যায়যায় কাল প্রতিবেদক : রাজধানীর ধানমন্ডিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে এক ছাত্র নিহত হয়েছে। সে রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকেও থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল।
রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি জানায়, নিহত ছাত্রের নাম ফারহান ফাইয়াজ রাতুল। আজ বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মোহাম্মদপুর এলাকার সিটি হাসপাতালে ফারহানের মৃত্যু হয়। তার শরীরে রাবার বুলেটের ক্ষত রয়েছে।
এর আগে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বেলা সাড়ে তিনটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল। এতে অন্তত দশ জনের মতো শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আগুন দেওয়া হয়েছে ওই এলাকার একটি পুলিশ বক্সে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ধানমন্ডি ছাড়াও সায়েন্স ল্যাব ও আজিমপুর এলাকাতেও সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। আসাদ গেট, ধানমন্ডি ২৭, কলাবাগান, সায়েন্স ল্যাব ও নিউমার্কেট এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের চাপাতি, রাম দা ও হকিস্টিকসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসহ অবস্থান করতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় রাপা প্লাজার সামনে মূল সড়কে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। ধানমন্ডি এলাকার ছয়-সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভে অংশ নেন। বেলা ১১টার দিকে ওই শিক্ষার্থীদের প্রথমে ধাওয়া করে মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি থানা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। একই সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। এরপরই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়।
আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে মূল সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। তখন শিক্ষার্থীরা লালমাটিয়া এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নেয়। কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার মধ্যে দুপুরের দিকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকার পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। যদিও পুলিশ বক্সে কারা আগুন দিয়েছে তা জানা যায়নি।
ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের পাশাপাশি রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকাতেও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ধানমন্ডি এলাকার কয়েকটি স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়কে মিছিল করছেন। এ সময় বিভিন্ন অলিগলিতে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের তাদের ধাওয়া করেন।
প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পরে ল্যাব এইড হাসপাতালের সামনে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। এ সময় বেশ কিছু সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে তারা। তখন কলাবাগান ও ধানমন্ডির বিভিন্ন সড়কে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়।
নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনেকক্ষণ ধরে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা শুনছে না।’
বেলা সোয়া একটার দিকে রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আন্দোলনরত প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।
আজিমপুরে অবস্থান নেওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সকাল থেকে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা তাদের দুই দফায় ধাওয়া করেন। পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে, বেশ কয়েকটি ককটেল ফাটানো হয়। পরে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে আবার সড়কে অবস্থান নেয়।