বৃহস্পতিবার, ২৬শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১০ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

নাটকীয় জয় বাংলাদেশের

স্পোর্টস ডেস্ক : মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন। দাসুন শানাকার বল মিড অফে পাঠিয়ে ফিল্ডারের হাতে দিয়ে দৌড় দিয়েছিলেন। ওখানে হাসারাঙ্গা ঠিকঠাক বল লুফে নিয়ে থ্রো করেছিলেন। মাহমুদউল্লাহ তখন মাঝ ক্রিজে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার অধিনায়কের থ্রো স্টাম্পে চুমু খায়নি। ব্যাকআপও ছিল ঢিলেঢালা। শ্রীলঙ্কার দেওয়া ১২৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় তখন ২ রান লাগত বাংলাদেশের। অতিরিক্ত এক রান নিয়ে মাহমুদউল্লাহ দলের জয় নিশ্চিত করে। মুষ্টিবদ্ধ হাত শূন্যে ছুঁড়ে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচেন! আরেকটি ক্লোজ ম্যাচ তাকে হারতে হলো না। অন্তত ব্যাঙ্গালুরু হলো না ডালাস।

ভারতের বিপক্ষে ৩ বলে ২ রানের সমীকরণ মেলাতে না পেরে বাংলাদেশ ১ রানে ম্যাচ হেরেছিল ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। ওই হার এখনও তাড়িয়ে বেড়ায়। আজ ডালাসে এমন কিছুই হতে যাচ্ছিল। হাতে ৫ উইকেট রেখে ২৩ বলে যখন ১৬ রান প্রয়োজন তখন নবম বিশ্বকাপ খেলতে আসা সাকিব ৮ রানে আউট হয়ে দলকে বিপদে ফেলেন। ১৮তম ওভারে পেসার থুসারা ৩ রানের খরচায় নেন আরো ২ উইকেট। বাংলাদেশের আট ব্যাটার সাজঘরে।

শেষ ১২ বলে দরকার ১১ রান। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ক্রিজে তানজিম হাসান। এরকম মুহূর্তে যেটা হয়, বেশিরভাগ সময়ই বাংলাদেশ স্নায়ু স্থির রাখতে পারে না। তীরে গিয়ে তরী ডুবিয়ে দেয়। কিন্তু শানাকার করা ১৯তম ওভারের প্রথম বলটাতেই যেন ম্যাচের ভাগ্য লিখে ফেলেন মাহমুদউল্লাহ। লোপ্পা ফুলটস বল মাহমুদউল্লাহ উড়ান ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে। বাকি রানের সমীকরণটা মিলিয়ে ১ ওভার হাতে রেখে ২ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক।

১২০ বলে মাত্র ১২৫ রানের লক্ষ্য। বোলাররা যেখানে জয়ের অর্ধেক কাজ করে দিয়েছেন সেখানে ব্যাটসম্যানদের হেসেখেলে ম্যাচ জেতার কথা। অথচ চরম অফফর্মে থাকা ব্যাটসম্যানরা আজও ব্যর্থ। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে গোটা দল পেল প্রশ্নবিদ্ধ এক জয়। যে জয়ে প্রাপ্তির আনন্দের চেয়ে হারানোর শঙ্কাই ছিল বেশি। তাও ভালো, জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করলো বাংলাদেশ।

বোলাররা নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করে দিলেও ব্যাটসম্যানরা আবার ভুগিয়েছে দলকে। বিশেষ করে দুই ওপেনার নিজেদের উইকেট উপহার দিয়ে আসে প্রতিপক্ষকে। লো স্কোরিং ম্যাচে রান তাড়া করছিন। সৌম্য ও তানজিদ যথাক্রমে শূন্য ও ৩ রানে ফেরেন সাজঘরে। শান্ত করতে পারেননি ৭ রানের বেশি। ৫.২ ওভারে ২৮ রানে ৩ ব্যাটসম্যান আউট। সেখানে লিটন ও তাওহীদ গড়ে তোলেন প্রতিরোধ। ৬৩ রানের জুটিতে মনে হচ্ছিল ম্যাচটা সহজেই জিততে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে তাওহীদ যখন হাসারাঙ্গাকে টানা তিন ছক্কা উড়ান তখন পুরো গ্যালারি উল্লাসে ফেটে চৌচির। লঙ্কান সমর্থকরা ছিলেন নিশ্চুপ।

এরপরই পাল্টে যায় ম্যাচের মোড়। ৯১ থেকে ১১৩, ২২ রান তুলতে বাংলাদেশ হারায় ৫ উইকেট। ম্যাচের ভাগ্য তখন পেণ্ডুলামে ঝুলে ছিল। দুই দলই জয়ের নেশায় মত্ত। শেষমেশ মাহমুদউল্লাহ নিজের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে ১৬ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জয় এনে দেয়। যে জয়ে উঠছে প্রশ্ন। কোথায় সৌম্য, তানজিদের লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি? কোথায় লিটনের ইনিংস বড় করার চেষ্টা? কোথায় সাকিবের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে ম্যাচ শেষ করে আসার তীব্র আকাঙ্খা? ম্যাচের পর ম্যাচে কেবল প্রশ্নই উঠে। উত্তর মেলে না।

এর আগে টস জিতে শ্রীলঙ্কাকে অল্পরানে আটকে রাখার যে পরিকল্পনা তা শুরুতে তেমন কাজে আসেনি। পাওয়ার প্লে’তে ২ উইকেট হারিয়ে ৫৩ রান তুলে বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিল লঙ্কান শিবির। আক্রমণের ধার শ্রীলঙ্কা ধরে রাখে পরের কয়েক ওভারে। কিন্তু ব্যাটাররা আক্রমণে যাওয়ার পরপরই তাদের চেপে ধরে বাংলাদেশ। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ধারাবাহিক উইকেট তুলে এলোমেলো করে দেয় প্রতিপক্ষ শিবির।

১৪ ওভারে ৩ উইকেটে শ্রীলঙ্কার রান একশ ছুঁয়েছিল। সেখান থেকে পরের ৬ ওভারে মাত্র ২৪ রান যোগ করতে পারে। বোলাররা পেশাদারিত্বের দারুণ নিদর্শন দেখিয়েছেন ২২ গজে। আলগা বোলিং করেননি। ছন্দ ছিল প্রতিটি আক্রমণে। বৈচিত্র্য আর নিয়ন্ত্রণে মোস্তাফিজ, রিশাদ, তাসকিন, তানজিমরা ছিলেন অনন্য।

ধারাবাহিক উইকেট হারানোয় শ্রীলঙ্কার ওপর এতোটাই চাপ বেড়েছিল যে, রান তোলা প্রায় ভুলেই গিয়েছিল। শেষ ওভারের প্রথম বলে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুউজ চার হাঁকালে শ্রীলঙ্কা ৪৩ বল পর প্রথম বাউন্ডারি পায়। শেষ ৮ ওভারে যা তাদের একমাত্র বাউন্ডারি! ভাবা যায়? বোলিংয়ের দ্বিতীয় অর্ধে বাংলাদেশ কতটা নিয়ন্ত্রিত ছিল তার চিত্র ফুটে উঠে এতেই।

এই কৃতিত্ব দিতে হবে রিশাদ হোসেনকে। ১৫তম ওভারে তার ডাবল উইকেট এবং ১৭তম ওভারে আরো একটি সাফল্যে শ্রীলঙ্কা এলোমেলো হয়ে যায়। ১০০ থেকে ১১২ রানে যেতে রিশাদের ৩ উইকেটে ম্যাচ পাল্টে যায়। প্রথমে মিড উইকেট সীমানায় আসালাঙ্কাকে ফেরান। এরপর নতুন ব্যাটসম্যান হাসারাঙ্গাকে তালুবন্দি করান স্লিপে। হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করলেও পারেননি। এক ওভার পর তার ঘূর্ণিতে স্টাম্পড হন ধনাঞ্জয়া। সব মিলিয়ে ৪ ওভারে ২২ রানে ৩ উইকেট নেন রিশাদ।

উইকেটে বল গ্রিপ করায় মোস্তাফিজের স্লোয়ার ও কাটার বেশ ধরেছে। সেজন্য সাফল্য পেতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে। পাওয়ার প্লে’তে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলে উইকেটের দেখা পান। ফেরান কামিন্দু মেন্ডিসকে। মাঝে তার শিকার পাথুম নিসাঙ্কা। শ্রীলঙ্কার হয়ে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করা পাথুম ক্যাচ দেন মিড অনে মোস্তাফিজের হাতে। শেষদিকে থিকসানাকে ফিরিয়ে তুলে নেন নিজের তৃতীয় উইকেট। ১৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে মোস্তাফিজ ছিলেন আজকের সেরা বোলার। এছাড়া ইনজুরি থেকে ফেরা তাসকিন ২ ও তানজিম হাসান ১ উইকেট পেয়েছেন।

ব্যাটসম্যানরা ভালো করলে, আশানুরূপ পারফরম্যান্স করলে এই ম্যাচ থেকে বুক ভরা আত্মবিশ্বাস নিতে পারত বাংলাদেশ। পরের ম্যাচ নিউ ইয়র্কে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। সেখানে চ্যালেঞ্জটা আরো বেশি, প্রতিপক্ষও আরো শক্তিশালী।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ