগত কোনো কিছু নয়। পুরোপুরি দলের ভালোর জন্য আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আমি মনে করি এটাতে দলের ভালো কিছুই হবে।’
শান্ত যোগ করেন, ‘এই ড্রেসিংরুমে গত কয়েক বছর ধরে, লম্বা সময় ধরে আমার থাকার সুযোগ হয়েছে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত যে তিনজন অধিনায়ক দলের জন্য সমস্যা হতে পারে। দলের ভালোর জন্য এখান থেকে সরে আসছি। যদি ক্রিকেট বোর্ড মনে করে যে, তিনটা অধিনায়কই রাখবে, এটা তাদের সিদ্ধান্ত।’
ব্যক্তিগত কারণে নয়, বরং দলের ভালোর জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শান্ত। ২৬ বছর বয়সী এ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের ভাষায়, ‘আমি আশা করব, কেউ যেন এরকম না মনে করে যে আমি ব্যক্তিগত কোনো কারণে বা রাগ থেকে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি। এটা আমি নিশ্চিত করলাম এটা দলের ভালোর জন্য, এখানে ব্যক্তিগত কিছু নেই।’
এর আগে গত বছরের বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিন সংস্করণের নেতৃত্ব পান শান্ত। কিন্তু কয়েকমাস যেতেই গত অক্টোবরে নেতৃত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন তিনি। সে সময় জানিয়েছিলেন, ব্যাটিংয়ে মনোযোগ বাড়াতে অধিনায়কত্ব চালিয়ে যেতে চান না।
তৎকালীন বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তীতে শুধু টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব ছাড়েন শান্ত। ওয়ানডে ও টেস্টের দায়িত্ব চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু গত ১২ জুন হঠাৎ করে এক জরুরি বোর্ড সভায় শান্তকে ওয়ানডের অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে মিরাজকে নতুন অধিনায়ক করে বিসিবি।
সপ্তাহখানেক আগে ক্রিকবাজের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই দিনই কোচ ফিল সিমন্সের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের স্কোয়াড নিয়ে আলোচনায় বসার কথা ছিল শান্তর। কিন্তু তার আগেই বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন শান্তকে ফোনে জানান, তিনি আর অধিনায়ক নয়।
এমন পরিস্থিতিতে সিমন্সের সঙ্গে আলোচনা করেই চলে যান। এটা খুব বিব্রতকর ছিল শান্তর জন্য- এমনটাই বলা হয়েছে ক্রিকবাজের প্রতিবেদনে। সূত্রের বরাতে ক্রিকবাজ জানিয়েছে, এ সিদ্ধান্তে ভীষণ অবাক হয়েছেন শান্ত। সে কারণেই টেস্টের অধিনায়কত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন বলে জানায় সংবাদমাধ্যমটি।
কিন্তু কলম্বো টেস্টের আগে গত ২৩ জুন সংবাদ সম্মেলনে শান্ত বলেন, ‘(সিরিজের মাঝখানে এই ধরনের আলোচনা করা) কঠিন। এটা আসলে এরকম হওয়া উচিত না। সত্যি বলতে এই ধরনের আলোচনাই হওয়া উচিত না। শুধু টেস্ট ম্যাচের সময় না, কোনো ফরম্যাটের সময়ই এটা হওয়া উচিত না। আমি বলব যে এই ধরনের আলোচনা অন্তত সাত-আট দিন আগে থেকেই না হওয়া ভালো। বা তারও আগে। যত আগেই কমপ্লিট হয়ে যাবে ততই ভালো।’
যে আলোচনা হওয়া উচিত না বলে মনে করেছিলেন, কলম্বো টেস্ট শেষ হতেই সেটার পূর্ণতা দিলেন শান্ত।