মঙ্গলবার, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেড়েছে সীতাকুণ্ডে

মো. রমিজ আলী, সীতাকুণ্ড: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ১৭ বছরের সামিয়া। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ ৬ দিন যাবত কোনো রকম চলাফেরা করতে পারছিল না। বার বার পড়ে যাচ্ছিল।

স্বাভাবিক সময়ের জ্বরের মতো না এই জ্বর। প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়েছে সে। তিন-চার ঘণ্টার ব্যবধানে তাপমাত্রা দাঁড়ায় ১০৩-১০৫ ডিগ্রিতে। চিকিৎসক কয়েক ধরনের ওষুধ দিলেও কমছিল না জ্বর। শেষ পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক দেন।

প্রায় ৮ দিন পর একটু সুস্থ হন সামিয়া। কিন্তু শরীরের ব্যথা যায় না।

এই ধরনের রোগী প্রতিদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভিড় করছেন জ্বরে আক্রান্ত শত শত মানুষ।

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এক-একটি পরিবারে একাধিক সদস্য একসঙ্গে আক্রান্ত হচ্ছেন জ্বর ও শরীর ব্যথায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,প্রতিদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ অসংখ্য রোগী জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন। বহির্বিভাগে দেখা গেছে লম্বা লাইন। রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত বলে সন্দেহ করছেন চিকিৎসকরা।

জ্বরের প্রকোপ বাড়লেও সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

তাদের অভিযোগ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মশক নিধনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। মাঝে মাঝে লোক দেখানো ফগিং করলেও তা খুবই সীমিত এবং এলাকা নির্দিষ্ট। বহু এলাকায় বছরের পর বছর কোনো ধরনের স্প্রে কার্যক্রম চালানো হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা জয়নুল আবেদীন বলেন, দিনের বেলাতেও মশার কামড়ে টেকা যায় না। রাতে তো ঘুমাতেই পারি না। বাচ্চাদের জন্য খুব চিন্তায় আছি। অথচ প্রশাসনের তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই।

১৭ বছর বয়সি সামিয়া অভিভাবক জানান, টানা ৬-৮ দিন ১০৩-১০৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় জ্বরে ভুগেছে সে। অ্যান্টিবায়োটিকের পর জ্বর কিছুটা কমলেও শরীরের ব্যথা ও দুর্বলতা থেকে যায়। শুধু সামিয়া নয়, এরকম অসুস্থ হয়ে পড়েছে বহু মানুষ।

বিআইটিআইডি হাসপাতালেও প্রতিদিন অসংখ্য রোগী ভর্তি হচ্ছেন। অনেকে জানাচ্ছেন, ওষুধ সত্ত্বেও জ্বর ও ব্যথা সহজে ছাড়ছে না। ডেঙ্গু পরীক্ষায় নেগেটিভ এলেও তাদের উপসর্গ চিকুনগুনিয়ার মতো।

সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলতাফ হোসেন যায়যায়কালকে জানান, জ্বর আক্রান্ত হয়েছেন এমন কিছু রোগী তাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন জয়েন্টে মাত্রাতিরিক্ত ব্যথা, ফুলে গেছে। জ্বর কমলেও তাদের ফোলা এবং ব্যথা কমানো যাচ্ছে না। এ ধরনের রোগীকে তারা চিকনগুনিয়া হিসেবে ধরে চিকিৎসা দিচ্ছেন।

ধারণা করছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে মৌসুমি জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্তের সংখ্যা সীতাকুণ্ডের ঘরে ঘরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন স্থানীয় পল্লি চিকিৎসকের পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিড় করছেন আক্রান্ত রোগীরা।

তবে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর অধিকাংশই জ্বর, সর্দি, কাশি ও শরীর ব্যথায় আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন তিনি।

এছাড়া শহরের পাশাপাশি জ্বরের প্রকোপ গ্রামেও। অনেকের তীব্র জ্বর, শরীর ব্যথা, দুর্বলতা। এ পরিস্থিতিতে মশা নিধন ও চারপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে।

এদিকে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বেডে অসংখ্য রোগী ভর্তি । সবাই তিন থেকে ৬ দিন পর্যন্ত জ্বরে আক্রান্ত। তারা ওষুধ কিনে খেলেও জ্বর ও শরীরের ব্যথা-বেদনা সহজে ছাড়ছে না। এর মধ্যে পরীক্ষায় কারও কারও ডেঙ্গু পজিটিভ হলেও বাকিরা লক্ষণ দেখে অনুমাননির্ভর ওষুধ খাচ্ছেন চিকনগুনিয়া কিংবা ভাইরাস জ্বর ভেবে। রোগীরা জানিয়েছেন জ্বর যখন আসে তখন তা ১০৬ ডিগ্রিতে গিয়ে পৌঁছায়। তার সঙ্গে শরীরে অবর্ণনীয় ব্যথা-বেদনা।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) অধ্যাপক মো. মামুনুর রশিদ জানান, ‘আমরা হাসপাতালে আলাদা আলাদা চিকিৎসা টিম গঠন করেছি। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, কোভিড এবং নরমাল জ্বর। এবার এমন কিছু রোগী তাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, যাদের জ্বর আছে।’

পাশাপাশি বিভিন্ন জয়েন্টে মাত্রাতিরিক্ত ব্যথায় ফুলে গেছে। জ্বর কমলেও তাদের ফোলা এবং ব্যথা কমানো যাচ্ছে না। এ ধরনের রোগীকে তারা চিকনগুনিয়া হিসেবে ধরে চিকিৎসা দিচ্ছেন। ডেঙ্গু নেগেটিভ হলেও চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ থাকা রোগীদেরকে সাসপেক্টেড চিকুনগুনিয়া রোগী হিসেবে ধরে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ