শনিবার, ১৪ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৮শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

নবীনগরে নৃশংস হামলার শিকার নাছিমার বিরুদ্ধে নতুন চক্রান্ত-মামলাকে প্রভাবিত করতে আসামিদের সংবাদ সম্মেলন

মমিনুল হক রুবেল, নবীনগর প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে নাছিমা আক্তার নামে এক নারীর উপর হামলার ঘটনায় মামলা করায় আসামিদের বিরুদ্ধে ওই পরিবারকে নানাভাবে হুমকি এবং মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মামলার বাদী নাছিমার অভিযোগ, হামলার ঘটনায় কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিন এনে এলাকায় প্রকাশ্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং আবারও তাদের ওপর হামলার হুমকি দিচ্ছেন। এবং মামলাটি অন্যদিকে প্রভাবিত করতে সাংবাদিক সম্মেলন ও মানববন্ধন করে নতুন চক্রান্ত করছেন। এতে তার পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ।

জানা যায়, গত ৩১ আগস্ট রাতে হামলার শিকার হন নাছিমা। তার দুই পায়ের রগ কেটে ফেলেন হামলাকারীরা। এসময় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগও করেন ভুক্তভোগী। পরে স্থানীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে নবীনগর থানায় একটি মামলা করেন তিনি। এক নম্বর আসামি করা হয় মোছা মিয়াকে। তিনি আরো বলেন ‘আমাকে হত্যা করার জন্য মধ্যযুগীয় কায়দায় আমাকে নির্যাতন করা হয়েছে। হামলাকারীরা আমার দুই পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে সারা শরীরে আঘাত করেছে।’ হামলাকারীরা এ সময় তাকে শারীরিকভাবেও নির্যাতন করা হয়।

নাছিমা বলেন, হামলার পর আমি হাসপাতালে।আমার দুটি অপারেশন হয়েছে।এর মধ্যে আবারও মোছা মিয়া আমাকে ফোন দিয়ে হুমকি দিয়েছেন। অথচ মামলার পরও আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরেছে। এবং এখন উচ্চ আদালত থেকে জামিন এনে আমার বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন করে মামলাটিকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে চেষ্টা করছে। এছাড়াও সাংবাদিক সম্মেলনে ব্যানারে আমার ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহার করেছে । এতে আমার গোটা পরিবার এখন চরম আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন।

জানাযায় নাছিমার গ্রামে তাদের একটি বাগানবাড়ি নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে। এর জেরে গত ১৬ আগস্ট তার ছোট বন চয়নিকাকে অপহরণের চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ৩১ আগস্ট চয়নিকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিশিয়াল আদালতে অপহরণচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় স্থানীয় ইকবাল হোসেনসহ আরও কয়েকজনকে। নাছিমাও সেদিন তার বোনের সঙ্গে গিয়েছিলেন।

নাছিমা জানান, মামলা করে বাড়ি ফেরার পথে রাত আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে স্থানীয় শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে ২০-২৫ জন লোক মিলে তার উপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা একপর্যায়ে তার দুই পায়ের রগ কেটে দেয়। এ সময় তার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গাও আঘাত করে। একপর্যায়ে হামলাকারীরা মৃত ভেবে তাকে ফেলে রেখে চলে যায়।

পরে তাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে নাছিমা আরো বলেন, ‘মোছা মিয়ার নেতৃত্বে আমার ওপর এই হামলা চালানো হয়। আমি হামলাকারীদের বেশির ভাগ লোককে চিনেছি। মামলায় তাদের নামও দিয়েছি। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এই হামলা হয়। মোছা মিয়া হামলার সময় নিজে আমাকে জঘন্যভাবে নির্যাতন করেছে। মোছাসহ হামলাকারীদের কঠোর বিচার চাই।’

এ ঘটনায় মোছা মিয়াকে প্রধান আসামি করে ১৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন। এতে ইকবালকেও আসামি করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় কেউ আটক বা গ্রেপ্তার হয়নি।

এদিকে মোছা মিয়া সংবাদ সম্মেলন করে বলেন,আমি সামনে নির্বাচন করব এবং আমি এলাকায় খুব জনপ্রিয় তাই ‘আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে আবু ফয়েজ নামে আরেক আসামি ওই সংবাদ সম্মেলনে নাসিমাকে যৌনকর্মী বলে আখ্যায়িত করেন ।

নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুব আলম বলেন, সংবাদ সম্মেলন অথবা মানববন্ধনের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে নাসিমার বিরুদ্ধে নবীনগর থানায় মাদকের মামলা অথবা অন্য কোন মামলার খবর আমি জানিনা ।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *