মঙ্গলবার, ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দুই মামলার আসামী দাপুটে আ’লীগ নেতা সরকারি চাকরি করছেন প্রকাশ্যে

মিনহাজ আলী, শিবগঞ্জ (বগুড়া): বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের দাপুটে নেতা দুইটি মামলা মাথায় নিয়ে এখনও সরকারি চাকরি করছেন প্রকাশ্যে।

শুধু তাই নয়, নিজের নামে বিভিন্ন সংবাদ পত্রের এজেন্ট ছাড়াও ফ্রেশ কোম্পানির ডিলারশিপের ব্যবসাও পরিচালনা করছেন তিনি।

বিগত সরকারের সময় প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের মিছিল ও মিটিং করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংবাদিক হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে অসংখ্য মানুষকে দিয়েছেন মিথ্যা মামলা। তার হাতে বিএনপি জামায়াতের অনেক নেতা কর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

গত ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি পোলিং অফিসারেে দায়িত্ব পেয়ে নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নেন। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে পরে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল তাকে তলব করে। সেখানে মুচলিকা দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে পার পেয়ে যান। এরপর আবার শুরু করেন রাজনীতি। এছাড়াও তিনি মোকামতলা প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক ছিলেন ২০২৩ সাল পর্যন্ত।

দাপুটে এই নেতার নাম আপেল মাহমুদ।তিনি বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য এবং স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে মোকামতলা ইউনিয়নের স্বাস্থ্য সহকারি পদে কর্মরত।

জানা গেছে, আপেল মাহমুদ গত জুলাই আন্দোলনে তার সহযোগিদের নিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলার জন্য তালিকা তৈরির কাজ করতেন। প্রকাশ্যে জনসম্মুখে আন্দোলন কারীদের দেখে নিবো বলে হুমকী দিতেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আপেল মাহমুদের নামে গত সেপ্টেম্বর মাসে বগুড়া সদর ও শিবগঞ্জ থানায় হত্যার চেষ্টাসহ বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুইটি মামলা হয়। তারপরেও তিনি চাকরি করে যাচ্ছেন প্রকাশ্যেই।

মোকামতলা ইউনিয়নের স্বাস্থ্য পরিদর্শক সোনা মিয়া বলেন, আপেল মাহমুদ নিয়মিত চাকরি করছেন। তার নামে মামলার বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তিনি বলেন আপেল চাকরিতে আমার জুনিয়র হলেও আওয়ামিলীগের প্রভাব বিস্তার করে এতদিন সে স্বাস্থ্য পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু চাকরি করেননি নিয়মিত। পাঁচ আগস্টের পর আমাকে স্বাস্থ্য পরিদর্শকের পদের দায়িত্ব দেয়া হয়।

দেউলী ইউনিয়ন জামায়াতের যুব বিভাগের সেক্রেটারী সুমন খন্দকার বলেন, আমি পেশায় ভেটেনারী চিকিৎসক। ২০২১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী ফেসবুকে মুসল্লীদের নিয়ে একটি পোস্ট করায় আপেল মাহমুদের নির্দেশে তার লোকজন আমাকে মোকামতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিসে ধরে নিয়ে যায়।সেখানে আপেল আমাকে মারধর করে পুলিশে দেয়ার হুমকী দেয়। তাদের হাতে- পায়ে ধরে পোস্ট ডিলিট করে রেহাই পাই।

মোকামতলার স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম জানান, জুলাই আন্দোলনে আপেল মাহমুদ আন্দোলনকারীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্যাতন করেছে। সে আওয়ামী লীগের সদস্য হলেও মোকামতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ মূলত সেই নিয়ন্ত্রণ করতো। সরকারি চাকরি করেও সাংবাদিকতার লেবাস পরে দালালি করতো। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত সরকারী চাকুরীর কাজে ফাঁকি দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের ভোট চোর, গণহত্যাকারী, সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। এতো দিনে তার বিরুদ্ধে সরকারী চাকরী বিধি বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ওর বিরুদ্ধে মামলা আছে। তার বিরুদ্ধে বগুড়ার সিভিল সার্জন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে, সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আমরা স্থানীয়রা অভিযোগ করতে বাধ্য হবো।

শিবগঞ্জ উপজেলা মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদক ও মোকামতলা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফাহিমা বেগম বলেন, আমি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হিসেবে ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ দুপুরে ৪ নং ওয়ার্ডের ফজলুর বাড়ির সামনে কাজে গেলে আপেল মাহমুদের নেতৃত্বে আমার উপর হামলা করে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করা হয়। এঘটনায় অভিযোগ দিলে থানা ঘটনাটি জিডি ভুক্ত করে। পরে আর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

মোকামতলা ইউনিয়নের শংকরপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডার ছামছিল আরিফিনা বলেন, আপেল মাহমুদ সপ্তাহের তিনদিন এই ক্লিনিকে আগত সেবা প্রার্থীদের প্রাথমিক সেবা দিয়ে থাকেন। গত শনিবার আপেল মাহমুদ ক্লিনিকে সেবা দিয়েছেন। গনেশপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডার সুলতান আহম্মেদ বলেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারী আপেল মাহমুদ এখানে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের টিকা প্রদান করেছেন।

তবে আপেল মাহমুদের দাবি, তিনি আওয়ামী লীগের সদস্য হলেও কোন পদে নেই। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করায় তিনি আওয়ামী লীগের মিছিল করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এছাড়াও পত্রিকার এজেন্ট এবং ফ্রেশ কোম্পানির ডিলারশিপ তার বাবার নামে।

শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রুহুল আমীন বলেন, আপেল মাহমুদের নামে মামলা রয়েছে বিষয়টি আমি শুনেছি। তার নামে একটি লিখিত অভিযোগও জমা পড়েছে। তিনি নিয়মিত চাকরি করছেন।
উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে মৌখিক ভাবে আপেল মাহমুদের বিষয়টি জানিয়েছি। গত দেড় মাস ধরে সিভিল সার্জন নেই।ডেপুটি সিভিল সার্জন দায়িত্বে ছিলেন।৷ এক সপ্তাহ আগে তিনিও বদলী হয়ে চলে গেছেন। রবিবার নতুন সিভিল সার্জন পদায়ন হয়েছেন। তিনি যোগদান করলে আপেল মাহমুদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, মামলা থাকলে অবশ্যই গ্রেপ্তার করা হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আপেল মাহমুদকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিবেন বলে জানান পুলিশ সুপার।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ