চিংথোয়াই অং মার্মা, থানচি (বান্দরবান): বান্দরবানের থানচিতে উপজেলা সদরে হতে বাকলাই হয়ে রেমাক্রী-মদুক-লিক্রে নতুন নির্মিত সড়কের চার কিঃমিঃ নামক স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি পর্যটনকেন্দ্র তমা তুঙ্গী। নবীনতম পর্যটন তমা তুঙ্গী আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার পরপরেই পর্যটক ও স্থানীয়দের আর্কষণের দর্শনীয় স্থানে পরিনত হয়েছে। নজর কাড়ার পর্যটকদের অপেক্ষায় ‘তমা তুঙ্গী’। কিন্তু সম্প্রতি কেএনএফ’র ব্যাংক ডাকাতি ঘটনার পরে দফায় দফায় নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসনিকভাবে পর্যটক ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এখনো বহাল থাকছে নিষেধাজ্ঞার, কবে পর্যটনস্পট খুলবে? তা বলতে পারচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।
সূত্রে জানা যায়, সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের (ইসিবি) উদ্যোগে উপজেলা সদর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে তমা তুঙ্গী নামে পর্যটনকেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। থানচি-রেমাক্রী-মদুক-লিক্রে নতুন সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করার সময় তমা তুঙ্গী পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলেন সেনাবাহিনীর ইসিবি ব্রিগেড। তমা তুঙ্গী পর্যটনকেন্দ্রটি ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে।
সম্প্রতিক সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ট্যুরিস্ট ভিউ পয়েন্ট-১ ও ট্যুরিস্ট ভিউ পয়েন্ট-২ নামে পাশাপাশি দুটি স্থান রয়েছে তমা তুঙ্গীতে। এরই মধ্যে একদিকে ট্যুরিস্ট ভিউ পয়েন্ট-১ এ গেলে সেখান থেকে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গের মধ্যে তাজিংডং, কেওক্রাডং ও ক্রাউডং (ডিম পাহাড়) অবলোকন করা যায়। দিক নির্ণয়ের জন্য সেখানে তিনটি ভিউ পয়েন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যটকরা সেখানে গেলেই এ তিনটি স্থান দেখার সুযোগ পায়। বসার কয়েকটি বেঞ্চ নির্মাণ করে দেয়ায় পর্যটকরা সেখানে বসে চারদিকের মনোরম পরিবেশের দৃশ্য দেখতে পারেন। রয়েছে ছোট্ট পরিসরে একটি পানির ফোয়ারা, ঘুরে বেড়ানোর বিশাল পরিসর।
অন্যদিকে ট্যুরিস্ট ভিউ পয়েন্ট-২ এ গেলে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে বিশাল একটি বৃক্ষ ছায়া দিয়ে রেখেছে পুরো পর্যটন এলাকা। সেখানে ছোটো একটা সুইমিংপুল আছে, গাছের দিয়ে তৈরী বসার তুল রয়েছে। পর্যটকরা বেড়াতে গেলে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠে বৃত্ত আকারে ছাদের অন্যরকম আনন্দ পাচ্ছে। পাহাড় আর প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ হচ্ছে। তাই উপজেলা সদরে সবচেয়ে নিকটতম পর্যটনস্পট হিসেবে পরিচিত অর্জন করেছে।
থানচির তমা তুঙ্গীতে ঘুরতে আসার হ্লামংচিং মারমা, উক্য মারমা, সাথিজন ত্রিপুরা’সহ কয়েকজন স্থানীয়রা জানান, তমা তুঙ্গী পর্যটনকেন্দ্রটি দু,টি ভাগের বিভক্ত করে গড়ে তোলায় চারপাশেই সবুজ পাহাড়ের সমারোহ। স্থানীয় কিংবা পর্যটকদের নজর কেড়েছে তমা তুঙ্গী। এই পর্যটনকেন্দ্রের যাতায়াতের সুবিধা থাকায় সহজেই যেতে পারেন। মনোরম পরিবেশে বিকেলে আড্ডার জন্যও এই পর্যটনকেন্দ্র উপযুক্ত স্থান। তমা তুঙ্গী পর্যটনের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে থানচিতে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের ছাড়াও স্থানীয়রা সময় পেলেই ছুটে যান।
থানচি প্রেসক্লাব আয়োজনে মরণোত্তর গুণীজনদের সম্মাননা, জীবিত গুণীজনদের সংবর্ধনা ও প্রেসক্লাবের নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণে-সুবাধে সম্প্রতিক সময়ে তমা তুঙ্গী পর্যটন স্পষ্টের ঘুরতে গেলে দৈনিক ইত্তেফাকের নাইক্ষ্যংছড়ি সংবাদদাতা মোঃ আব্দুর রশিদ বলেন, থানচি সদর হতে আঁকাবাঁকা সড়কের পিছঢালা রাস্তায় ৪ কিঃমিঃ দুরে নবনির্মিত তমা-তুঙ্গী। সেখানে গেলেই প্রাণজুড়ে যায় আমার, চারই দিক মেঘের মিতালি ও কোঁয়াশা মুড়ানো তুমা-তুঙ্গী। সবুজ পাহাড় ঘেঁড়া সৌন্দর্য দৃশ্য দেখতে হলেই থানচিতে চলে আসুন, সেখানে মনোরম পরিবেশে একসাথে দেশের সর্বোচ্চ তিনটি পর্বতশৃঙ্গ তজিংডং, কেওক্রাডং ও ক্রাউডং (ডিম পাহাড়) দেখার সুযোগ পান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রাকিব হাসান চৌধুরী বলেন, তমা তুঙ্গী পর্যটকদের কাছে প্রাণজুড়ানো একটি দর্শনীয় পর্যটনকেন্দ্র। ব্যাংক ডাকাতি ঘটনার পর থেকে এলাকায় নিরাপত্তার জনিত কারণে এই উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করার বর্তমানেও তা বহাল রয়েছে।
থানচির তমা তুঙ্গীতে কিভাবে যাবেন?
ঢাকা-চট্টগ্রাম বা দেশের যে কোনো স্থান থেকে বান্দরবানে যাবেন। আলীকদম হয়েও থানচি উপজেলায় যেতে পারবেন। এরপর বান্দরবান জেলা সদরে তিন নম্বর নামক থেকে বাস, জিপ বা মাইক্রো ও মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে থানচি সদরে যাওয়া যায়। জেলা শহর থেকে সড়কপথে তিন ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে থানচিতে পৌঁছালে উপজেলা পরিষদের ভবনে পিছনেই নতুন নির্মিত সড়কে চার কিঃমিঃ নামক স্থানে গেলেই– তমা তুঙ্গী পর্যটনকেন্দ্র।