মোহাম্মদ আলী আরাফাত : একটা প্রশ্ন আমাকে অনেকেই করে থাকেন। নতুন প্রজন্ম কেন রাজনীতি করবে? আর রাজনীতি করলেও কেন আওয়ামী লীগ করবে বা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করবে?
আমার উত্তর : নতুন প্রজন্মের অবশ্যই দেশকে ভালোবাসা উচিত এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস থাকা উচিত। তাই তাদের আওয়ামী লীগকেই সমর্থন করা উচিত। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিশ্চয়ই কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিচ্যুতি ও ব্যর্থতা ছিল এবং আছে। কিন্তু একটা কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে দেশ ও জনগণের জন্য আওয়ামী লীগের যে ‘অর্জন’ তা আর কারো নেই এবং দেশ ও জনগণের জন্য আওয়ামী লীগের যে অবদান তা এই দলের অতীত ও বর্তমানের সব বিচ্যুতি ও ব্যর্থতার তুলনায় বহু বহু গুণ বেশি।
আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, আওয়ামী লীগের যত না ভুল-ত্রুটি বা কিছু কিছু ব্যর্থতা আছে, তার চেয়েও আরো অনেক বেশি আছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার ও মিথ্যা অপবাদ। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার তৈরির কারখানা হলো পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির ধারক-বাহক বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য উগ্রবাদী অপশক্তি এবং আওয়ামী লীগবিরোধী এই অপপ্রচারগুলো মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় এদেরই কিছু অন্ধ সমর্থকগোষ্ঠী। জেনেশুনেই এরা এসব মিথ্যাচার করে। আর এ দেশের কিছু বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আছে, তারা এগুলো বিশ্বাসও করে। সাম্প্রদায়িকতা এক ধরনের রোগ। নতুন প্রজন্মকে এই রোগের বিপক্ষেই দাঁড়াতে হবে।
রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান বা সেই দেশের জনগণের প্রতি আমার কোনো বিদ্বেষ নেই; বরং পাকিস্তানপন্থী রাজনীতি তথা উগ্র প্রতিক্রিয়াশীল যে রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা তার বিরুদ্ধে আমার অবস্থান।এই উগ্র-সাম্প্রদায়িক চিন্তা ও রাজনৈতিক চর্চা পাকিস্তানকেও পেছনে ঠেলে দিয়েছে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এ দেশে আবারও ফিরিয়ে আনা হয় পাকিস্তানপন্থী রাজনীতি। রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপ, সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়া-এরশাদের অনুপ্রবেশ এবং তাঁদের এই একই উগ্র-সাম্প্রদায়িক ধ্যান-ধারণার রাজনীতি বাংলাদেশকে অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছিল। অন্যদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উগ্র চিন্তার বিপরীতে আধুনিক চিন্তা করে। প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তার বিপরীতে প্রগতিশীল চিন্তা করে।
সাম্প্রদায়িকতার বিপক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থান নেয়। বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন, উন্নয়ন ও অগ্রগতি, তার সবই আওয়ামী লীগের হাত ধরেই।
তাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আওয়ামী লীগের সরকারে থাকা এবং রাষ্ট্র পরিচালনা খুবই জরুরি, এর কোনো বিকল্প নেই। আমি শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলছি না, আমি মূল্যবোধের উন্নয়নের কথাও বলছি।
একটা ছোট উদাহরণ দিই। নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের মতো এমন প্রচণ্ড জটিল অথচ অতি গুরুত্বপূর্ণ এই কাজ আর কোনো দলের পক্ষে কি করা সম্ভব ছিল? যুদ্ধাপরাধের বিচারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মূল্যবোধের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও অনেক ধাপ এগিয়ে গেছে।
মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী হলো রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন। বিএনপি হলো রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের জোটের অংশ এবং রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ কৌশলে আলাদা করে না রাখলে তারাও বিএনপির মতোই একটা দল এবং একই রকম ভূমিকা নিত বাংলাদেশের রাজনীতিতে। মূলধারার বাইরে ধর্মীয় মৌলবাদী দলগুলো গণতন্ত্র নয়, মূলত ‘পাকিস্তানি ধারার’ চিন্তায় বিশ্বাসী। আর মূলধারার বাইরে ‘বাম’ দলগুলো চরম ideologue (মৌলবাদী) এবং বাস্তবতাবিবর্জিত। এই দলগুলোর নিজের কিছু করার যোগ্যতা বা সক্ষমতা নেই, তাদের কাজ শুধু দাবি জানানো। তাদের যা দাবি, তা আওয়ামী লীগকেই সরকারে গিয়ে পূরণ করতে হয়, যেমন ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার’, ‘জঙ্গি দমন’, ‘দারিদ্র্য বিমোচন’, ‘পরিবেশবান্ধব নীতি প্রণয়ন’, ‘দুর্নীতি দমন’, ‘সামাজিক সুরক্ষাবলয় তৈরি’ ইত্যাদি।
কাজেই আমাদের তথা নতুন প্রজন্মের আশা করার জায়গা শুধু আওয়ামী লীগই। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে অনেক কিছু দিয়েছে, তাই নতুন প্রজন্মের অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকা উচিত। প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক এবং অর্থনৈতিকভাবে উন্নত রাষ্ট্র আমাদের আর কোনো দল দিতে পারবে?
আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন ও ভালোবাসা আমাদের দেশপ্রেমেরই অংশ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের আস্থা, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা আমার দেশপ্রেমের দায়।
আওয়ামী লীগের ইতিহাস মানেই বাঙালির মুক্তির ইতিহাস, আওয়ামী লীগের ইতিহাস মানেই বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ইতিহাস।
আজ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। শুভ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী! অনেক অনেক শুভেচ্ছা ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’। জয় বাংলা! জয় বঙ্গবন্ধু!
লেখক : প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়