
মাসুদ রানা, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের খানসামায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি এটা আর নতুন কিছু নয়। সারা দেশের ন্যায় উত্তরবঙ্গেও বহুকাল ধরেই লাফিয়ে লাফিয়ে, দফায় দফায় বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। রমজান শুরু হতে না হতেই বেড়েছে চাল, ডাল, মাছ, মাংস, তেল, তরিতরকারি, ফলমূল, চিনি, লবণ, গম, আটা, রুটিসহ ঔষদপত্র ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্যের দাম। মোটা চালের কেজি এখন ৫০ টাকা, চিকন চালের কেজি ৫৫-৬০ টাকা। বর্তমান বাজারে নিত্য পণ্যের দামের কথা যদি বলি তাহলে দেখা যাবে, সয়াবিন তেল ২০০ টাকা, মরিচ ১৬০ টাকা কেজি, ব্রয়লার মুরগি ৩২০ টাকা কেজি, দেশী মুরগী ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দেশী মুরগির ডিমের হালি ৭০ টাকা এবং প্রতি শাকসবজিতে ১০/১৫ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে, প্রান্তিক ও সীমিত আয়ের মানুষরা একটু ডাল-ভাত কিনে খাবে সে উপায়ও নেই। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে প্রান্তিক ও শ্রমজীবী মানুষজনের জীবন যাপন করতে কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ক্রয়ক্ষমতার বাইরে বাংলাদেশে কোন পণ্যের দাম একবার বেড়ে গেলে তা আর কমার নজির নেই। এমন পরিস্থিতিতে দেশের সাধারণ জনগণ প্রতিদিনের খাদ্য সামগ্রী কিনতেই প্রাণ যেন ওষ্ঠাগত। তাই সরকার সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে টিসিবির বুথ বাড়িয়েছে। উত্তরবঙ্গসহ সারা দেশে ৬ থেকে ৮ বছর আগেও টিসিবির পণ্য কিনতে ১০/১৫ জনের বেশি লোক দেখা যেতো না। আর এখন সর্বত্র টিসিবির পণ্য কিনতে শত-শত লোক দীর্ঘ লাইন ধরছে একটু সাশ্রয়ে মূল্যে পণ্য ক্রয়ের জন্য।
উপজেলার খামারপাড়ার এলাকার বাসিন্দা নাজিরউদ্দীন বলেন, এমন কিছু পরিবারের সদস্যরা টিসিবি পণ্য লাইনে দাঁড়িয়ে সংগ্রহ করে তা স্বপ্নেও ভাবেনি তাঁরাও আজ ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রতিনিয়ত মানুষগুলো নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করতে হিমশিম খাচ্ছে। হয়তো আমাদের অধিকাংশ মানুষের সামর্থ্য আছে বলে ক্রয় করতে পারছি। কিন্তু যাদের সামর্থ্য নেই। তাদের কি হবে? তাদের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? এসব বিষয়গুলো কি কখনো আমরা ভেবেছি?
খুচরা বিক্রেতা হাচানুর রহমান বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের চাহিদা প্রচুর কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের যোগান পর্যাপ্ত নয়। ফলে দেখা দিচ্ছে দ্রব্য মূল্যের দাম বৃদ্ধি। আবার কিছু কিছু আরতদার আছেন যারা পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেন। এর ফলে দ্রব্যমূল্য হঠাৎ বেড়ে যায়। বর্তমান সময়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির পিছনে এসব মজুতদার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দায়ী।
শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর যদি ৫ শতাংশ হারে মূল্যস্ফীতি হয় তাহলে অবশ্যই দ্রব্য উৎপাদনের খরচ বাড়বে ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া সমগ্র পৃথিবী জুড়ে উৎপাদিত দ্রব্য এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা অনুপাতে সমান নয়। কোথাও বেশি আবার কম। কিন্তু বেশি হওয়ায় সমাজে সম্পদের অপ্রতুলতা সৃষ্টি হয়। যার ফলে প্রতিনিয়ত জনসংখ্যার প্রয়োজন অনুযায়ী চাহিদা বাড়তে থাকলে দ্রব্যের মূল্যও বাড়তে থাকে। আমাদের দেশে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে সে হারে পণ্য উৎপাদন বাড়ছে না। এজন্য দ্রব্য মূলোর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পিছনে বাংলাদেশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরাও দায়ী। অতিরিক্ত মুনাফার আশায় অনেকেই দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দেন।
উপজেলা বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, খানসামার সাধারণ মানুষেরা একটু সুখ শান্তি নিয়ে বাঁচতে চায়। একটু স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চায়। তাদের সকল কাজে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে পেতে চায়। আর এসব কিছু বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারকে বিশেষ নজর দিতেই হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাতে সরকারকে অবশ্যই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আমদানি নির্ভর সব নিত্যপণ্যের মজুদ মনিটরিংয়ের আওতায় এনে সরকারিভাবে মজুদ বাড়াতে হবে। নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে মজুদকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেইসাথে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অসৎ ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটেরদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যেন তাদের শাস্তি দেখে বাদবাকি সবাই এমন ঘৃণ্য কাজ করতে সাহস না পায়।