মঙ্গলবার, ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

তিস্তার ভাঙনে আতঙ্কে নদী পাড়ের মানুষ, নেই কার্যকরী পদক্ষেপ

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী: তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ কমতে শুরু করেছে। সেই সাথে বেড়েছে নদী ভাঙন। নদীর ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে তিস্তা পাড়ের মানুষ। তবুও ভাঙনরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এভাবে বছরের পর বছর তিস্তার ভাঙনে নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার কিছু এলাকার হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, স্কুলকলেজ, মাদরাসা ও মসজিদ তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। শত শত বিঘা আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে এখানকার মানুষ। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে না কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ।

নিঃস্ব পরিবারগুলোর অভিযোগ, ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড সামান্য বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) দিয়ে দায়সারাভাবে ভাঙন রক্ষার চেষ্টা করছে।

তাদের অভিযোগ, তিস্তা নদীতে ভাঙন দেখা দিলেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা টেকসই পরিকল্পনার উদ্যোগ গ্রহণের নানা উদ্যোগ নেয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।

নদী অধিকার কর্মীদের অভিযোগ, সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করে জোড়াতালি দিয়ে প্রায় এক হাজার পাঁচশ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা অপচয় করছে নদী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে শতশত বিঘা জমি ও ঘরবাড়ী নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বন্যার পর তিস্তা পাড়ের মানুষের নতুন দুর্ভোগ নদী ভাঙ্গন। তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, আবাদি জমি, ফসলাদীসহ নানা স্থাপনা। উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী, পূর্ব ছাতনাই, চর খড়িবাড়ী, কিসামত ছাতনাই, খগা খড়িবাড়ী, ছোটখাতা বাইশপুকুরে খরস্রোতা তিস্তার ভাঙ্গনে অনেকে সর্বস্ব হারিয়ে নি:স্ব হয়ে মানববেতর জীবন যাপন করছে।

ডিমলা উপজেলার টেপা খড়িবাড়ী ইউনিয়নের উত্তর খড়িবাড়ী মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম ও নূর ইসলাম বলেন, তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে জমি সহ বসতবাড়ী নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। তিস্তার তীরে বন্যা ও ভাঙনের হাত থেকে বাঁচতে তিস্তা খনন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মান করতে সরকারের ঊর্দ্ধোতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

ওই উপজেলার খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের দোহলপাড়া গ্রামের নদী ভাঙ্গনের শিকার আব্দুল কুদ্দুস বলেন, এবারের নদী ভাঙ্গনে মাথা গোঁছার ঠাঁইটুকু হারিয়ে গেছে। বাপ দাদার ভিটে হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে গেলাম। কোথায় দাঁড়াবো বুঝতেছিনা।

ওই এলাকার আবু তাহের নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, গত সপ্তাহ থেকে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। কারো কোনো নজর নেই। কখন যে নদী ভেঙে আমাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে যায় সে ভয়ে আছি। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না ভয়ে। সন্তানদের নিয়ে রাতভর জেগে থাকি।

নদী ভাঙনে ঘর হারানো ভুক্তভোগী একজন বলেন, আগেই নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে বেড়িবাঁধের দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছিল। এখন নতুন করে জেগে ওঠা চরে ওপর দিয়ে খনন করে গতিপথ পরিবর্তন করা হলে পানির স্রোত আর এদিকে থাকবে না। কিন্তু আমাদের দাবির কথা কেউ শুনছে না।

টেপা খড়িবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন বলেন, বিভিন্ন এলাকায় তিস্তা নদীর ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর এভাবে ভাঙ্গনের শিকার হয়ে আবাদি জমি ও ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা-উদ-দৌল্লা বলেন, এখন তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করায় বিভিন্ন জায়গায় ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। আমরা উদ্বোতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এছাড়াও নদী ভাঙ্গন রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাসেল মিয়ার সাথে কথা বললে তিনি জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নদী ভাঙ্গন স্থানসমূহ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বলা হয়েছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ