সাইফুল ইসলাম, (নীলফামারী) : অতিরিক্ত হারে রাসায়নিক সারের প্রয়োগ এক দিকে যেমন ফসলের উৎপাদন বাড়িয়ে বিপুল জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাচ্ছে, অপর দিকে ডেকে আনছে পরিবেশ এবং মাটির অভিশাপ। শুধুমাত্র মাটির অস্বাস্থ্যই নয়, পরিবেশ দূষণেরও কারণ অত্যাধিক রাসায়নিক সারের প্রয়োগ। কৃত্রিম সারের অপরিকল্পিত ব্যবহারে মাটির উর্বরতা শক্তি কম হওয়া, কৃষি উৎপাদনে অধিক অর্থ ব্যয় রোধ ও মাটির গুণগত মান ঠিক রাখতে নীলফামারীর ডোমারে ভিত্তি বীজ আলু খামারে (বিএডিসি) ব্যাপক হারে ধইঞ্চা চাষ করা হয়েছে। এ বছর ২০০ একর জমিতে ধইঞ্চা চাষ করা হয়।
খামার সুত্রে জানা যায়, ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদনের পর পরিত্যক্ত জমিতে সবুজ সার হিসেবে ধইঞ্চা রোপন করা হয়। ধইঞ্চা লাগালে জমির উর্বরতা বাড়ে, পাশাপাশি পশুখাদ্য হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। তবে জমির উর্বরতা বাড়ানোর জন্য ধইঞ্চা ঘাস জন্মানোর ৫০ থেকে ৫৫ দিন বয়সেই চাষ দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হয়। এর ফলে প্রতি হেক্টরে ২৫ থেকে ৩০ টন সবুজ (জৈব) সার তৈরি হয় এবং ১০০ থেকে ১৫০ কেজি নাইট্রোজেন সরবরাহ করে। যা ২২০ থেকে ২৬০ কেজি ইউরিয়া সারের সমান।
মাটিকে উৎপাদনক্ষম রাখতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি পেয়েছে।অপরিকল্পিত রাসায়নিক সারের ব্যবহারের ফলে মাটির স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে। বিপন্ন হয়ে পড়ছে জীববৈচিত্র। দেশের ভৌগলিক অবস্থানের তুলনায় অত্যাধিক মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে ভূমিই মূল ভরসা। সেজন্য জমির উর্বরা শক্তি অক্ষুন্ন রাখতেই কৃষি বিভাগকে নিতে হচ্ছে নতুন নতুন পরিকল্পনা। এরই আলোকে করা হচ্ছে ধইঞ্চার চাষ। ধইঞ্চা মাটির উর্বরতা ও ভৌত গুণাবলির উন্নতি সাধন করে। এটির মূল মাটির গভীরে যাওয়ায় পুষ্টি শোষন করে মাটির উপরিভাগে আনে। মাটিতে গাছের পুষ্টি উপাদানকে সংরক্ষণ করে। একই সঙ্গে জমির আদ্রতা ও জোঁ অবস্থা সঠিক রাখে। এটেল মাটিকে নরম করে এবং বেলে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ ক্ষয়রোধ করে।
বিএডিসির সহকারী পরিচালক সুব্রত মজুমদার বলেন, চলতি মৌসুমে ২শ একর জমিতে ধইঞ্চা চাষ করা হয়েছে। হালচাষ ও বীজ ছাড়া বাড়তি কোনো খরচ নেই। এতে একদিকে জমিতে সার ব্যবহার কমছে। আরেকদিকে সার কম ব্যবহারে ধৈঞ্চা চাষে সরকারের ফার্মে লাভ হচ্ছে। তিনি বলেন, খাদ্যশষ্য গাছের জীবনচক্র সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে ১৭টি খাদ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব খাদ্য উপাদান বাতাস ও মাটি থেকে সংগ্রহ করে পাতা তৈরি করে ধইঞ্চা গাছ। প্রকৃতপক্ষে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে এই উদ্যোগের কথা জানান তিনি।
ডোমার ভিত্তি বীজআলু উৎপাদন খামারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু তালেব মিঞা বলেন, বীজ আলু উত্তোলনের পরে প্রায় ২শ একর জমিতে সবুজ সার ধইঞ্চা চাষ করা হয়েছে। মাটির জো নির্ণয় করে মাটির গঠন ও নমনীয়তাকে উন্নত করে ফলে মাটির জলধারণ ও পুষ্টিধারণ ক্ষমতা বাড়ে এবং বাতাস চলাচল সহজ হয়। এতে জমির উর্বরতা বাড়ে এবং রোগবালাই কমে। সবুজ সার জৈব পদার্থ যোগ করে মাটিকে উর্বর করে এবং মাটির ভৌত গুণাবলির উন্নতি সাধন করে। তিনি আরও বলেন, সবুজ সার ব্যবহারে মাটির উপকারী জীবাণুর সক্রিয়তা বাড়ে এবং পুষ্টি মৌলের অপচয় কমে। উপকারী জীবাণু ও অণুজীবের সক্রিয়তার ফলে সবুজ সার মাটির গভীর স্তরের পুষ্টি কণাকে উপরের স্তরে এনে ফসলের জোগান বাড়ায়। সবুজ সার জমি ঢেকে রাখায় ক্ষয় রোধ হয়, মাটির রস সংরক্ষিত থাকে, আগাছার উপদ্রব হয় না। সবুজ সার ব্যবহারে ফসলে রোগ-পোকার আক্রমণ কম হয়। অম্ল মাটির অম্লত্ব কমাতে সবুজ সারের ব্যবহার যথেষ্ট সহায়ক ভুমিকা রাখে।
উল্লেখ্য, ১৯৫৭-৫৮ সালে সরকারিভাবে ডোমার খামারটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তৎকালীন কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে খামারের কার্যক্রম শুরু হয়। বীজআলু উৎপাদনে অধিক উপযোগী মনে করে ১৯৮৯-৯০ সনে খামারটি আলুবীজ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হয়।