
মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী : নীলফামারীর ডোমারে গ্রাম পুলিশ নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন তর্জনী রানী নামে এক চাকরিপ্রত্যাশী। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েও আবেদন করেছেন তিনি।
তর্জনী রানী ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মৃত হরি প্রাসাদ রায়ের মেয়ে। হরি প্রাসাদ রায় ওই ওয়ার্ডের মহল্লাদার (গ্রাম পুলিশ) ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ায় ওই ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশের পদটি শূন্য হয়।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, সোনারায় ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশের পদটি শূন্য হওয়ায় ডোমার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় গ্রাম পুলিশ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত ৪ মে উপজেলা পরিষদ হল রুমে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তর্জনী রানীসহ ৪ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। সেদিনই বাছাই শেষে ১ জনকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। তবে এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি। নারী ও পোষ্য কোটায় আবেদন করলেও অজ্ঞাত কারণে তাকে নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। কোটা পদ্ধতি অনুসরণ না করায় গত ৪ মে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন তর্জনী রানী নামে ওই চাকরিপ্রত্যাশী।
তর্জনী রানী বলেন, গ্রাম পুলিশ নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। আমি লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার পরেও আমাকে ফেল দেখানো হয়েছে। আমাকে পোষ্য কোটায় না নিয়ে সাধারণ কোটায় একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নিয়োগে স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে অজ্ঞাত কারণে তড়িঘড়ি করে রাতেই ফলাফল প্রকাশ করে এবং নিয়োগে অর্থ বাণিজ্য হয়েছে বলে সর্বত্র আলোচনা চলছে।
তর্জনী রানী আরো বলেন, আমার বাবা গ্রাম পুলিশে চাকরি করত। গত ২ বছর আগে আমার বাবা মারা গেছে। আমাদের অসহায় পরিবার দেখার মতো কেউ নেই। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। আমার দাদু আমার বাবা গ্রাম পুলিশে চাকরি করত। সেই হিসেবে আমার অসহায় পরিবারে আমি পোষ্য কোটায় চাকরিটা পাই।
তর্জনী রানীর মা স্বপ্না রানী রায় বলেন, আমার স্বামী মৃত্যুর পর ছেলে মেয়েদের নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছি। গ্রাম পুলিশে চাকরিরত অবস্থায় তিনি মারা যান। পরবর্তীতে আমি চেয়ারম্যানের কাছে ছেলের চাকরি জন্য গেলে ছেলের বয়স কম থাকায় মেয়েকে দিয়ে আবেদন করতে বলেন। আবেদনের পর পরীক্ষা দিয়েছে মেয়েটি। কিন্তু কোন কারনে এরা আমার মেয়েকে পরীক্ষায় পাশ করায়নি। সে সময় চেয়ারম্যান চাকরির জন্য ৬ লক্ষ টাকা দাবি করলে আমি এক লক্ষ টাকা দিতে রাজি হই। পরে শুনি আমাদের প্রতিবেশী ছয় লক্ষ টাকা দিয়ে চাকরি নিছে। তাই আমার মেয়ের চাকরিটা হয়নি।
গ্রাম পুলিশ সংক্রান্ত বিধিমালায় চাকরিতে প্রবেশে কোটা পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে পরীক্ষার মেধাক্রম, শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতার বিবরণীসহ সরকার কর্তৃক সময়, জারিকৃত কোটা পদ্ধতি সম্পর্কিত নির্দেশাবলি অনুসরণপূর্বক বাছাই কমিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি তালিকা সুপারিশ করবে। কিন্তু এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি।
সোনারায় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম ফিরোজ চৌধুরী বলেন, সোনারায় ইউনিয়নে দুইজন গ্রাম পুলিশ নিয়োগ হয়। এতে ৮ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী তর্জনী রানী লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। পরবর্তীতে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সংক্ষুব্ধ হয়ে অভিযোগ দায়ের করেছে। এছাড়াও নিয়োগে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, নিয়োগ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সদস্য সচিব থানার তদন্ত কর্মকর্তা। নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ইউএনও, সদস্য সচিব ও উপজেলা আনসার কর্মকর্তা উপস্থিত থেকে স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন করেছেন। সে ক্ষেত্রে এখানে অনিয়ম করার সুযোগ নেই। তর্জনীর বাবা একজন গ্রাম পুলিশ ছিলেন, কিন্তু তারা নিয়োগ পরীক্ষার আবেদনে পোষ্য কোটার কোন প্রত্যায়ন দেয়নি।
ডোমার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল আলম বলেন, সম্পূর্ণ বিধিমোতাবেক উপযুক্ত প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়নি। অভিযোগকারী সংক্ষুব্ধ হয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।