মঙ্গলবার, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দিনাজপুরে গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে হামলা ও হুমকির অভিযোগ

দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে এক শহীদ পরিবারের সদস্যের ওপর হামলা, প্রাণনাশের হুমকি, একাধিক মামলা ও প্রতারণার জটিল ঘটনায় গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগকারী মোঃ আঃ মজিদ খাঁন (৬২), পিতা-মৃত মহির উদ্দীন খাঁন (শহীদ পরিবার), সাং-মুর্শিদহাট মালিপাড়া, ৭নং ওয়ার্ড, থানা-বোচাগঞ্জ, জেলা-দিনাজপুর।

অভিযোগে বিবাদী করা হয়েছে—
১। মোছাঃ আশা আক্তার (২৬), পিতা- মোঃ লাইসুর রহমান
২। মোঃ লাইসুর রহমান (৫৩), পিতা- মৃত মফির উদ্দীন
৩। মোছাঃ লিপি আক্তার (৪০), স্বামী- মোঃ লাইসুর রহমান
৪। মোঃ আশরাফুল আলম, পিতা- আব্দুস সামাদ
সকলের সাং- পুরাতন গুচ্ছগ্রাম (আবাসন), ডাকঘর- বড়সুলতানপুর, থানা- বোচাগঞ্জ, জেলা- দিনাজপুর।

অভিযোগে বলা হয়, বিবাদীগণ বিশেষ করে ১-৩ নং আসামী আদালতের আদেশ অনুযায়ী বিভিন্ন মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত ছিলেন। মামলাগুলো হলো—
১। বোচাগঞ্জ মামলা নং: ৪/২৩, দিনাজপুর কোর্ট বিচার ফাইল জিআর নং: ১২৯/২৩
২। সিআর নং: ৯০১/২৪
৩। সিআর নং: ২৫৪/২৪
৪। সিআর নং: ২৪৩/২৪
৫। নির্বাহী আদালতের এমআর মামলা নং: ১/২৫
৬। সিআর নং: ১৪৭/২৫
৭। সিআর নং: ২৬৬/২৫

এছাড়াও বোচাগঞ্জ থানার সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং ৩৩৩/২৪) এবং কোতোয়ালি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি (নং ২১৯৫/২৪) রয়েছে। অভিযোগ দায়েরের তারিখ ৩০/৫/২০২৫, ২/৬/২০২৫ এবং বোচাগঞ্জ থানা ও নির্বাহী অফিসারের বরাবর অভিযোগ দায়ের ৩/৯/২০২৫।

গত ২৪/০৮/২০২৫ ইং তারিখে টাংগাইলের মির্জাপুর থানার গড়াই এলাকা থেকে বোচাগঞ্জ থানা পুলিশ ১-৩ নং আসামীকে গ্রেফতার করে। ঐদিন ০১৩১০-০১০৯১৯ নম্বর থেকে অভিযোগকারীকে ফোন করে পুলিশের সামনেই অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।

পরদিন ২৫/০৮/২০২৫ ইং দুপুর ১২টার দিকে গ্রেফতারকৃত আসামীদের গাড়িতে তোলার সময় অভিযোগকারী ডিউটি অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে ১নং আসামী মোছাঃ আশা আক্তার পুলিশের হাত থেকে ছুটে এসে তার ডান পা, উভয় রানে ও তলপেটে কিল-ঘুষি এবং লাথি মারে। এতে তিনি রক্তাক্ত জখম হন।

তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন—

পুরুষ কনস্টেবল (কং/৮৩৫), বিপি নং-৯১১১১২৯৯৬৯, মোঃ হায়দার

পুরুষ কনস্টেবল (কং/১৩৩৪), বিপি নং-১২১৩১৫৬১৯৫, মোঃ শাহদৎ হোসেন

নারী কনস্টেবল (কং/১১২২), বিপি নং-৯৭১৫১৭৪৩৮৬, আশা আকতার

নারী কনস্টেবল (কং/১২৪৮), বিপি নং-১৩১৩১৫৭২৬০, রত্না বেগম

ডিউটি অফিসার, এএসআই (নিঃ), বিপি নং-৭৭৯৭০৭২৩৫৫, জহুরুল হক

অভিযোগকারী বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতেই আসামিরা তাকে হত্যার হুমকি দেয়। পরে তিনি বোচাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ০৭/০৯/২০২৫ তারিখে দিনাজপুর কোর্ট হাজতে এসআই পলাশ ও এসআই আশরাফ বাদীকে জোর করে আসামির সাথে কথা বলায়, যেখানে তাকে গালাগাল করা হয় এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। ১১/০৯/২০২৫ তারিখ দুপুর ১টার দিকে আমলি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকাকালীন মেজিস্ট্রেট, পেশকার, আইনজীবী ও অন্যান্যদের উপস্থিতিতেই প্রকাশ্যে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। পরদিন ১২/০৯/২০২৫ বিকাল ৩:৩৯ ঘটিকায় দিনাজপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ০১৭১৩২০৮৯৬৮ নম্বর হতে ফোন করে গালাগাল এবং জামিনে বের হয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

অভিযোগকারী আরও জানান, ২১/০১/২০২৫ তারিখে কলেজপাড়া যুব সংঘ ক্লাবের মাধ্যমে গ্রাম্য সালিশে আপোষ মীমাংসা হয়— যেখানে শর্ত ছিল কেউ কাউকে ছেড়ে গেলে ১০ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে হবে। পরদিন ২২/০১/২০২৫ নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে দিনাজপুর কোর্টে বিয়ের এফিডেভিট করা হয় (এফিডেভিট নং-৫০)।

১১/০২/২০২৫ আনুমানিক রাত ৮টার দিকে বাদী আব্দুল মজিদ খানের বাড়িতে বিবাদী আশা আক্তার কে দুইজন পিবিআই কর্মকর্তা (জনাব মোঃ মোস্তফা খান ও জনাব বাসুদেব) জিজ্ঞাসাবাদ করলে আশা আক্তার আতংকিত হয়ে সহযোগীদের সহায়তায় পালিয়ে যান।

পরে জানা যায়, মোছাঃ আশা আক্তারের আসল পিতা রাজধানীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মৃত মোঃ আলী হোসেন। অভিযোগকারীর দাবি অনুযায়ী, ২ ও ৩ নং আসামী আসলে ঐ ব্যবসায়ীর বাড়ির কাজের লোক ছিলেন। তারা শিশু অবস্থায় আশা আক্তারকে কিডন্যাপ করে নিজেদের পরিচয়ে বড় করে তোলে এবং আর্থিক লোভে একাধিক বিয়ে দেয়।

অভিযোগকারী দাবি করেন, আশা আক্তারকে শরিয়ত মোতাবেক ৭টি ও অবৈধভাবে ৭টি মোট ১৪টি বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্বামী ও তাদের পরিচয়ও বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন ১. ফরহাদ হোসেন (পিতা আইয়ুব আলী বাবুর্চি) – দেড় বছর সংসার, এক কন্যাসন্তান (স্টেশনপাড়া উপজেলা রোড, বোচাগঞ্জ) ২. হাসিনুর রহমান (পিতা মো. মোস্তফা, সাইকেল মেকার) – আট মাস সংসার (বড় সুলতানপুর বাজার, নাফানগর, বোচাগঞ্জ) ৩. মোঃ রনি (পিতা মনির হোসেন, গুড় ব্যবসায়ী) – দীর্ঘদিন অবৈধ সংসার (গুচ্ছগ্রাম আবাসন, নাফানগর, বোচাগঞ্জ) ৪. মৃত শফিকুল ইসলাম (পিতা মৃত ইব্রাহিম) – ১৫ দিনের সংসার (রাণীশংকৈল বাজার, ঠাকুরগাঁও) ৫. মোঃ আব্দুল মজিদ খান (পিতা মৃত মহিউদ্দিন) – সাত বছরের সংসার, তিন কন্যাসন্তান (মুর্শিদাহাট মালিপাড়া, ৭ নং ওয়ার্ড, সেতাবগঞ্জ পৌরসভা, বোচাগঞ্জ) ৬. মৃত অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান (পিতা অজ্ঞাত) – ৭ দিনের সংসার (আমিরগঞ্জ নতুন বাজার, পার্বতীপুর, দিনাজপুর) ৭. মোঃ রুবেল হাসিব – দীর্ঘদিন অবৈধ সংসার (ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড, ঢাকায় পট্টি, দিনাজপুর) ৮. মোঃ আলামিন (ট্রাক ড্রাইভার) – কোর্ট ম্যারেজ অনুযায়ী তিন মাসের সংসার (ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড, বটতলা বাজার, দিনাজপুর) ৯. অ্যাডভোকেট আইনজীবী অনিমেষ রায় (পিতা অজ্ঞাত) ২ মাসের অবৈধ সংসারে সাড়ে ৩ মাসের গর্ভবতী হয় (ফরিদপুর জজ কোর্ট তৃতীয় তলা, থানা কোতোয়ালি, ফরিদপুর) ১০. শেখ রবিন, পিতা (শেখ শুকুর আলী) দেড় মাসের অবৈধ সংসার। ১১. শেখ শাহিন চায়ের দোকানদার পিতা মৃত নাসিরুদ্দিন ১৫ দিনের অবৈধ সংসার ১২. মোঃ রাসেল (আঃ মজিদ) তার সৎ ছেলে পরিচয় থাকাকালীন শুধুমাত্র এক জোড়া স্বর্ণের কানের দুল ও একটি স্বর্ণের চেইন দশ হাজার টাকার লোভে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে দীর্ঘদিন যাবত উভয়ের ঠিকানা (গুহলক্ষ্মীপুর মডেল টাউন,১৭ নং ওয়ার্ড, আলিপুর খা পাড়া ব্রিজ সংলগ্ন, থানা কোতোয়ালি, ফরিদপুর) ১৩. মোঃ শাহলম, পিতা অজ্ঞাত দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ সংসার (মির্জাপুর পোস্ট অফিস পাড়া, উপজেলা রোড, থানা মির্জাপুর, জেলা টাঙ্গাইল ১৪. মোঃ রুবেল, পিতা- অজ্ঞাত, দীর্ঘদিন অবৈধ সংসার উপজেলারোড, কুড়িগ্রাম।

এছাড়াও, অভিযোগকারী জানিয়েছেন, আসামিদের শিশু পাচার, মাদক বহন ও দেহ ব্যবসায় জড়িত থাকার প্রমাণস্বরূপ তার কাছে ভিডিও (১ ঘণ্টা ৫ মিনিট), অডিও, কল রেকর্ড, ইমু ভয়েস ও ছবি রয়েছে।

মোঃ আঃ মজিদ খান অভিযোগে উল্লেখ করেন, আসামিগণ জামিনে বের হয়ে যেকোনো সময় তার ও তার পরিবারের ওপর হামলা, ক্ষতি এবং হয়রানিমূলক মামলা করতে পারে। বর্তমানে তিনি ও তার পরিবার ভীষণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিবাদীগণের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ