বুধবার, ২২শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,৬ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

ঢাবিতে যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শনী, ক্ষোভের মুখে সরালো শিবির

যায়যায়কাল প্রতিবেদক: বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের ক্ষোভের মুখে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রদর্শনীতে থাকা একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদের ছবি সরিয়ে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে এ ছবি সরানো হয়।

জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ‘৩৬ জুলাই: আমরা থামব না’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি আয়োজন করে।

সেই আয়োজনে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদের ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভ তৈরি হয়।

এদিকে রাত সাড়ে ৯টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত টিএসসিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেখানে বামপন্থী সংগঠন ও শিবিরের সমর্থকেরা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিচ্ছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আমরা ছাত্রশিবিরকে বলি যে ছবিগুলো সরাতে হবে। তারা ছবি সরিয়ে নিতে সম্মতি দেয়। পরে আমাদের সহকারী প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল টিমের সহায়তায় ছবিগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়।’

ছবি সরিয়ে নেওয়ার পর ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি এস এম ফরহাদ ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আমাদের তিন দিনব্যাপী আয়োজনের ফটোফ্রেমগুলোর একটা অংশ নিয়ে কুতর্ক এবং মব সৃষ্টি করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট। আমাদের জাতীয় ইতিহাসে একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ গৌরবজনক অধ্যায়। বাকশাল কায়েম করে মুক্তিযুদ্ধকে প্রথমবারের মতো প্রশ্নবিদ্ধ করেছে শাহবাগের পূর্বসূরিরা। দ্বিতীয় দফায় ২০১৩ সালে শাহবাগ কায়েম করে আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদ বানায় এই শাহবাগ। শাহবাগ ও বাকশালের অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান জারি থাকবে।

‘হাসিনা গত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুমসহ যত অপরাধ করেছে, তার প্রতিটিকেই আমরা উপস্থাপন করেছি। যেমন শাপলা হত্যাকাণ্ড, সেনা অফিসার হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি। একই সঙ্গে শাহবাগের মবতান্ত্রিক ট্রাইব্যুনাল নাটকের মাধ্যমে বিচারিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। ফ্রেমের ছবিগুলোতে যেসব ব্যক্তিবর্গের ছবি ছিল, তারা বিচারিক হত্যাকাণ্ডের শিকার।’

বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপেই গুম, কেলেঙ্কারি, মিথ্যা সাক্ষ্য, আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও সুষ্ঠু বিচারের তোয়াক্কা না করেই ফ্যাসিবাদী কায়দায় রায় প্রদান ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন এই শিবির নেতা।

এদিকে প্রদর্শনীতে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি রাখার বিষয়টিকে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিকে বিতর্কিত করে একাত্তরের মুখোমুখি দাঁড় করানোর এক ঘৃণ্য চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা। গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আবদুল কাদের মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে শিবির একাত্তরকে মুছে দেওয়ার হীন চেষ্টা চালাচ্ছে। আর বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন শিবিরের কর্মসূচিতে যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শন করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।

এদিকে টিএসসি প্রাঙ্গণে স্বীকৃত রাজাকারদের ছবি প্রদর্শন এবং তাদের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছবি প্রদর্শন করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রদল।

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল বলেন, টিএসসিতে রাজাকারদের ছবি প্রদর্শনীর মাধ্যমে জুলাইকে একাত্তরের মুখোমুখি দাঁড় করানোর শিবিরের প্রজেক্টের বিরুদ্ধে এই ক্যাম্পাসের মুক্তিযুদ্ধপন্থী সব শিক্ষার্থী সরব আছেন।

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই বাংলাদেশের জন্ম, আর চব্বিশের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৭ বছরের স্বৈরাচারী ব্যবস্থার পতন। জনগণের সংগ্রামের ধারায় বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মিত হয়েছে। এই ছবির প্রতি চূড়ান্ত ঘৃণা জানিয়ে দিলাম। জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিকে বিতর্কিত করে একাত্তরের মুখোমুখি দাঁড় করানোর এক ঘৃণ্য চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। এই ছবি আমাদের লাখো শহীদের রক্তের প্রতি, আমাদের জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের প্রতি চূড়ান্ত অসম্মান।’

এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আবদুল কাদের বলেন, ‘চব্বিশ দিয়ে একাত্তরকে মুছে দেওয়ার হীন চেষ্টা চালাচ্ছে ছাত্রশিবির। তারা আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে নিজামী-মুজাহিদ-কাদের মোল্লার ছবি টানাইছে। একাত্তরের অপরাধকে নরমালাইজ করার চেষ্টা রুখে দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এগুলো দেখে চুপ কেন? শিবির সবার ছবি লাগাইলেও গোলাম আযমের ছবি লাগায় নাই। শিবিরও কি গোলাম আযমকে রাজাকার মনে করে?’

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এক বিবৃতিতে বলেছে, টিএসসিতে যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শন করে মহান মুক্তিযুদ্ধের লড়াইয়ের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র মাটিকে কলঙ্কিত করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর চার দাবি

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ জাসদ ছাত্রলীগ, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট প্রক্টরকে চার দাবি জানিয়েছে। দাবিগুলো হলো—

১. তাৎক্ষণিক যুদ্ধাপরাধীদের ছবি সরিয়ে নিয়ে আয়োজনটি বন্ধ করতে হবে

২. এমন কর্মকাণ্ডের জন্য ছাত্রশিবিরকে জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে হবে

৩. পরে এমন কর্মকাণ্ড যেন না ঘটে তার নিশ্চয়তা প্রদান করা এবং

৪. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা কীভাবে ঘটেছে তার ব্যাখ্যা এবং ক্ষমা চাইতে হবে।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছবি রাখায় তীব্র নিন্দা

ছবি সরিয়ে নেওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রদল। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানায়, শিবির একটি ছবি প্রদর্শনীতে তাদের সংগঠনের কিছু স্বীকৃত গণহত্যাকারী রাজাকারের ছবির পাশাপাশি ২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলনের নামে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের সৃষ্ট মব জাস্টিস এবং স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত রোষানলের শিকার সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছবি প্রদর্শন করেছে। ছাত্রদল এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।

 

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ