বুধবার, ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নাগেশ্বরীতে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম

আতিকুর রহমান, কুড়িগ্রাম উত্তর: কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্পের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিচালিত জাতীয় মহিলা সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল পর্যায়ের বিধবা, অসহায়, দরিদ্র ও অসচ্ছল নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন ও তাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য নাগেশ্বরী পৌরসভার কামারপাড়া আমতলা এলাকায় বিউটিফেকশন, ফ্যাশন ডিজাইন, ক্যাটারিং, ইন্টোরিয়র ডিজাইন অ্যান্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও বিজনেস অ্যান্ড ই-কমার্স- এই ৫ টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে।

এসব প্রশিক্ষণের জন্য অনলাইনে আবেদনের পর মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীর যাচাই-বাছাই করা হয়। এখানে প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণার্থীদেরকে যাতায়াত বাবদ দৈনিক ১৫০ টাকা করে ৮০ দিন ও ৪০ দিনের টাকা চেকের মাধ্যমে প্রদান করে কর্তৃপক্ষ।

উপজেলার কামারপাড়া এলাকার তাহমিদুল ইসলামের স্ত্রী কাজল রেখা স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগে জানা যায়, চলতি বছরের ২৪ জুন বিউটিফেকেশন ট্রেডে প্রশিক্ষণের জন্য সাক্ষাৎকারে অংশ নিয়ে সবগুলো সঠিক উত্তর প্রদান করেন ভুক্তভোগী কাজল রেখা। তার অভিযোগ ৩০ জুন এই সাক্ষাৎকারে প্রশিক্ষণার্থী বাছাইয়ের ফলাফল প্রকাশ করলে দেখতে পান যে তার নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

পক্ষান্তরে ওই সংস্থার প্রশিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে অর্থের বিনিময়ে একই ব্যক্তিকে একাধিকবার প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেন। এমনকী তিনি টাকা দিতে না পারায় তাকে প্রশিক্ষণের সুযোগ দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগে উল্লেখ করেন তিনি।

এছাড়াও ভাইভা পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিসহ ৪ জন ভাইভা বোর্ডে থাকার নিয়ম থাকলেও তাদের অনুপস্থিতিতে তৃণমূলের নিজস্ব লোক দ্বারা ভাইভা গ্রহণ করে নিজস্ব লোকজনকে অর্থের বিনিময়ে প্রশিক্ষার্থী বাছাই করে আসছে। এমনকী অনেকের চেক আটকে দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন বলেও জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই প্রশিক্ষণে একজন প্রশিক্ষণার্থী যেকোনো একটি ট্রেডে শুধুমাত্র একবার প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। কিন্তু সেখানে শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন স্বজনপ্রীতি আর অর্থের বিনিময়ে নিজস্ব লোকজনকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে একাধিকবার প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেন।

গোপন সূত্রে জানা যায়, খাদিজা খাতুন নামের একজন প্রশিক্ষাণার্থী ৬ বার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। মুক্তা পারভীন, সতিথা রানী ও পূর্ণিমা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৩ বার করে। ছকিনা খাতুন, সুমাইয়া আক্তার শিরিনাসহ বেশ কয়েকজনকে বিভিন্ন ট্রেডে একাধিকবার প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ করে দেন তিনি। এভাবে ওই প্রশিক্ষক লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের আনছারহাট এলাকার প্রশিক্ষণার্থী অঞ্জনা রানী ও আরেক প্রশিক্ষণার্থী ইলমা খাতুনসহ অনেকে জানায়, প্রশিক্ষণের পর তাদের নামে যাতায়াত ভাতার চেক ইস্যু হলেও তারা চেকের টাকা পাননি।

এ ব্যাপারে প্রশিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমি এসব বিষয়ে কিছু বলতেও পারব না।’ প্রকল্পের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেনও সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এগুলো যারা বলছেন তারা আমাদের প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য অভিযোগ দিচ্ছে।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিব্বির আহমেদ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ