নিজস্ব প্রতিবেদক: বরেণ্য অর্থনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব, শিক্ষাবিদ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কৃতিসন্তান ড. আকবর আলি খানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে ঢাকায় বসবাসরত ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীদের প্রাণের সংগঠন ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতি, ঢাকা’।
আজ শুক্রবার (০৯ সেপ্টেম্বর ) সংগঠনটির পক্ষে পাঠানো শোকবার্তায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতি, ঢাকা-এর সভাপতি, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি এবং সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো. খলিলুর রহমান মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
জেলা সমিতির শোকবার্তায় উল্লেখ করা হয়, বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান ছিলেন স্পষ্টভাষী ও নির্ভীক বুদ্ধিজীবী। তিনি মানুষের নাগরিক অধিকারের পক্ষে সবসময় উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। সত্য কথা অপ্রিয় হলেও সেটি অকপটে বলার সৎসাহস তাঁর ছিলো। তাঁর চিন্তা ও লেখনিতে অর্থনীতি, ইতিহাস, সমাজ ও সাহিত্য নিয়ে ছিল গভীর অন্তর্দৃষ্টি। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাঁর মৃত্যুতে দেশের এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
শোকবার্তায় আরও বলা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতি, ঢাকা-এর সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কমিটির উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর একজন প্রকৃত বন্ধু। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অগ্রযাত্রায় তিনি সবসময় কাজ করে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর যে ক্ষতি হলো তা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। আমরা এই কর্মবীরের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনার পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
উল্লেখ্য, ড. আকবর আলি খান ১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করায় পাকিস্তানের সামরিক আদালত তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন ইতিহাস, কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতি। পিএইচডি গবেষণাও অর্থনীতিতে। আমলা হিসেবে পেশাজীবনের প্রধান ধারার পাশাপাশি চলেছে শিক্ষকতাও। অবসর নিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে। এরপর দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হয়েছিলেন, দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতার মুখে পদত্যাগ করেন। অবসরের পর তাঁর আবির্ভাব ঘটে পূর্ণকালীন লেখক হিসেবে। অর্থনীতি, ইতিহাস, সমাজবিদ্যা, সাহিত্য—বিচিত্র বিষয়ে তাঁর গবেষণামূলক বই পাঠকের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়।
২০১৯ সালের ৭ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতি, ঢাকা-এর পক্ষ থেকে ড. আকবর আলি খানকে ‘গুণীজন সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতি, ঢাকা-এর সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।
আকবর আলি খানের সর্বশেষ আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘পুরানো সেই দিনের কথা’। এই গ্রন্থে একজন বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্বের জীবনের উন্মেষ ও বিকাশের কাহিনি উঠে এসেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের জলাভূমিতে লালিত সাদাসিধে বালকটি ছিলেন কল্পনাবিলাসী ও অন্তমুর্খী। মুখচোরা বালকটি মাঠপর্যায়ের প্রশাসক হন। দায়িত্ব নেন আইনশৃঙ্খলা, ভূমি প্রশাসন, উন্নয়ন প্রশাসন, নির্বাচন, এমনকি চা-বাগানের মতো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার।
যায়যায়কাল/০৯সেপ্টেম্বর২০২২/কেএম