বুধবার, ১৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিষ্ঠা, সততা ও স্বচ্ছতার সাথে কাজ করতে চাই: রামেবি ভিসি

শাহ্ সোহানুর রহমান, রাজশাহী: রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) নবনিযুক্ত ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) প্রফেসর ডা. মোহা. জাওয়াদুল হক বলেছেন, দায়িত্ব নিয়েছি একটা লক্ষ্য নিয়ে। এখন অত্যন্ত দ্রুততা, নিষ্ঠা, সততা বং স্বচ্ছতার সাথে কাজ করতে চাই।

রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় লিখিত বক্তব্যে বিস্তারিত তুলে ধরেন রামেবি ভিসি। বক্তব্যের শুরুতে তিনি সকল গণমাধ্যমকর্মীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। এরপর তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যারা জীবন দান করেছেন তাদের প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা ও সালাম জানিয়ে এ বীর শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনাসহ আহতদের দ্রুত নিরাময় কামনা করেন।

এরপর রামেবি উপাচার্য বলেন, ২০১৬ সালের ১২ মে প্রকাশিত ২০১৬ সালের ১৮ নং আইন দ্বারা রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল প্রধানত তিনটি। এক. রাজশাহী এবং এর আশপাশের প্রায় ২ কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে ১২০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করা, দুই. চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিষয়ক জনবল তৈরি ও তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ১০টি ফ্যাকাল্টি চালু করা; এবং তিন. চিকিৎসাসেবার মানকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আট বছর অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু এখনও এ তিনটি লক্ষ্য বাস্তবায়নের প্রাথমিক কাজও সম্পন্ন সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় আমার স্কন্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। আমি যেন এসব লক্ষ্য অর্জনে অত্যন্ত স্বচ্ছতা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে পারি, সেজন্য রাজশাহী অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ, বিশেষ করে আপনাদের (সাংবাদিক) পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রয়োজন।

উপাচার্য আরও বলেন, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে। প্রথমে রাজশাহী, রংপুর এবং খুলনা বিভাগ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত ছিল। ২০২১ সালে খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন খুলনা বিভাগে অবস্থিত চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথক হয়ে যায়। অবশ্য যেসব শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শুরু হয়েছিল, সেগুলো শেষ হওয়া পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই পরিচালিত হচ্ছে বা হবে। বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মেডিকেল, ডেন্টাল, নার্সিং, আইএইচটি, হামদর্দ মিলিয়ে সর্বমোট ৭৬টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। এগুলোতে বর্তমানে কেবল আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোর্স চালু রয়েছে।

মতবিনিময় সভায় বিগত সময়ে ভূমি অধিগ্রহণ এবং বাজেট ও বরাদ্দ সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেন রামেবি উপাচার্য। জনবল নিয়োগের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস ও ভবন নির্মাণ, পোস্টগ্র্যাজুয়েশন কোর্স চালু এবং গবেষণা কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্যের কথাও জানানর্ । প্রফেসর ডা. মোহা. জাওয়াদুল হক। বলেন, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আমি স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে চাই। এসব লক্ষ্য ও পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে আমি রাজশাহী অঞ্চলের সর্বস্তরের জনগণ এবং বিশেষভাবে সাংবাদিক সমাজের পরামর্শ ও সহযোগিতা কামনা করি। এক প্রশ্নের জবাবে রামেবি ভিসি বলেন, আইনগতভাবে যার যেটুকু প্রাপ্য আমি সেটাই করবো। আইনগতভাবে আগানোর জন্য স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আগাবো।

মতবিনিময়কালে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল আউয়াল বলেন, রামেবি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গত ৫ আগস্টের পূর্বপর্যন্ত আমরা এখানে দলীয় লেজুড়বৃত্তির একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখতে পেয়েছি। এটা মনে হয়েছিল আমাদের কাছে যে, এখানে একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। আমরা এ অবস্থার অবসান চাই। এ ব্যাপারে নবনিযুক্ত উপাচার্যের কার্যকর ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চান রাজশাহীর সিনিয়র এ সাংবাদিক।

জবাবে উপাচার্য বলেন, এসব নিয়ে সিন্ডিকেটে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তার আগে আমাকে সরকার, প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রণালয়- প্রত্যেকের কাছে নতুন করে সিন্ডিকেট সদস্য আহবান চাইতে হবে। এটা হলে আমি দ্রুত সিন্ডিকেট মিটিং কল করবো। সিন্ডিকেট মিটিংয়ে যে সকল বিষয় অমিমাংসিত রয়ে গেছে, যেগুলোর ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া দরকার, আমি সেগুলোর ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।

এ সময় বিএসসি-ইন-নার্সিং কোর্সের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার ব্যাপারে উপাচার্যকে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে প্রফেসর ডা. মোহা. জাওয়াদুল হক বলেন, তারা আন্দোলন করেছে। একপর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়েও তারা অবস্থান করেছে। আমি যোগদান করার পরপরই বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে আমার প্রথম এ বিষয়েই কথা হয়েছে। আমি যোগদান করার পরই তাদের সঙ্গে বসেছিলাম। বসার পর তাদের সঙ্গে আধাঘণ্টা আলোচনা করেছি। আলোচনার পর তারা আশ্বস্ত হয়ে ফিরে গেছে।

রামেবি উপাচার্য বলেন, ৫টা সাবজেক্টে গ্যাপ না দিয়ে, প্রতিদিন পরীক্ষা নিয়েও আমরা ১লা অক্টোবর শেষ করতে পারছি না। আমি কাউন্সিলের সঙ্গে কথা বলিয়েছি। কাউন্সিলের সঙ্গে কথা বলে তারা আশ্বস্ত করেছে যে, তাদের (নার্সিং শিক্ষার্থী) রেজিস্ট্রেশন পরীক্ষাটা ২ সপ্তাহ পেছানোর কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু একটা মাস চেঞ্জ করা অসুবিধা। মার্চে তাদের পরীক্ষাটা হয়, এটা প্রথমদিকে না নিয়ে ১০ বা ১৫দিন বা ২০ দিন পিছিয়ে নিলাম, এটা সম্ভব। তাতে আমি আশা করছি, তাদের অসুবিধা হবে না।

মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন রামেবির রেজিস্ট্রার প্রফেসর ডা. আব্দুস সালাম। এ সময় রামেবির পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুম মুনির, পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) ডা. জাকির হোসেন খোন্দকারসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং রাজশাহীতে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, বিএসসি নার্সিং শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনের মুখে গত ৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. মোহা. জাওয়াদুল হককে রামেবির উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়। রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের চিকিৎসা শিক্ষা-১ শাখা থেকে উপসচিব মোহাম্মদ কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে শূন্য পদে চার বছরের জন্য তাকে এ নিয়োগ দেয়া হয়। পরদিন ১০ সেপ্টেম্বর দুপুরে রামেবি উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন তিনি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ