বুধবার, ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

নরসিংদীর পলাশে ভাত না খেয়েই ৫৩ বছর পার রহমত আলী

নরসিংদী প্রতিনিধি: বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে প্রধান খাবার হিসেবে বিবেচিত ভাত। কেউ তিনবেলা, কেউ দুবেলা, আবার কেউ হয়তো একবেলা ভাত খান। কিন্তু একেবারেই ভাত খান না এমন মানুষ দেশে খুঁজে পাওয়া বিরল। তবে এবার ভাত না খাওয়া এক ব্যাক্তির সন্ধান মিলেছে নরসিংদীর পলাশে। যিনি কিনা ভাত না খেয়েই পার করেছেন ৫৩টি বছর।

ভাত না খাওয়া ওই ব্যাক্তির নাম রহমত আলী। বয়স ৫৩ বছর। জন্মের পর থেকেই তাকে খাওয়ানো যায়নি ভাত। আর জোর করে ভাত খাওয়ালে সঙ্গে সঙ্গে করে দেন বমি। শুধু মুড়ি আর রুটি খেয়েই কাটিয়ে দিয়েছেন ৫৩টি বছর।

জানা যায়, নরসিংদীর পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের মোসলেউদ্দিনের ছেলে রহতম আলীর শরীরের সবকিছু ঠিকঠাক চললেও ভাত না খাওয়ার বিষয়টি শুরু হয় জন্মের ছয়মাস পর থেকে। মুখে ভাত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বমি এবং কান্নাকাটি শুরু করে দিতেন তিনি। দুই বছর বয়স পর্যন্ত রহমত আলী মায়ের বুকের দুধ, গরুর দুধ, রুটি আর বিস্কুট খেতেন। পরে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাছ, মাংস, রুটি, মুড়ি খাওয়া শুরু করেন। বর্তমানে বাড়িতে রান্না করা তরকারির ঝোলের সঙ্গে রুটি বা মুড়ি তার প্রধান খাবার। পরিবারের সদস্যরা তাকে একাধিকবার চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলেও তারা খুঁজে বের করতে পারেননি এ সমস্যার সমাধান।

রহমত আলীর তিন মেয়ে এক ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে চলছে তার সংসার। কৃষি কাজ করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন। রহমত আলীর ছোট মেয়ে বলেন , ‘আব্বা বেশি ঝাল খায়, তাই তার ছোটবেলা থেকেই পরিবারের লোকজন তার জন্য আলাদা রান্না করতো আর তা এখনও চলছে। আমরা ছোট থেকেই দেখছি, আব্বা ভাত খায় না, যদি কেউ জোর করে কিম্বা অন্য খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে ভাত দেয়, তাহলে সাথে সাথে তিনি অসুস্থ হয়ে বমি করা শুরু করেন।’

রহমত আলীর বড় ভাই খোরশেদ মিয়া বলেন, ‘আমরা ভাত খাওয়ানোর জন্য তাকে অনেক চেষ্টা করেছি, পারিনি। শেষে কবিরাজসহ বিভিন্ন ডাক্তার দেখিয়েছি, কোনো লাভ হয়নি। সে রুটি খেয়েই সমাজের আট-দশজনের মতো স্বাভাবিকভাবে দিব্বি কাজকর্ম করে চলেছে।’

রহমত আলী বলেন, ‘ভাত আমার ভালো লাগে না। বড় হওয়ার পর মুখে অনেকবার ভাত নিতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু মুখে ভাত গেলেই বমি চলে আসে। ভাতের গন্ধও সহ্য করতে পারি না। ভাতের চেয়ে তিন বেলা রুটি খেতেই আমার ভালো লাগে।’

ভাতের সঙ্গে রহমত আলীর অনিহা রয়েছে সবজিতেও। রুটি বা মুড়ির সঙ্গে বড় মাছ আর মাংস খেয়ে ৫৩ বছর পার করলেও জ্বর-ঠান্ডা ছাড়া কোনো বড় ধরনের শারীরিক সমস্যায় পড়তে হয়নি তাকে।

পেশায় একজন কৃষক হলেও এলাকায় ভাত না খাওয়া রহমত আলী নামেই রয়েছে তার পরিচিতি। ছোট থেকেই আত্মীয় স্বজনরা তাকে ভাত খাওয়ানোর অনেক চেষ্টা করেও পারেননি। একপর্যায় এটি স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিয়েছেন স্বজনরা।

এ ব্যাপারে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন বাপ্পী বলেন ভাত না খাওয়ার কারণে শরীরের ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়ে না। ভাত হলো একটি শর্করা জাতীয় খাদ্য, শর্করা শুধু ভাত থেকেই আসে না। অন্যান্য খাবার থেকেও শর্করা আসে। যেমন- আলু রুটি থেকেও শর্করা আসে। ভাত না খাওয়ার প্রতি অনিহা থেকেই রহমত আলীর এমনটা হয়েছে। তবে ভাত না খাওয়া কোনো রোগের লক্ষণ না।’

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ