শুক্রবার, ১৩ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৭শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

নির্মাণাধীন ফাজিল মাদ্রাসার ভবন নির্মাণে অনিয়ম, ছাদ বেয়ে পানি পড়ে খসে পড়েছে ড্রপওয়াল

এস আই খান:

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চরসুবুদ্ধি ফাজিল মাদ্রাসার নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের নিম্নমান ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি উপজেলার প্রাচীনতম এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণে এ অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নরসিংদী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে চরসুবুদ্ধি ফাজিল মাদ্রাসার নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান করেন দপ্তরটি। পরে ২০২১ সালে ডিসেম্বর মাসে বিএইচটি ফিরোজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয় বাস্তবায়নকারী দপ্তর। নির্মাণ কাজে প্রাক্কালিন মূল্য ধরা হয় ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কাজের মেয়াদকাল ধরা হয় ৫৪০ দিন বা ১৮ মাস।

অভিযোগের ভিত্তিতে জেলার রায়পুরা উপজেলার চরসুবুদ্ধি ফাজিল মাদ্রাসায় উপস্থিত হলে দেখা যায়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে বিশাল আয়তাকারে নির্মাণাধীন একাডেমিক ভবন দাঁড়িয়ে থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে এর নির্মাণ কাজ। প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ভবনের নির্মাণ কাজের প্রায় ৭০-৭৫ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ করেছে ঠিকাধারি প্রতিষ্ঠান। ভবন ঘুরে দেখা যায় এর চার তলার ঠিক মাঝ বরাবর ছাদ বেয়ে পানি পড়ছে। চার তলার বারান্দার চাদ থেকে নিচের দিকে নেমে আসা ড্রপ ওয়ালের একটা অংশের প্রায় তিন ফুট ওয়াল খসে পড়ে লোহার রড দেখা যাচ্ছে। যা দেখে খুব সহজে কাজের নিম্ন মানের বিষয়টি অনুমান করা যায়। এছাড়াও দেয়ালের প্লাস্টারে হাত দিলেই এর থেকে ঝরে পড়ে বালি।

এদিকে নির্মাণাধীন ভবনের ড্রপ ওয়াল খসে পড়ার ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে দুশ্চিন্তায় পড়েছে তারা। তাদের সন্তানরা এখানে পড়তে এসে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার পড়তে পারে এমন আশঙ্কায়।

এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ মাদ্রাসার পক্ষ থেকে তদারকির দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষক শওকত হোসেন বলেন, ভবন নির্মাণ কাজে ঠিকাদার নিম্ন মানের সামগ্রি ব্যবহার করেছে। কয়েক দফা আমরা ইট ফেরত পাঠিয়েছি। তাদের কাজ তদারকির জন্য আমাকে ও অফিস সহকারিকে দেওয়া হয়েছে। আমরা দুজন তাদেরকে প্রথম থেকেই বলে এসেছি যে সকালে আমাদের মধ্যে কেউ একজন উপস্থিত হবার পর সিমেন্ট বালু মিশানোর জন্য কিন্তু তারা কখনও তা করেনি। আমরা সকাল ৮টার মধ্যেই চলে আসতাম কোনদিন দেরি হলে সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ টা বাজতো। আমাদের শত নিষেধ শর্তেও তারা প্রতিদিনই আমরা আসার আগেই সিমেন্ট-বালু মিশিয়ে ফেলতো।

তিনি বলেন, গত কোরবানির ঈদের ৮/১০ দিন আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ৫ জন লোক কাজ করছিল। ভবনের কার্নিসে ফাটল দেখা দেয় এসময় আমি তাদেরকে সেটা দেখাই এবং জানতে চাই কেন এই ফাটল দেখা দিয়েছে। জবাবে তারা বলতে পারে না বলে জানায়। এখানে রড কম দেওয়া হয়েছে তাই এই ফাটল দেখা দিয়েছে বলে আমি তাদেরকে ওই জায়গা ভাঙতে বলি। অনেকটা ইচ্ছার বিরুদ্ধে সে জায়গাটা ভাঙ্গা হলে সেখানে রড কম পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, সেদিন তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওই ফাটল দেখা দেওয়া স্থানটি ভাঙ্গার কিছুক্ষণ পর তারা নিচে চলে যায়। প্রথমত ভেবেছি হয়তো নিচের অফিস কক্ষে গেছে। কিন্তু সে এর পর আর ফিরে আসেনি। বাকী চারজন আমাদের সাথে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিল। কিন্তু যে চলে গেছে সে ফিরে না আসায় তারা সন্ধ্যার পর চলে যায়। সেই আজ পর্যন্ত কাজ বন্ধ রয়েছে।

এব্যাপারে ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠার পরিচালক টিটো ফিরোজের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন “ ভাই বিকেলে আপনার সাথে বসে স্বাক্ষতে কথা বলি। স্বাক্ষাতে কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না হলে আপনি বুঝবেন না।

এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক টিটো ফিরোজ প্রতিবেদনটি বন্ধ করার জন্য নরসিংদী প্রেসক্লাবে গিয়ে হাজির হন। প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করার স্বার্থে প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষে হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সম্ভবত প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে তাকে আস্বস্ত করেন। পরে তিনি প্রতিবেদককে ফোন দিয়ে বলেন, ‘আপনার যা করার করতে পারেন।

নরসিংদী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোত্তাকিম’র সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে বুধবার (২ অক্টোবর) গেলে তাকে কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। হেড অফিসের মিটিংয়ে যোগ দিতে ঢাকা গেছেন বলে তার সহকর্মীরা জানায়। সেই সাথে তারা বলেন আগামীকাল আসলে স্যারকে পাবেন। কিন্তু বৃহস্পতিবারও (৩ অক্টোবর) কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তাকে না পেয়ে গত দুইদিন তার মোবাইলে কয়েক দফা চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *